Press "Enter" to skip to content

“যেতে দাও আমায় ডেকো না, কবে কি আমি বলেছি মনে রেখো না”- গৌরী প্রসন্ন মজুমদার….।

Spread the love

স্মরণঃ গৌ রী প্র স ন্ন ম জু ম দা র

“যেতে দাও আমায় ডেকো না,
কবে কি আমি বলেছি মনে রেখো না”।

[ গৌরী প্রসন্ন মজুমদার ]

‘মাগো ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে’… গানটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে তুলে ধরে, আবার ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’… মান্না দে’র সেই স্মৃতি জাগানিয়া গানটি প্রত্যেক বাঙালির হৃদয়ে আজও গেঁথে আছে।
কালজয়ী এসব গানের রচয়িতা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।

উপমহাদেশের কালজয়ী বাংলা গানের গীতিকার ও সুরকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯২৫ সালের ৫ ডিসেম্বর পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার গোপাল নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

গোপালনগর গ্রামের পূর্বপুরুষের বাড়িতে বেড়ে ওঠা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ওই গ্রামের মাটিতে শৈশব ও কৈশোর কাটালেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়ার জন্য কলকাতায় পাড়ি দেন।

প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র থাকাকালে সুরকার অনুপম ঘটকের কাছে গান শিখেছেন। প্রিয়শিল্পী ছিলেন শচীনদেব বর্মণ ও আব্বাসউদ্দিন।

ভেবেছিলেন অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করবেন, পিতার মতোই অধ্যাপনা বেছে নেবেন। কিন্তু শচীন কর্তা তাঁকে যেন বেঁধে দিলেন আষ্টেপৃষ্ঠে গানের জগতে। কিন্তু ছিলেন তিনি বাঁধন হারা। গানপাগল হলেও গায়ক হিসেবে নিজের আত্মপ্রকাশে আগ্রহী ছিলেন না। শচীন কর্তার অনুরোধে গান লেখা শুরু, তারপর আর থেমে থাকেন নি।

নিতান্ত সাধাসিধে, পাজামা-পাঞ্জাবী পরিহিত এক বলিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। উচ্চতায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সমান বলেই হয়তো ঘনিষ্ঠতাও ছিল বেশি। একসঙ্গে কাজও করেছেন।

সমকালে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ গীতিকার। তাঁর গানের বাণী কখনো একঘেঁয়ে নয়। ভাব, ভাষা, শব্দ, ছন্দ ও রচনাশৈলী নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গেছেন। একই ফর্মে বেশিদিন গান লেখেননি। এ ব্যাপারে ছিলেন সতর্ক, সচেতন।

শচীনদেব বর্মণ, কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, রাহুল দেববর্মণ, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়… কে গাননি তাঁর লেখা গান!

লিখেছেন ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘কী আশায় বাঁধি খেলা ঘর বেদনার বালুচরে’, ‘এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় এ কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু’ ‘ও নদী রে/ একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘তারে বলে দিও’, ‘আজ দু’জনার দু’টি পথ’, ‘মুছে যাওয়া দিনগুলি’, ‘এই রাত তোমার আমার’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন’, ‘কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো’, ‘আমার গানের স্বরলিপি’, ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে’ ইত্যাদি বহু বিখ্যাত গান।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই বিখ্যাত ভাষণ তিনি শুনেছিলেন আকাশবাণীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্রীতরফদারের রেকর্ড প্লেয়ারে। অনলবর্ষী সেই বক্তৃতা শুনে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ওই আড্ডাতেই সিগারেটের প্যাকেটের সাদা কাগজে লিখলেন কালজয়ী সেই গান- ‘শোনো, একটি মুজিবরের থেকে/ লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি/ আকাশে-বাতাসে ওঠে রণি/বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ’।

গানটি সুর এবং শিল্পী অংশুমান রায়। বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে বাজানো হয় এই গান। এই গানটি পরে ‘মিলিয়ন মুজিবর সিঙ্গিং’ নামে অনুদূতি হয় ইংরেজিতে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণেই বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশ বেতারের জন্য তিনি লিখেছিলেন- ‘মাগো ভাবনা কেন/ আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে’ গানটি। গানটি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সৃষ্টি করেছিল তুমুল আলোড়ন।

মান্না দে’র গাওয়া তাঁর লেখা ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ ২০০৪ সালে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানে ঠাঁই পেয়েছে।

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯৮৬ সালের আজকের দিনে (২০ আগস্ট) ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৬১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.