Press "Enter" to skip to content

লিও টলস্টয় সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন সময়েই লিখে শেষ করলেন আত্মজীবনী মূলক উপন্যাসের প্রথম পর্ব ‘শৈশব’…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ লি ও ট ল স্ট য়

“প্রত্যেকেই পৃথিবীকে বদলে ফেলার চিন্তা করে, কিন্তু কেউ নিজেকে পরিবর্তনের কথা ভাবে না।”

[ লিও টলস্টয় ]

পুরো নাম লিও নিকলায়েভিচ টলস্টয়। যাকে রুশ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক, এমনকি বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তাবৎ দুনিয়ার সাহিত্যপ্রেমী মানুষের কাছে তিনি এক অবিস্মরণীয় নাম।

জন্মের দু’বছর পরেই টলস্টয়ের মা মারা যান। তাঁকে এক আত্মীয়ার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেই আত্মীয়া থাকতেন কাজানে। এখানে এসে তিনি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার সুযোগ পান। বিশেষ করে দার্শনিক রুশোর লেখা বইগুলো তাঁকে ভীষণ রকমের আকৃষ্ট করেছিল।

বয়স ১৮ হওয়ার পর নিজের পৈতৃক সম্পত্তির অংশ হিসেবে জন্মস্থান ইয়াসনা পলিয়ানার বিশাল জমিদারি এবং প্রায় ৩৫০ জন ভূমিদাসের মালিকানা পেলেন টলস্টয়। কিন্তু ক্রমশ উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা তাকে অসুস্থ করে ফেললো। ভর্তি হলেন হাসপাতালে। হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে তার হাতে আসে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের জীবনী, জানতে পারলেন বেঞ্জামিন দিনশেষে তার দোষগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। ভাবলেন নিজেও এই অভ্যাস গড়ে তুলবেন।

পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়বার সময় একদিন পত্রিকা পড়তে গিয়ে চোখে পড়ে চার্লস ডিকেন্সের ক্লাসিক ‘ডেভিড কপারফিল্ড’। টলস্টয়ের মনে হলো, এই রকম একটা উপন্যাস তো তিনিও লিখতে পারেন। জীবনকে যতখানি কাছ থেকে দেখেছেন তা নিয়ে তো লেখাই যায়। উপন্যাস লিখবেন বলে মনস্থির করলেও এরই মধ্যে বড় ভাই তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন সেনাবাহিনীতে।

সেনবাহিনীতে যোগ দেয়ার সুবাদে চলে গেলেন ককেশাস। ককেশাসে অবস্থানরত সেনাবাহিনী স্থানীয় উপজাতিদের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দায়িত্বরত ছিল। ককেশাসের সেই অভিজ্ঞতা থেকেই পরে লিখেছিলেন গল্প ‘ককেশাসের বন্দী’।

সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন সময়েই লিখে শেষ করলেন আত্মজীবনী মূলক উপন্যাসের প্রথম পর্ব ‘শৈশব’। স্থানীয় এক পত্রিকায় ১৮৫২ সালে লেখাটি ছাপা হয়। পত্রিকার সম্পাদক আরেক বিখ্যাত রাশিয়ান কবি নিকোলাই নেক্রাসভ বেশ প্রশংসা করলেন লেখাটির। উৎসাহিত হয়ে উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব ‘বাল্যকাল’ ১৮৫৪ সালের মধ্যে লিখে ফেললেন।

লেখায় মনোনিবেশ করতে না করতেই ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হল। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা টলস্টয়কে এতটাই আহত করেছিল যে তিনি যুদ্ধ শেষে সৈনিক পদ থেকে ইস্তফা দেন।

পুনরায় নিজে জমিদারিতে ফিরে এসে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসের শেষ অংশ ‘যৌবন’ লেখা শুরু করলেন (সেটা শেষ হতে সময় লেগেছিলো ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত)। কিছুদিন পর বেরিয়ে পড়লেন দেশ ভ্রমণে। প্যারিসে দেখা হলো আরেক বিখ্যাত রাশিয়ান লেখক ইভান তুর্গেনেভ-এর সাথে। তুর্গেনেভ বয়সে টলস্টয়ের চেয়ে বছর দশেকের বড় ছিলেন। তুর্গেনেভ টলস্টয়ের লেখার গুণগ্রাহী হলেও টলস্টয়ের আচার-আচরণ ও চলাফেরায় সন্তুষ্ট ছিলেন না।

