Press "Enter" to skip to content

শিবলিঙ্গের আসল অর্থ কী? সংস্কৃতে শিব অর্থাৎ পরমেশ্বর। লিঙ্গ অর্থাৎ চিহ্ন। শিবলিঙ্গ হলো পরমেশ্বর শিবের নির্গুণ ব্রহ্ম সত্বার একটি প্রতীক চিহ্ন……..।

Spread the love

উত্তর ভারতের সর্ববৃহৎ শিবলিঙ্গ।

মধুমিতা শাস্ত্রী : ১০ মার্চ, ২০২১। শিবরাত্রি হলো হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব শিবের মহারাত্রি। অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য এই ব্রত পালিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।

শিবলিঙ্গের আসল অর্থ কী? আর কেনই বা মূর্তির থেকে শিবলিঙ্গে বেশি পূজিত হন মহাদেব?

হৃষিকেশ এ সবচেয়ে বড় শিব মন্দির।

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক শিবলিঙ্গ শব্দের অর্থ কী? সংস্কৃতে শিব অর্থাৎ পরমেশ্বর। লিঙ্গ অর্থাৎ চিহ্ন। শিবলিঙ্গ হলো পরমেশ্বর শিবের নির্গুণ ব্রহ্ম সত্বার একটি প্রতীক চিহ্ন। ধ্যানরত ভগবান শিবকে এই প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়।

প্রচলিত ভুল ধারণা বসত অথবা অজ্ঞতার কারণে এবং বাংলা ব্যাকরণের কথা মাথায় রেখে আমরা লিঙ্গ বলতে পুরুষ এবং স্ত্রীর জনন তন্ত্র ধারণা করে থাকি। এটা বিকৃত ও কুরুচিকর। শিবলিঙ্গের অর্থ শিবের মাথা। সবাই নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন শিবলিঙ্গে তিনটি সাদা দাগ থাকে যা ভগবান শিবের কপালে থাকে। এই দাগগুলিকে ত্রিপুন্ড্র বলা হয়। শিবলিঙ্গ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। সবার উপরের অংশকে বলা হয় শিবপিঠ। মাঝের অংশকে বলা হয় বিষ্ণুপিঠ আর সবার নিচের অংশকে বলা হয় ব্রহ্মপিঠ। সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ী শিবলিঙ্গ শিবের আদি ও অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক। এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের রূপ বিশেষ।

হিন্দু ধর্মের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ হলো ঋগ্বেদ। ঋগ্বেদে রুদ্র নামে এক দেবতার উল্লেখ আছে। রুদ্র নামটি আজও শিবের অপর নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সারা বছর জুড়ে মোট বারোটি শিবরাত্রির তিথি থাকলেও ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্থ তিথিটিকে শ্রেষ্ঠ শিবচতুর্দশী তিথি বলা হয় । ভারতের বিভিন্ন স্থানে এমনকি ভারতের বাইরেও মূর্তি পূজার থেকে শিবলিঙ্গে পূজা বেশি জনপ্রিয়। সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ী শিবলিঙ্গ শিবের আদি ও অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক। এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের রূপ বিশেষ। শিবরাত্রি হলো শিবের রাত্রি। কথিত আছে এই দিন মহাদেব ও দেবী পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল তাই ভগবান শিবের কাছে এই রাত্রিটি অত্যন্ত প্রিয় ছিল। এই শিবরাত্রিতেই ভগবান শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের মহা তান্ডব নৃত্য করেছিলেন। এই শিবরাত্রিতেই ভগবান শিব তার প্রতীক লিঙ্গরূপে প্রথম প্রকাশিত হয়ে জীবের পাপ নাশ এবং মুক্তির পথ দেখিয়ে ছিলেন।

শিবচতুর্দশী ব্রত পালনের কারণঃ-

বলা হয় এই ব্রত পালন করলে নারীর সব কামনা পূর্ণ হয়। পতি কামনা, পুত্র কামনা, বৈধব্য খন্ডন, পাপ খন্ডন প্রভৃতি। তাই মহিলাদের বিশেষ করে কুমারী মেয়েদের এই ব্রত পালন করতে বেশি দেখা যায়। যদিও নারী-পুরুষ নির্বশেষে প্রত্যেকে এই ব্রত পালন করে থাকেন।

শিবের ব্রতকথা অনুসারে প্রাচীনকালে কাশীধামে এক ভয়ঙ্কর ব্যাধ বাস করতো। সে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়ে প্রচুর জীবহত্যা করতো। একদিন শিকারে বেড়িয়ে দেরি হয়ে যাওয়ার ফলে জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেছিল। হিংস্র জন্তুদের থেকে বাঁচতে একটি গাছের উপর আশ্রয় নেয়। সেদিন ছিল শিবচতুর্দশীর তিথি। ব্যাধ যে গাছের ডালে আশ্রয় নিয়েছিল সেটা ছিল বেলগাছ। আর নিচে ছিল শিবলিঙ্গ। ব্যাধের শরীরের ঝাঁকুনিতে কিছু বেলপাতা খসে পড়ল ওই শিবলিঙ্গে। সকাল হলে সূর্যের আলোয় বাড়ি ফিরে গেলো। মধ্যাহ্ন ভোজনের সময় অতিথি এসে পড়ায় ব্যাধ নিজের খাবার অতিথিকে দিয়ে দেয় ফলে তার নিজের অজান্তেই শিবচতুর্দশীর ব্রত পালন হয়ে যায়। আর তার কৃত সমস্ত পাপের খন্ডন হয় এবং সে পূণ্য অর্জন করে শিবলোকে স্থান পায়।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *