শু ভ র থ যা ত্রা
বাবলু ভট্টাচার্য : রথযাত্রা হিন্দু সমাজের একটি বাৎসরিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের ২য়া তিথিতে রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এর সাতদিন পর শুক্লপক্ষেরই দশমী তিথিতে রথের ফিরতি টান অনুষ্ঠিত হয়। একে বলা হয় উল্টোরথ।
রথযাত্রা অনুষ্ঠানের পক্ষাধিককাল পূর্বের পূর্ণিমা তিথিতে উপাস্য দেবতার স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল লোকের সমাবেশে মহাসমাবেশে ও ধুমধামের মধ্যে রথযাত্রা ও ফিরতি রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, যে মূর্তি নিয়ে এই রথযাত্রা সেই রথারোহী দেবতা কে? বিশাল অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে রথারোহী দেবতার ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। পুরনো কোনো কোনো লেখায় পাওয়া যায়- বৌদ্ধ সামাজিক উৎসবে রথে করে বুদ্ধমূর্তি নিয়ে পথ পরিক্রমা করা হতো।
‘ফা-হিয়েনের ভ্রমণ-বৃত্তান্তে বৈশাখী পূর্ণিমায় রথযাত্রার কথা পাওয়া যায়। নটরাজ শিবের মূর্তি নিয়ে কর্ণাটে (ভারত) রথ ভ্রমণে প্রথা আছে পৌষালী পূর্ণিমার চারদিন আগে।’
তবে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের সর্বত্র রথারোহী দেবতা হলেন প্রভু জগন্নাথ, সঙ্গে বৈমাত্রেয় ভাইবোন বলরাম ও সুভদ্রা। তবে অনেক স্থানেই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহের অভাবে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ রথে স্থাপনপূর্বক রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতি বছর ভারতের উড়িষ্যার পুরীতে অবস্থিত জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ পৃথক পৃথকভাবে ৩টি রথে আরোহণ করিয়ে রথে রশি বেঁধে উপস্থিত ভক্তরা রথ, মন্দির থেকে দেড়-দুই কিলোমিটার দূরবর্তী, গুন্ডিচা বাড়ি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান। গুণ্ডিচা বাড়িতে ৭দিন অবস্থানের পর প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ পুণরায় রথে করে জগন্নাথ দেবের মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়, যা উল্টোরথ নামে আখ্যায়িত।
সামগ্রিক বিচারে রথযাত্রা হলো সমাজের সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রতীক। সামাজিক ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা ও দায়-দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সমাজের কোন অংশকে অপাঙ্ক্তেয় করলে, অচ্ছুত-অন্ত্যজ বলে দূরে সরিয়ে রাখলে সমাজের সামনের দিকে এগিয়ে চলার গতিও রুদ্ধ হয়ে পড়ে; সমাজ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সমাজ তার ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়।
পক্ষান্তরে সমাজের উচ্চ-নীচ, ধনী-নির্ধন, নারী-পুরুষ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের অংশ গ্রহণ যদি নিশ্চিত হয়, তবেই সমাজ সামনে এগিয়ে চলে। এক কথায়, রথযাত্রা মানুষের মধ্যে গোষ্ঠীভাব জাগায়, সমাজের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মানুষকে সমষ্টিগতভাবে বাঁচতে উদ্বুদ্ধ করে। এই হলো রথযাত্রার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।
শুভ রথযাত্রা
Be First to Comment