এর কিছুদিন পর টলস্টয় পাড়ি জমালেন জেনেভায়। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাঁকে দারুণভাবে মুগ্ধ করেছিলো। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘কসাক’লেখার কাজ শুরু করেছিলেন এখানেই। কিছুদিন পর ফিরে এলেন মস্কোতে। ‘কসাক’ প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ সালে। ‘কসাক’ই প্রথম তাঁকে রাশিয়ার জনপ্রিয় লেখকদের একজন করে দেয়।

পাঠকদের এই অভাবিত সাড়ায় অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা শুরু করলেন তাঁর কালজয়ী উপন্যাস ‘ওয়ার এন্ড পিস’। ‘ওয়ার এন্ড পিস’ রচনায় তাঁর সময় লেগেছিলো দীর্ঘ পাঁচ বছর।

এই উপন্যাসকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম বিবেচনা করা হয়। উপন্যাসের মূল পটভূমি ছিল নেপোলিয়ন বোনাপার্টের রাশিয়া আক্রমণের প্রভাব সহ ১৮০৫-১৩ সালের মধ্যকার সময়ে তৎকালীন রাশিয়ার সমাজব্যবস্থা। এই উপন্যাসে টলস্টয় রাশিয়ার জার থেকে শুরু করে সৈনিক, গৃহবধু, সাধারণ কৃষক সবার চরিত্র তুলে এনেছেন।

সে সময় রাশিয়ার সামারা এলাকায় দুর্ভিক্ষ চলছিল। টলস্টয় ঝাঁপিয়ে পড়লেন সেখানকার মানুষের সেবায়। এ সময়ই একদিন জানতে পারলেন একটি মেয়ে রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনাকে উপজীব্য করেই লিখলেন তাঁর আরেক সেরা উপন্যাস ‘আনা কারেনিনা’।

‘আনা কারেনিনা’কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রোমান্টিক উপন্যাসগুলোর একটি বলে মনে করা হয়। এই উপন্যাসে টলস্টয় ফুটিয়ে তুলেছিলেন প্রেমের এক ধ্বংসাত্মক দিক। এর মাধ্যমে টলস্টয় দেখাতে চেয়েছেন, মানুষের বিবেকই সবচেয়ে বড় বিচারক, পরিবেশ নয়। ১৮৭৭ সালে ‘আনা কারেনিনা’ প্রকাশিত হওয়ার পর টলস্টয় খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান।

কিন্তু বিশাল সময় পার করে এসে টলস্টয় নিজের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন অনুভব করেন। ততদিনে যশ, খ্যাতি আর অর্থ-সম্পদের মোহ তাঁর চলে গিয়েছে। অনেকটা সাধু সন্নাসীদের মতো শান্ত, চুপচাপ আর অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। এই সময়েই তাঁর বেশিরভাগ ছোটগল্পগুলো লেখা হয়েছিলো।

নিজের মধ্যে পরিবর্তন আসার পর টলস্টয় ভাবলেন, সমস্ত অর্থ-সম্পদ দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেবেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালেন স্ত্রী। স্ত্রীর সাথে তাঁর সম্পর্ক ক্রমশই খারাপ হচ্ছিল। এ পর্যায়ে টলস্টয় তাঁর সমস্ত সম্পদ স্ত্রীর নামে উইল করে দিয়ে গ্রামে ফিরে যান। আমিষ, ধূমপান ছেড়ে দিয়ে সন্যাসীদের মতোই জীবনযাপন শুরু করলেন। এই সময়টায় তিনি সাহিত্য থেকে অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছিলেন।

তাঁর লেখা নাটকগুলোর মাঝে ‘দ্য পাওয়ার অব ডার্কনেস’ অন্যতম। এই নাটক পড়ে জর্জ বার্নার্ড শ বলেছিলেন, “এক বুড়ো সেপাই আমাকে যতখানি মুগ্ধ করেছে, দুনিয়ার সমস্ত নাট্যসাহিত্যও আমাকে এতখানি মুগ্ধ করেনি।”

এছাড়াও জীবনের শেষ দিকে এসে লেখেন ‘হাজি মুরাদ’। এ ছাড়াও টলস্টয়ের লেখা ‘রেজারেকশন’, ‘দ্য ডেথ অব ইভান ইলিচ’, ‘অ্যা কনফেশন’ সাহিত্যকর্মগুলো নিঃসন্দেহে বিশ্বসাহিত্যে বিশাল স্থান দখল করে আছে।

লিও টলস্টয় ১৮২৮ সালের আজকের দিনে (৯ সেপ্টেম্বর ) রাশিয়ার তুলা প্রদেশের ইয়াস্নায়া পলিয়ানা নামের অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *