শু ভ জ ন্ম দি ন অ ম র্ত্য সে ন
বাবলু ভট্টাচার্য : বাবা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্ধ ভক্ত। সেই টানে ঢাকার মানিকগঞ্জ থেকে শান্তিনিকেতনে ছুটে গেলেন ‘নটীর পূজা’ নাটক দেখতে। নাটকের অভিনেত্রী অমিতা সেনকে দেখে মন ছুঁয়ে গেল তার। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব করে বসলেন। অমিতাও জজসাহেব পাত্র পেয়ে খুশিতে রাজি হয়ে গেলেন।
১৯৩৩ সালে। বছর ঘুরতেই ফুটফুটে পুত্র সন্তান হল শান্তিনিকেতনের গুরুপল্লীর মাটির ঘরে। রবীন্দ্রনাথ শিশুটিকে দেখে আহ্লাদিত হয়ে নাম রাখলেন “অমর্ত্য”।
মানে? মৃত্যুঞ্জয়!
রবীন্দ্রনাথের আশীষ মিথ্যে হতে পারে? সেদিনের শিশুটিই হয়ে উঠলেন বিশ্ববন্দিত অমর্ত্য সেন।
ডাকনাম “বাবলু”। ছোট থেকেই অসম্ভব মেধাবী। জীবনে কখনো প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়েননি।
ম্যাজিকের প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। একবার গোপনে পি সি সরকারকে চিঠি লিখলেন। জাদুসম্রাট জবাবও দিলেন। এরপর থেকে নিয়মিতই চলত পত্রালাপ।
জাদুকর একবার বিশ্বভারতীতে এলেন ম্যাজিক দেখাতে। স্টেজে উঠেই ‘অমর্ত্য’ নাম ধরে ডাক দিলেন। সবাইতো অবাক! বিশ্বখ্যাত জাদুকর তাঁকে চিনলেন কি করে! উপস্থিত জনতা বিস্ময়ে দেখলেন, মঞ্চে দুই অসম বয়সী জড়িয়ে ধরে আদর করছে।
যাবার আগে শিখিয়ে গেলেন জাদু। সে কি আনন্দ! সেও রুমালটা, গ্লাসটা ভ্যানিস করে কাছের লোকের কাছে হাততালি কুড়াত তারপর থেকে।
সবার হাসি মুখের ছবি দেখতেই কি ভালবাসত? তাই কি শান্তিনিকেতনের আশেপাশে সাঁওতাল গ্রামের অভুক্ত মানুষগুলোর জন্য মন অস্থির হয়ে পড়ত তাঁর? তাই কি প্রতি সপ্তাহে চাল বয়ে দিয়ে আসত নিজে গিয়ে?
ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগেছে। তিনি তখন পৈতৃক বাড়িতে। মানুষজন ত্রস্ত হয়ে ছোটাছুটি করছে। কাদের মিয়া নামের এক হতদরিদ্র ক্ষত-বিক্ষত হয়ে দরজার পাশে এসে লুটিয়ে পড়ল। শুশ্রুষা করেও বাঁচানো গেল না। বীভৎস এই ঘটনা মনে দাগা দিয়ে গেল গভীর ভাবে।
যতদিন গেছে ততই প্রশ্ন জেগেছে তাঁর মনে- কেন মানুষের এই অভাব? কেন মানুষের দ্বারা দুর্ভিক্ষ? কেন মানুষে মানুষে বৈষম্য?
কে দেবে এই উত্তর!
১৯৮৭ সাল। নিজেই গবেষণা শুরু করলেন। “মানব উন্নয়ন তত্ব”-এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলেন ‘অর্থনীতিই’ এর কারণ। ফলস্বরূপ ১৯৯৮ সালের ১০ ডিসেম্বর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলেন।
না, তিনি এখনও থেমে নেই।
নিরক্ষর নিরন্ন মানুষের জন্য উজাড় করে দিলেন নোবেল পুরস্কারের সমস্ত অর্থ। গঠন করলেন “প্রতীচী”।
আমাদের গর্ব, তিনি বাঙালি এবং এখনও আমাদের মধ্যে কাজ করে চলেছেন। আর হ্যাঁ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তিনি আজও মুখর। সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা কান্ড তারই প্রমাণ।
তিনি বর্তমানে থমাস ডাব্লিউ লেমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক অধ্যাপক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি হার্ভার্ড সোসাইটি অফ ফেলোস, ট্রিনিট্রি কলেজ, অক্সব্রিজ এবং ক্যামব্রিজের একজন সিনিয়র ফেলো। এছাড়াও তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজের মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
অমর্ত্য সেন ১৯৩৩ সালের আজকের দিনে (৩ নভেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment