মোল্লা জসিমউদ্দিন : ২০ এপ্রিল, ২০২১। মারণ ভাইরাস করোনা আবহে সবকিছুই একপ্রকার থমকে। তবে থমকে নেই বিচারপ্রক্রিয়া।সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের সুবিচার দিতে বরাবরই আন্তরিক বিচারপতিরা।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের অনলাইন সিস্টেমে ক্রমাগত বিভ্রাট দেখে ক্ষুব্ধ বিচারপতি।

তিনি সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার দিতে পারছেন না, এই অনুতাপে গত সপ্তাহে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসের মাধ্যমে মামলার ভার্চুয়াল শুনানিতে অনলাইন সিস্টেমের সাথে যুক্তদের তীব্র ভৎসনা করলেন।সেইসাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। এমনিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুন্যপদ সংখ্যা অর্ধেকের বেশি।যেখানে বিচারপতি থাকার কথা ৭২ জন।সেখানে বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রয়েছেন ৩১ জন।এঁদের মধ্যে ২৯ জন স্থায়ী বিচারপতি এবং ২ জন অতিরিক্ত বিচারপতি রয়েছেন। অর্থাৎ ৪১ জন বিচারপতি নেই কলকাতা হাইকোর্টে।বর্তমান ৩১ জন বিচারপতির মধ্যে ডিভিশন বেঞ্চ এবং সিঙ্গেল বেঞ্চ ধরে সর্বমোট ২৩ টি এজলাসে চলে মামলার যাবতীয় শুনানি পর্ব।গত দেড় বছর মারণ ভাইরাস করোনার বাড়বাড়ন্ত রুখতে ভার্চুয়াল শুনানির আয়োজন করে দেশের সমস্ত উচ্চআদালত । ২০২০ সালের মে মাস থেকে চলছে এই ভার্চুয়াল শুনানি।প্রতিদিন গড়ে অনলাইনে ‘মাইক্রোসফট টিম’ আপসে আইনজীবীরা ২০০০ এর মতো মামলা দাখিল করে থাকেন।সেই তুলনায় কলকাতা হাইকোর্টের ২৩ টি এজলাসে মাত্র ৩০০ টি মামলার শুনানি হয়।অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৫০০ এর বেশি মামলা জমতে থাকে হাইকোর্টের দরবারে। একাধারে প্রয়োজনীয় বিচারপতি না থাকা এবার সেই সাথে ভার্চুয়াল শুনানির সময়সীমা কমে যাওয়াতে এই মামলার পাহাড় ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ভার্চুয়াল শুনানির প্রথম পর্বে সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর ১ টা ১৫ মিনিট এবং বেলা ২ টো থেকে বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত দিনে সর্বমোট ৫ ঘন্টা ১৫ মিনিট চলতো।সেইজায়গায় বর্তমানে সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা এবং দুপুর ২ টো থেকে বিকেল ৩ টে পর্যন্ত সর্বমোট ৩ ঘন্টা ভার্চুয়াল শুনানি চলছে।যা আগেকার সময়সীমা থেকে ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট কম।সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান -“প্রয়োজনীয় বিচারপতি নেই, ভার্চুয়াল শুনানির সময়সীমাও কমে অর্ধেক। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে অনলাইন সিস্টেমে লিংক বিভ্রাটে থমকে যাচ্ছে ভার্চুয়াল শুনানিপর্ব”।নেটের স্পীড অধিকাংশ সময় ঠিকঠাক সার্ভিস দেয়না বলে অভিযোগ আইনজীবীদের বড় অংশের।সবথেকে বড় সমস্যা লিংক বিভ্রাট।যার ফলে ভার্চুয়াল শুনানিতে আইনজীবীতা কি বলছেন? তা অনেকসময় বোধগম্য হচ্ছেনা বিচারপতিদের। যার ফলে থমকে যাচ্ছে পুরো বিচারপ্রক্রিয়া।আর এই সব দেখেই ক্ষুব্ধ হলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। গত সপ্তাহে তিনি অনলাইন সিস্টেমে লিংক বিভ্রাটের জন্য সাধারণ মানুষদের বিচার দিতে পারছেন না। এই অনুতাপে ক্ষুব্ধ হয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসের মাধ্যমে সেন্ট্রাল প্রজেক্ট কো অডিনেটার কে লিংক বিভ্রাটের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের নজরে এনেছেন এই বিষয়টি।
Be First to Comment