Press "Enter" to skip to content

শান্তিময় শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন মাত্র ছয় মাস বয়সে। শান্তিময় থেকে শান্তিদেব— স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই এই নাম বদলে দিয়েছিলেন….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ শা ন্তি দে ব ঘো ষ

বাবলু ভট্টাচার্য : বিশিষ্ট পল্লী সংগঠক, নিবেদিতপ্রাণ আশ্রমকর্মী ও শ্রীনিকেতনের অন্যতম রূপকার রবীন্দ্র-সহযোগী কালীমোহন ঘোষের হাত ধরে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ‘শান্তিময়’ শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন মাত্র ছয় মাস বয়সে। শান্তিময় থেকে শান্তিদেব— স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই এই নাম বদলে দিয়েছিলেন।

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্র শিক্ষাদর্শের মূর্তপ্রকাশ যাঁদের মধ্যে ঘটেছে, নিঃসন্দেহে শান্তিদেব তাঁদের অন্যতম। তাঁর জীবন সাধনায় ও আচার-ব্যবহারে এই সর্বতোমুখিনতার প্রকাশ বরাবরই বিদ্যমান ছিল।

শান্তিদেব আমৃত্যু নিজেকে নিবিষ্ট রেখেছিলেন রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চায়, সাধনায় প্রচার ও প্রসারে। গানই ছিল তাঁর প্রাণ। এবং সেই গান রবীন্দ্রনাথেরই। তিনি জগৎ জীবনের পূর্ণতার সন্ধান লাভ করেছিলেন রবীন্দ্রগানের মধ্য দিয়েই। রবীন্দ্র সঙ্গীত হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে— ‘প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি’।

বাংলাদেশের চাঁদপুরের পিতৃভূমি থেকে বাবা-মা’র সঙ্গে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন একেবারে শৈশবেই। তাঁর বাবা কালীমোহন এবং মা মনোরমা ঘোষ ছিলেন যথার্থ অর্থে আশ্রম-জননী।

আশ্রম বিদ্যালয়ে শুরু হলো শান্তিদেবের পঠন-পাঠন। বিদ্যালয় জীবনের লেখাপড়ায় তাঁর উৎসাহ ছিল না বিশেষ। সঙ্গীতই তাঁকে আকর্ষণ করেছিল প্রথম থেকেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের কাছে গান শেখাতো পরম সৌভাগ্যের বিষয়। তিনি ছিলেন কবির শেষ সাক্ষাৎ শিষ্য। শান্তিদেব তাঁর জীবনের সূচনা থেকে জীবনাবসানের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথকে ‘জীবনের ধ্রুবতারা’ হিসেবেই দেখেছেন।

বুদ্ধিমন্ত্র সিংহের কাছে তিনি প্রথম মণিপুরী নাচ শিখেছিলেন শিখেছিলেন। তিনি খুবই দক্ষ ছিলেন বাউল নৃত্যে। বলতে গেলে, এই সময় থেকেই লোকনৃত্যের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উ‍‌ঠেছিল।

রবীন্দ্রনাথ তাঁকে নৃত্যকলা শিক্ষার জন্য নানা জায়গায় পাঠিয়েছিলেন। তিনি জাভা, বালি, ব্রহ্মদেশ, কেরালা, তামিলনাডু, মণিপুর ও সিংহল গিয়েছিলেন। কোচিনে কথাকলি নৃত্যের সঙ্গে সেখানকার কয়েক প্রকার লোক- নৃত্যের চর্চাও করেছিলেন। এইসব শিক্ষালাভের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কখনোই শান্তিদেবকে একজন পেশাদার নৃত্যশিল্পী করতে চাননি। তাঁর নাচ বা গান শিখবার নেপথ্যের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, সঙ্গীত ভবনের প্রাতিষ্ঠানিক কাজকে সার্থকভাবে রূপ দেওয়া।

রবীন্দ্রনাথের গানের পর শান্তিদেবের দ্বিতীয় বড় আকর্ষণ ছিল রবীন্দ্র নাটক অভিনয়ে। গায়ক, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা, সুলেখক এবং প্রাবন্ধিক ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন যন্ত্রশিল্পী। শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেমন তিনি গান পরিবেশন করেছেন, আবার তিনি বেশ দক্ষতার সঙ্গে সবার গানের সময় এস্রাজ বাজাতেন।

শান্তিদেব ঘোষ রথীন্দ্র পুরস্কার, রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য, আনন্দ পুরস্কার, রাশিয়ার বিশেষ পদক। সঙ্গীত নাটক আকাদেমির ফেলো। ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ ও বিশ্বভারতী দেশিকোত্তম উপাধি দেন। রবীন্দ্র ভারতী ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি-লিট দেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাম্রফলক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে— রবীন্দ্র সঙ্গীত, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিক ভারতীয় নৃত্য, জাভা ও বালির নৃত্যগীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত বিচিত্রা, জীবনের ধ্রুবতারা, Music and Dance in Rabindranath’s Education Philosophy প্রভৃতি। দেশ ও বিদেশের নানান পত্র-পত্রিকায় এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রে একশোর বেশি প্রবন্ধ লিখেছেন।

শান্তিদেব ঘোষ ১৯১০ সালের আজকের দিনে (৭ মে) বাংলাদেশের চাঁদপুরের বাজাপ্তী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from CultureMore posts in Culture »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.