রবি ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার
বাবলু ভট্টাচার্য : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’র জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।
সাধারণের ধারণা, বাংলা ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য রবীন্দ্রনাথ নোবেল জয় করেছিলেন। বাস্তবতা হলো রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ইংরেজি ভাষায় রচিত ‘গীতাঞ্জলি’— যার ইংরেজি শিরোনাম ছিল ‘সং অফারিংস’। বাংলা গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১০ সালে। অন্যদিকে ‘সং অফারিংস’ বেরিয়েছিল ১৯১২ সালে। ‘ইন্ডিয়া সোসাইটি অব লন্ডন ছিল’-এর প্রকাশক।
১৯১৩ সালের ১ মার্চ ইংল্যান্ডের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ম্যাকমিলান প্রকাশ করেছিল রবীন্দ্রনাথের ‘সং অফারিংস’। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই গোটা ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বাঙালি কবির বিশ্বখ্যাতি। একই বছর তিনি ওই কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
বাংলা গীতাঞ্জলি এবং ইংরেজি গীতাঞ্জলি’র মধ্যে রয়েছে অনেক পার্থক্য। বাংলা গীতাঞ্জলিতে সঙ্কলিত হয়েছিল মোট ১৫৭টি কবিতা ও গান। কিন্তু ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে কবিতা ও গানের মোট সংখ্যা ১০৩। বাংলা গীতাঞ্জলির ৫৩টি রচনা গৃহীত হয়েছে ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে; এ ছাড়া বিভিন্ন কাব্য ও নাটক থেকে নেয়া হয়েছে কবিতা ও গান।
কবি ইয়েটস গীতাঞ্জলির ভূমিকা লিখলেও নোবেল কমিটির কাছে রবীন্দ্রনাথের নাম তিনি প্রস্তাব করেননি। প্রস্তাব করেছিলেন অন্য এক ইংরেজ কবি স্টার্জ মুর।
নিয়ম ছিল, বিভিন্ন দেশের স্বীকৃত সাহিত্য সংস্থার সদস্য বা নোবেল পুরস্কারে ভূষিত ব্যক্তিরা পুরস্কারের জন্য সুইডিশ একাডেমির কাছে বিশেষ কোনো ব্যক্তির নাম সুপারিশ করতে পারবেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে এই কাজ করতেন ‘রয়্যাল সোসাইটি অব লিটারেচার অব দ্য ইউনাইটেড কিংডম’-এর সদস্যরা। সে বছর সোসাইটি বিখ্যাত ইংরেজ কবি ঔপন্যাসিক টমাস হার্ডির নাম সুপারিশ করে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারেননি স্টার্জ মুর। সোসাইটির একজন সদস্য হিসেবে এককভাবে তিনি পুরস্কারের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম পাঠিয়ে দেন।
নোবেল কমিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ১৯১৩ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯১৩ সালের ১৪ নভেম্বর সুইডিশ নোবেল কমিটি এ ঘোষণা করে।

Be First to Comment