শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কলকাতা, ২০ মে ২০২২। ইতিমধ্যেই কলকাতার অ্যাপেলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে প্রায় চার হাজার রোগীর হার্ট অপারেশন হয়েছে সর্বাধুনিক নতুন এম আই সি এস প্রযুক্তিতে। প্রতি মাসেই প্রায় ৪০ জন রোগীর সফল অপারেশনের পর তাঁরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এমনই দাবি করলেন, এই হাসপাতালের অন্যতম পরিচালক ও হৃদরোগের শল্য চিকিৎসক সুসান মুখোপাধ্যায়। কলকাতা প্রেস ক্লাবে গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে অ্যাপেলো মাল্টিস্পেসালিটি হাসপাতালের তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন হাসপাতালের পূর্বাঞ্চল প্রধান ডা: সুরেন্দ্র সিং ভাটিয়া এবং হাসপাতালের অন্যতম পরিচালক শল্য চিকিৎসক সুসান মুখোপাধ্যায়।
ডা: সুরেন্দ্র সিং ভাটিয়া বলেন, বহুদিন ধরেই আমাদের হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের অপারেশন ও চিকিৎসা যত্নের সঙ্গে করা হয়। এখন হার্ট অপারেশনের ক্ষেত্রে আর পুরোনো পদ্ধতি নয়, অপারেশন হচ্ছে অত্যাধুনিক এম আই সি এস প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সাধারণ মানুষের একটা ধারণা বাইপাস সার্জারি যেমন ব্যয়বহুল, তেমন কষ্টকর। কেননা বুক কেটে কাটা ছেঁড়া হয়। ফলে বহুদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। তাই তাঁরা বেছে নেন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি অপারেশনে। যেখানে রোগীর হার্টের ধমনীতে স্টেন বসানো হয়। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বলে, স্টেন বসানো কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।১০/১২ বছর পর আবার স্টেন বসাতে হতে পারে। তাই আমরা পুরানো পদ্ধতির বদলে নতুন প্রযুক্তি এম আই সি এস ব্যবহার করছি। এম আই সি এস হলো মিনিম্যালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারিস্। যা সামান্যতম রক্তপাতে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ভাবে হার্ট অপারেশনে রুগী মাত্র ২/৩ সপ্তাহে নিজের কর্ম জগতে ফিরে যেতে পারেন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন তিন মাসের মধ্যে।
এই হাসপাতালের অন্যতম পরিচালক ও শল্য চিকিৎসক সুসান মুখোপাধ্যায় জানান, নয়া প্রযুক্তির এই অপারেশনে রোগী যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন ২/৩ সপ্তাহে, সেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সময় লাগে প্রায় ছ মাস। তাছাড়া প্রচলিত পদ্ধতির অপারেশনে রোগীর বুক অনেকটাই কেটে অপারেশন করতে পাঁজরের হাড়, যাকে স্টারনাম বোন বলে তা কেটে ফেলতে হয়। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে এবং ব্যথার জন্য অনেকদিন ভুগতে হয়। এমনকি শরীরে প্রায় ১২/১৩ ইঞ্চি ক্ষতের দাগও স্থায়ী ভাবে থেকে যায়। এছাড়াও রোগীর মনে অপারেশন সম্বন্ধে ভীতি তাঁর জীবনীশক্তি কমিয়ে দেয় । আমরা যে অত্যাধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করি, তার অনেকগুলি সুবিধে আছে। এই পদ্ধতিতে হাসপাতালে খুব কম দিন থাকতে হয়। রক্তপাত সামান্য। অস্ত্রোপচারে বুকের পাঁজরার হাড় কাটার প্রয়োজনই হয় না। সংক্রমনের আশঙ্কা খুবই কম। শরীরে থাকে না কোনো ক্ষতচিহ্ন। ফলে মহিলাদের মধ্যে এই প্রযুক্তি সবচেয়ে নিরাপদ। মাইট্রাল ভালভ রিপ্লেসমেন্ট ও হার্টের ফুটো বন্ধ করতেও এই আধুনিক প্রযুক্তি যথেষ্ট কার্যকর।
এম আই সি এস প্রযুক্তিতে বুকের বাঁদিক বরাবর দেওয়ালে মাত্র ২.৫ ইঞ্চি ফুটো করে ল্যাপারোস্কপি প্রোব ব্যবহার করে সার্জারি করা হচ্ছে। ইদানিং কিছু হাসপাতাল মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিজ্ঞাপন করছে, যে চার ইঞ্চি মাত্র ফুটো করে নাকি হার্ট অপারেশন সর্বাধুনিক। যেটা চরম বিপদজনক বিজ্ঞাপন। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নতুন বিজ্ঞানসম্মত প্রযুক্তির অপারেশনে যখন আড়াই ইঞ্চি কেটেই সফল অপারেশন সম্ভব, তখন চার ইঞ্চির কথা আসছে কোথা থেকে? আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা ৮০/৯০ বছরের বয়স্ক রোগীদের সফল অপারেশন করছি।
প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল, হার্ট অপারেশনের আগে ডাক্তারবাবুরা অনেকেই হার্টের ব্লকেজ পরীক্ষার জন্য কেউ প্রচলিত অ্যাঞ্জিওগ্রাম পরীক্ষার কথা বলেন। যেখানে শরীরে ক্যাথিটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা হয়। কেউ বলেন, সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম পদ্ধতি নিরাপদ। অনেকে বলেন, হার্টের রোগীর বড় মাছ খাওয়া উচিত নয়। কেননা মাছের চর্বি ক্ষতিকারক। ছোট মাছ খাওয়া উচিত। অনেকে বলেন, বড় মাছেই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে । যা হার্টের রোগীর উপকারী। আপনাদের অভিমত কি? ডা : সুসান মুখোপাধ্যায় বলেন, পরীক্ষার দুটি পদ্ধতি একে অন্যের পরিপূরক নয়। ক্ষেত্রবিশেষে ডাক্তারবাবুরা সিদ্বান্ত নেন, কি পদ্ধতিতে পরীক্ষা করবেন? মাছের ক্ষেত্রে বলবো ছোট বড় নেই। সব মাছই হার্টের রোগীর জন্য ভালো। তবে মনে রাখা দরকার, হার্টের রোগ জীবনশৈলীর ভুলের ফসল। সুতরাং পরিমিত আহার গ্রহণ করা উচিত।
প্রশ্ন ছিল, ২০০৪ সালেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক মান্যতা দিয়েছে, অপারেশন ছাড়াই ই ই সি পি প্রযুক্তিতে বিনা অপারেশনেই হার্টের ব্লকেজ দূর করার চিকিৎসা। এই সম্পর্কে আপনাদের বক্তব্য কি? ডা: মুখোপাধ্যায় জানান, ই ই সি পি পদ্ধতিতে ব্লকেজ দূর হচ্ছে, তবে সব ক্ষেত্রে এখনও সম্ভব নয়। হার্টের ভালভ সংক্রান্ত রোগে বা হার্ট ফুটো থাকলে সেই চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপারেশন একমাত্র পথ। মানুষের অপারেশন সম্বন্ধে ট্রমা কাটিয়ে ওঠা দরকার। বিজ্ঞান এখন অপারেশন অনেক সহজ ও প্রায় ব্যথাহীন ও রক্তপাতহীন হয়ে গেছে। আগামীদিনে হার্ট অপারেশনে রোবোটিক সার্জারি আসছে। সুতরাং অপারেশন এখন আর ভীতির কারণ নয়।
Be First to Comment