জন্মদিনে স্মরণঃ র বি ঘো ষ
“Life is a tragedy when seen in close-up, but a comedy in long-shot.”
——– চার্লি চ্যাপলিন
বাবলু ভট্টাচার্য : এই অমোঘ সমস্ত কথাগুলির সঙ্গে দৃশ্যত মানিয়ে যায় আমাদের প্রত্যেকের পছন্দের এক অভিনেতার নাম। তিনি রবীন্দ্র ঘোষদস্তিদার; যিনি ‘রবি ঘোষ’ নামেই বিখ্যাত।
‘গল্প হলেও সত্যি’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘অভিযান’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’– ছবিগুলিতে একের পর এক চুটিয়ে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা রবি ঘোষ।
নায়কোচিত চেহারা না-হলেও সে যুগের বাংলা ছবির সমস্ত পরিচালকের প্রিয় পাত্র ছিলেন রবি ঘোষ। তার হাত ধরেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন কত কত সফল অভিনেতা- অভিনেত্রী। বাংলা চলচ্চিত্রের ‘বাঘা বাইন’ তো তিনিই।
আজীবন বাংলা ছবির ‘কমেডিয়ান’ তকমা পাওয়া এই মানুষটি কিন্তু একেবারেই অভিনেতা হতে চাননি।
রবি ঘোষের ছাত্র জীবন কাটে কলকাতার আশুতোষ কলেজে। ছাত্রাবস্থাতেই পড়াশোনার পাশাপাশি চলত নিয়মিত শরীরচর্চা। সেই সময় মাস্ল ফুলিয়ে, বুকের ছাতি চওড়া করে সিনেমায় ‘হিরো’ হওয়ার চল ছিল না। সুন্দর মুখ আর শক্তিশালী অভিনয়েই প্রত্যেকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নিজের জাত চেনাতেন।
কিন্তু রবি ঘোষের বডি থাকলেও না ছিল সুন্দর চাঁদপানা মুখ, না ছিল উচ্চতা। তপন সিংহ-এর ‘গল্প হলেও সত্যি’ ছবিতে রবি ঘোষের অভিনয় দেখলে বোঝা যাবে আসল হিরো তো তিনিই। ওরকম দাপুটে অভিনয় আর মানানসই চেহারায় গোটা ছবি জুড়ে একাই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।
উত্তমকুমার-সৌমিত্রদের যুগেও ভেঙে ফেলেছিলেন স্টিরিও- টাইপ তকমা। সিনেমার ভাষ্যে নিয়ে এসেছিলেন একটা অন্য হাওয়া। যে হাওয়ায় সহজেই গা ভাসানো যায়, যে হাওয়ার রেশ থাকে বহু বহু বছর, কিন্তু তাকে ধরা বড্ড শক্ত।
কালো, বেঁটে ওই লোকটাই সেই যুগে মিনার্ভা থিয়েটার হাউসফুল করতেন একাই। লোকে বলাবলি করত, রবি ঘোষ মানেই একাই একশো।
রবি ঘোষের অভিনয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্যই ছিল হাস্যরসের মাধ্যমে সামাজিক রূঢ় বাস্তবিক ঘটনাগুলিকে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা। অভিনয়ের আন্তরিকতা ও সংবেদনশীলতা তার প্রতিটি চরিত্রকে নতুন আঙ্গিকে হাজির করেছিল। কে বলবে, ইনি অভিনেতা নয়, বডিবিল্ডারই হতে চেয়েছিলেন!
তিনি ‘সাধু যুধিষ্ঠীরের কড়চা’ ও ‘নিধিরাম সর্দার’ নামের চলচ্চিত্র দুটি পরিচালনাও করেন।
বিখ্যাত থিয়েটার অভিনেতা হিসাবেও তিনি প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালেও অংশ নেন।
রবি ঘোষ ‘চলাচল থিয়েটার’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।
তিনি ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

নিজের কলমে লিখলেন— ‘আসলে আমার নাম রবীন্দ্র ঘোষদস্তিদার। পিতা জিতেন্দ্রনাথ ঘোষদস্তিদার, মাতা জ্যোস্নারানী ঘোষদস্তিদার। সাকিন কলকাতা। আদি নিবাস বরিশাল। খাস বাঙাল। আমি হতে পারতাম সার্কাস দলের জিমন্যাস্ট। হতে পারতাম ওয়েট লিফটিং-এ বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন। পুলিশ কোর্টের কেরানি বাবু হয়েও জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতাম। এর প্রত্যেকটিরই তুমুল সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু হতে পারলাম না।’
রবি ঘোষ ১৯৩১ সালের আজকের দিনে (২৪ নভেম্বর) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment