Press "Enter" to skip to content

রাস্তায় দেখেই পরিচালক সত্যজিৎ রায় তপেন কে দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন, “আরে, তোকে গরুখোঁজা খুঁজছি। কাল আমার বাড়িতে আয়…….।”

Spread the love

স্মরণ : তপেন চট্টোপাধ্যায়

“তৃতীয় সুর ষষ্ঠ সুর…
গুপী চলে বহু দূর… বহু দূর”..

সত্যি সত্যিই ‘গুপী’ অর্থাৎ অভিনেতা তপেন চট্টোপাধ্যায় আমাদের ছেড়ে চিরকালের মতো অনেক দূরে চলে গেছেন। তবে সত্যজিৎ রায়ের অমর চলচ্চিত্র ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’ প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে তিনি আমাদের হৃদয়ে সদা বিরাজমান।

একটি মাত্র চরিত্র রূপায়িত করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে পড়ার সৌভাগ্য খুব কম অভিনেতারই হয়ে থাকে। তপেন চট্টোপাধ্যায় সেই বিরল অভিনেতাদেরই একজন। সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিতে ‘গুপী’ চরিত্রটি সম্ভবত তপেনবাবুকে অমর করে রাখবে। প্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তপেন চ্যাটার্জীকেই ‘গুপী’ চরিত্রে নির্বাচিত করেছিলেন সত্যজিৎ রায়।

‘গুপী’ ও ‘বাঘা’ দুটিই দারুণ জনপ্রিয় চরিত্র হওয়া সত্ত্বেও ‘গুপী’-র জনপ্রিয়তা কিঞ্চিত বেশি। তার একটা কারণ ‘গুপী’-র মুখে অনুপ ঘোষালের গাওয়া গানগুলি। ‘বাঘা’-র ঢোলবাদন বোধহয় পাল্লায় একটু হাল্কাই হয়ে গেছিল। এমনকী চরিত্রটির তুমুল জনপ্রিয়তা তপেনবাবুর পিতৃদত্ত নামটিকেও প্রায় ভুলিয়ে ছেড়েছিল।

তপেন চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, কালীঘাটের মাইশোর রোডের বাড়িতে। নলিনীরঞ্জন ও শোভনাদেবীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তপেন ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন।

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক তপেন চট্টোপাধ্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা রাজেন্দ্র বিদ্যাভবনে। ছোট থেকেই অভিনয়ের দিকে ঝোঁক ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তপেন প্রথম মঞ্চে পা দিলেন, নাটকের নাম ‘অচলায়তন’। ছোট্ট চরিত্র হলেও দর্শকের মনে দাগ কেটে গিয়েছিল তাঁর অভিনয়।

সত্যজিতের সান্নিধ্যে তপেনের দুই কাকা কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও চঞ্চল চট্টোপাধ্যায়। চঞ্চলবাবুর পুরনো বন্ধু ছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেই সুবাদে তাঁদের বাড়িতে আসতেন সত্যজিৎ রায়। বাড়ির কাছেই থাকতেন কবি বিষ্ণু দে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্র, রথীন্দ্রনাথ মৈত্র, সমর সেনরা আসতেন এবং আড্ডা বসাতেন তপেনদের বাড়িতে। এঁরা কাকার বন্ধু ছিলেন বলে সবাই তপেনেরও ‘কাকা’।

বেকার তপেনকে তখন সুভাষকাকা এক দিন নিয়ে গিয়েছেন ‘সন্দেশ’ পত্রিকার অফিসে। ‘মানিককাকা’র কাছে নিয়ে গিয়ে সুভাষবাবু বলেছিলেন, “চঞ্চলের ভাইপোকে নিয়ে এলাম।” সত্যজিতের ঝটিতি জবাব: “কোনটা? যেটা দুরন্ত ছিল, না শান্তটা?” সুভাষবাবুর উত্তর: “দুরন্তটা।”

কাজ করলেন কিছু দিন ‘সন্দেশ’-এ। কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় দৈনিক আজকাল এ কাজ করেছেন।  সেই দুরন্ত ছেলেকেই এক দিন লাইটহাউস সিনেমার সামনে পাকড়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তপেন তখন এক ইংরেজি সংবাদপত্রের অফিসে কাজ করেন। রাস্তায় দেখেই পরিচালক চেঁচিয়ে উঠলেন, “আরে, তোকে গরুখোঁজা খুঁজছি। কাল আমার বাড়িতে আয়।”

মাথায় তখন সত্যজিতের নতুন ছবির ‘প্ল্যান’। সব চরিত্র ঠিকঠাক মিলে গিয়েছে মনের মতো। শুধু আটকে গিয়েছে ‘গুপী’তে এসে। অথচ মুখ্যভূমিকার চরিত্রাভিনেতা ঠিক না করে কাজেও নেমে পড়া যাচ্ছে না! ‘খেরোর খাতায়’ চরিত্র আঁকার পর কেমন যেন মিলে গেল তপেনের সঙ্গে! কাজেই বিশফ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে ডাক পড়ল তপেনের।

তপেন চট্টোপাধ্যায় ২০১০ সালের আজকের দিনে (২৪ মে) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.