Press "Enter" to skip to content

রবীন্দ্রনাথ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব, সঙ্গী-সাথী নিয়ে বাংলা -মুলুকের বাইরেও পাত্রী দেখতে গেলেন। পাত্রী খুব ধনী, সাত লাখ টাকার উত্তরাধিকারী, সে যুগে সাত লাখ টাকা যৌতুক, ভাবা যায়………..!

Spread the love

রবীন্দ্রনাথের বিবাহবার্ষিকী

বাবলু ভট্টাচার্য : আজ থেকে ১৩৭ বছর আগে ; ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর ভবতারিণী (মৃণালিনী) দেবীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহ সম্পন্ন হয়৷ রবীন্দ্রনাথের বিয়ে প্রসঙ্গে কিছু মজার ঘটনা আছে। যদিও তার বিয়ে ছিল এক সত্যিকারের রাজপুত্তুরের বিয়ে।

তার বিয়ের বয়স নাকি হু হু করে গড়িয়ে যাচ্ছিল। ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘রবিকাকার বিয়ে আর হয় না।’ বিয়ে হয় না কেন এমন সুপুরুষ মানুষটির? অনেক মেয়ে দেখা হলেও কুল-গোত্র মিলিয়ে পাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না।

পূর্বপুরুষেরা পিরালি ব্রাহ্মণ বিধায় অন্য শ্রেণির মানুষেরা তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চান না। সুতরাং রবীন্দ্রনাথ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব, সঙ্গী-সাথী নিয়ে বাংলা -মুলুকের বাইরেও পাত্রী দেখতে গেলেন। পাত্রী খুব ধনী, সাত লাখ টাকার উত্তরাধিকারী, সে যুগে সাত লাখ টাকা যৌতুক, ভাবা যায়! রবীন্দ্রনাথ যে ঘরে বসে আছেন, সে ঘরে দুটি অল্প বয়সী মেয়ে এসে বসল। একটি নেহায়েত চুপচাপ, সাধাসিধে, জড়ভরতের মতো এক কোণায় বসে রইল।

অন্য মেয়েটি যেমন সুন্দরী, তেমনি চটপটে, স্মার্ট। একটুও জড়তা নেই, সুন্দর ইংরেজি উচ্চারণ। পিয়ানো বাজাল দারুণ। সংগীত নিয়ে জ্ঞানগর্ভ টুকরো আলোচনাও করল। রবীন্দ্রনাথের খুব পছন্দ হয়েছে মেয়েটিকে। এমন সময় বাড়ির কর্তা ঘরে ঢুকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর মেয়ে দুটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সুন্দরী মেয়েটিকে দেখিয়ে বললেন, ‘হিয়ার ইজ মাই ওয়াইফ’। আর জড়ভরতকে দেখিয়ে বললেন, ‘হিয়ার ইজ মাই ডটার’। পাত্রী দেখার দল বিস্ময়ে হতবাক।

রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিরাকার, মানবতাবাদী ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী হলেও বিয়ের ব্যাপারে খুব গোঁড়া ছিলেন। পিরালিরা সমাজের যতই ক্ষুদ্রগণ্ডিরই হোক, তার বাইরের সমাজে কোনো ছেলেকে তিনি বিয়ে দেননি। মহর্ষি নিজেও বিয়ে করেন দক্ষিণডিহির পিরালি রামনারায়ণ রায় চৌধুরীর কন্যা সারদাদেবীকে।

রবীন্দ্রনাথেরও এভাবে পাত্রী দেখা হলো। রবীন্দ্রনাথ নিজেই পছন্দ করলেন দক্ষিণডিহির ফুলি ওরফে ভবতারিণীকে। ঠিক হয়ে গেল রবীন্দ্রনাথের বিয়ে। বিয়ের আগে হলো জমকালো এক আইবুড়ো ভাত। সেদিন রবিঠাকুরকে দারুণ দেখাচ্ছিল। গায়ে কারুকাজ করা দামি শাল, আর সাজও ছিল চমৎকার। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনোরম বর্ণনা : ‘একে রবিকাকা, তায় ওই সাজ, দেখাচ্ছে যেন দিল্লির বাদশা !’

এ বিয়ে ব্রাহ্মমতে হলেও স্ত্রী আচারে কোনো ত্রুটি ছিল না।
কনেকে সাতপাকে ঘোরানো, সম্প্রদান, এমনকি জমাটি বাসরও হয়েছিল। বাসরঘরে নতুন বৌকে স্বরচিত ও সুরারোপিত গানও শুনিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। ‘আ মরি লাবণ্যময়ী/কে ও স্থির সৌদামিনী…।’

মৃণালিনীরা শুধুমাত্র পিরালি ব্রাহ্মণ ছাড়া সামাজিক, আর্থিক, আধ্যাত্মিক কোনো দিক থেকেই অভিজাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে তুলনীয় ছিলেন না। তবে ঠাকুর পরিবারের উপযুক্ত করে মৃণালিনী গড়ে তুলেছেন নিজেকে। বিয়ের পর দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে পড়াশোনার জন্য লরেটো হাউসে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল।

ইংরেজি শেখার জন্য খোদ মেমসাহেব শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়। ঠাকুরবাড়ির বৌ ইংরেজি জানবে না তা কি হয়? আর পাঁচজন আধুনিকার মতোই মৃণালিনী ক্রমশ হয়ে উঠেছেন স্বশিক্ষিত, সাহিত্য অনুরাগী, সংস্কৃতিমনস্ক। এই সংস্কৃতিমনস্কতার জন্যই পরবর্তী জীবনে তিনি রবীন্দ্রনাথের মননের সঙ্গী হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।

এসব কিতাবি শিক্ষার বাইরে মৃণালিনীর সাহিত্য ভাবনা ও কর্ম উল্লেখের দাবি রাখে। সংস্কৃত থেকে ‘মহাভারত’-এর অনুবাদ এবং ‘রামায়ণ’-এর অনুবাদ করেছিলেন তিনি। বাংলা রামায়ণটি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ সংশোধন করে দেন। কিন্তু এগুলো সংরক্ষিত হয়নি।

এ ছাড়াও তিনি পূর্ববাংলায় ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ‘রূপকথা’ সংগ্রহ করেছিলেন। অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ এটি।

রবীন্দ্রনাথের সোনারতরীতে ‘রাজার ছেলে’ ‘রাজার মেয়ে’, ‘বিম্ববতী’ প্রমুখ যে কবিতাগুলো রয়েছে তার উৎস-সংগৃহীত এই রূপকথাগুলি। অবনঠাকুরের ‘ক্ষীরের পুতুল’ গল্পটি রূপকথা থেকে ধার নেওয়া।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.