জন্মদিনে স্মরণঃ প ল্লী ক বি জ সী ম উ দ্দী ন
“তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে
আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায়
উদাসী বনের বায়…”
বাবলু ভট্টাচার্য : লোকসাহিত্যের আজীবন প্রবক্তা, মাটি ও মানুষের কবি পল্লী কবি জসীমউদ্দীন।
যার লেখায় আবহমান বাংলার রূপ, কাদা মাটির গন্ধ, কৃষকের হাসি ফোটা মুখচ্ছবি, গাঁয়ের সহজ সরল চাষীদের কথা, রাখাল বালকের কথা, নববধূর কলসীতে জল ভরানোর কথা, ফসল ঘেরা সবুজ মাঠ এবং প্রেমিকের ছন্দচিত্র আমাদের চেতনায় ফুটে ওঠে তিনি আমাদের প্রাণের মানুষ প্রিয় পল্লীকবি জসীমউদ্দীন।
পুরো নাম জসীমউদ্দীন মোল্লা। ফরিদপুর জেলার গোবিন্দপুর গ্রাম ছিল তাদের আদি বাড়ি। বাবা আনসার উদ্দীন ছিলেন ফরিদপুর হিতৈষী এমই স্কুলের শিক্ষক। এবং মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট।
জসিমউদ্দীন ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ১৯২১ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাস করেন ১৯২৯ সালে। তারপর তিনি চলে যান কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমএ পাস করেন ১৯৩৩ সালে।
জসীমউদ্দীনের কবি প্রতিভা বিকশিত হয় শৈশবেই। কবিতা লেখার প্রতি তার প্রবল ঝোঁক থেকে ইচ্ছে হয় বড় কবি হওয়ার। কবি জসীমউদ্দীন কবির খ্যাতির শীর্ষে ওঠেন যখন তিনি কলেজে পড়ার সময় ‘কবর’ কবিতাটি লেখেন। তিনি যখন বিএ ক্লাসের ছাত্র তখনই কবিতাটি প্রবেশিকা পরীক্ষার্থীদের পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়।
১৯২৭ সালে তার দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলে তার কবি খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কবি তার এই বই দুটি উপহার দিলে তিনি বই দুটির প্রশংসা করে একটি আলোচনাও লিখেছিলেন।
কবি জসীমউদ্দীন ছোটদের ভালোবাসতেন। তাই তো তিনি শিশুদের জন্য লিখেছিলেন ‘হাসু’, ‘এক পয়সার বাঁশী’, ‘বাঙালির হাসির গল্প’, ‘ডালিম কুমার’, ‘আসমানীর কবি ভাই’, ‘হলুদ পরীর দেশে’ প্রভৃতি গ্রন্থ।
তার অন্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘ধানক্ষেত’, ‘মাটির কান্না’, ‘হলুদ বরণী রূপবতী’, ‘জলের লেখন’, ‘পদ্মা নদীর দেশে’ প্রভৃতি। কাহিনী কাব্যের মধ্যে- ‘সুজন বাদিয়ার ঘাট’, ‘নকশী কাঁথার মাঠ’, ‘সকিনা’ প্রভৃতি।
তার অন্যতম জনপ্রিয় লোকনাট্য গ্রন্থ- ‘মধুমালা’, ‘বেদের মেয়ে’, ‘পদ্মার পার’, ‘পল্লীবধূ’, ‘গ্রামের মায়া’, ‘গাঙের পার’, ‘ওগো পুষ্প রেণু’ প্রভৃতি।
তার স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম- ‘ঠাকুর বাড়ীর আঙিনায়’, ‘স্মৃতিপট’, ‘যে দেশে মানুষ বড়’ ইত্যাদি। ভ্রমণ কাহিনির মধ্যে ‘মুসাফির’, ‘জার্মানির শহরে ও বন্দরে’ প্রভৃতি। ‘বোবা কাহিনী’ তার একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। এছাড়াও আছে জারিসারি ও মুর্শিদী গানের সংগ্রহ ও সম্পাদনা।
১৯৩৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করার পর তিনি চাকরি জীবন শুরু করেন। জসীমউদ্দীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে ‘রামতনু লাহিড়ী’ গবেষণা সহকারী নিযুক্ত হন। ১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। অধ্যাপনা ছেড়ে ১৯৪৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগে চাকরি গ্রহণ করে ১৯৬১ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য জীবনে অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ‘ডিলিট’ উপাধি দেয় ১৯৬৮ সালে। বাংলা একাডেমি তাকে ১৯৭৬ সালে ‘একুশে পদক’ প্রদান করে। ১৯৬৯ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করে।
১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ পল্লীকবি মৃত্যুবরণ করেন।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ১৯০৩ সালের আজকের দিনে (১ জানুয়ারি) ফরিদপুরের তাম্বুলখানায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment