** প্রদীপের সঙ্গে আলাপ=প্রলাপ** (পর্ব– ০৯২)
Direct from the desk of Magus, Necromancer Dr. P C SORCAR (Junior)
( Dr. Prodip Chandra Sorcar, M. Sc., Ph.D. )
******** “তুমি আ–র, নেই, সে’ তুমি” *******
কলকাতা, ২৬ নভেম্বর ২০২১। ছোটবেলায় মানুষের কতো রকম স্বপ্ন থাকে। কতো সত্যি-মিথ্যের বিচিত্র পথ ধরে ,’সর্বত্রগামী’ হওয়ার রুট ম্যাপ আঁকা সেই সব স্বপ্নে। আগাম প্রচার হিসেবে বলে, বড়ো হয়ে , ‘হ্যান করুঙ্গে, ত্যান করুঙ্গে’।
সেখান থেকেই শুরু। পরে সেটাই মোলায়েম রূপে, “আমি তো আছি, ভয় কেন মা করো ?”, হয়ে প্রকাশ পায়। বীরপুরুষের স্বপ্নে ঘটে উত্তোরণ। তার কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় ,..”রোজ কতো কি ঘটে যাহা তাহা, এমন কেন সত্যি হয়না আহা” গোছের আক্ষেপ । তখনও কিন্তু তার মনের রাজত্বটা থাকে সীমাহীন। প্রজাপতির মতো এই বাগান থেকে সেই বাগানে নির্দ্বিধায় উড়ে উড়ে যায়। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট, অনুমতি নেবার ধার ধারে না। সব ফুলেই তার সমানাধিকার।
“বসুধৈব কুটুম্বকম্” পবিত্র কথাটাই হয়ে ওঠে অভিশাপ। লম্বা এর কাহিনী। সেজন্য সংক্ষেপে বলি, সমাজ তখন থেকেই আমাদের আত্ম-কেন্দ্রিক, স্বার্থপর এবং নিষ্ঠুর হতে শেখায়।
তারপর আসে জীবনে, নিজস্ব, একান্ত নিজস্ব সঙ্গিনী খোঁজার সেই বিশাল চ্যাপটারটা । যাকে পছন্দ তার কাছে পাত্তা না পেলে, মানে, আঙ্গুর ফল যে টকও হতে পারে, সেই চেতনা জাগতেই সে সমাজ-বিরোধী হয়ে যায়, অথবা হয় দার্শনিক অথবা সংসারত্যাগী সন্নাসী…আরো নয়তো বা আমার মতো বদ্ধ একটা “প্রদীপ্ত চন্দ্রাহত” বাকসর্বস্ব জাদুকর। কলেজ ম্যাগাজিনে আমার এক ‘বন্ধু কবি’র মতো , হাফ সোল খেয়ে লেখে, “ধুত্তোরি আর ভাল্লাগে না, পেছন পেছন ঘোরা”। এক লাইনের কবিতা, কিন্তু ওই এক লাইনেই প্রকাশ পেয়েছে ওর প্রোগ্রেস রিপোর্ট। র্নিষ্ফলা চেতনা জাগানোর , অসার, তিক্ত, রসালো নিজস্ব , রিক্ত আর এক উপনিষদ। ।
রূপকথার রাজত্বের ঠিকানা পাবার খোঁজটা যে কোনও অভিজ্ঞ পথিক বলবেন, ” সে কি?? জানেন না!! ও-ই যে, ওই হোথা। ওই যে আবছা দেখা যাতিছে, ওই সামনের ধূ-ধূ টা, তার পরের ধূ-ধূ টা পার হলেই ডান দিকে আর বাঁদিকে, দুদিকেই ওর থান । তবে, যেতি হবে নাক বরাবর সোজা ।”
ওরাই বলে দেবে, “ভাগ্যিস পিরথিবীটাকে ভগবান মিঞা গোল বেইনেছিলেন। চারদিকে ঘুরি-ঘুরি তেইক্যে দেখুন, গো—-ল। কোথাও কোণা টোনা নি।’ থাইকলে অনেকেই তো খুঁড়োর কলের টোপে আক্কিষ্ট হয়ে, না শুইনেই দৌড় লাগাতো ; তারপর, সা–ই ধপ্পাস্ হতি হয়। ভগবান-মিঞার, সে-সব বৈষয়িক বুদ্ধি আছে বলতি হবে। কোনো পাঁচিল দেননি।” আমার দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা বাসী, উপদেষ্টা সহকারী, শ্রীমান হাসেম আলী মোল্লা নিজের প্রাণের ভাষায় আরও বলে, “পিরথিবীটাকে ‘এলিং’ দিয়ে মুইড়্যা দেন নি। চালাক আছেন। জমিতে ঢাল দেতে দেতে, ঢাল দেতে দেতে, এক্কেবারে গোল বাইন্যে দেছেন। নাম দেছেন ‘ভূগোল’ ! কেউ নীচে পরবেনি। সবই বিজ্ঞান”
শোলে সিনেমার গব্বর সিং- এর সেই ক্ষেদোক্তির কথা মনে আছে? আমার মনে আছে। চির জীবন মনে রাখবো। গ্রামারের ভুল হলেও, ভাবার্থটা ভুলবো না। এরকম ছিলো তার কথোপকথন:-
—-কিতনে আদমি থে ?
—- দো আদমি থে। সর্দার!
—- উয়ো থা দো, আউর তুম থে তিন আদমী !. . থুঃ!
+++ +++ +++ +++ +++
—-যব দূর দূর গাঁও মে বাচ্চো রোতে হ্যায় , তব উনকি মা বলতি, বাচ্চা শো যাও, নেহী তো গব্বর সিং আ জায়গা………. আউর তুম দোনো.., গব্বর কি ইয়ে ইজ্জত, পুরি মিট্টি মে মিলা দিয়া !!!! ইসকা সাজা মিলে গা , জরুর মিলেগা….।
—-হাম আপকো নিমক খায়ে হ্যায় সর্দার..!
—-(হেঃ হেঃ) , তো আব্ গোলি খা..!!
===========================
হঠাৎ একটা হিন্দী সিনেমার (ভুল-ভ্রান্তিময়) ডায়লগ এখানে উল্লেখ করলাম কেন? হ্যাঁ, প্রশ্ন উঠতেই পারে। সঙ্গত কারণ আছে। বেঁচে থাকার এই অর্কেস্ট্রায় প্রতিটি বাদ্যযন্ত্রই দরকারী। তাদের ধ্বনিও খুব অর্থবহুল এবং সুন্দর। সব মিলিয়েই মানুষের সঙ্গীত, যদি সুরে সুর মিলিয়ে থাকে।….
বলছি। বলছি। আজকের আসল কাহিনীটা হচ্ছে তো সেটাই। তবে হ্যাঁ, এই কহিনীটা যতো সত্যিই হোক না কেন, আমাকে সম্মানের চূড়ান্ত স্থানে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে। জাদুকর হিসেবে ধন্য বোধ করছি। তাই বন্ধু হিসেবে নির্লজ্জভাবে শেয়ার করলাম।
******** ********* ********
চম্বলের কুখ্যাত দস্যু সর্দার, ‘মাধো সিং’। ঠিক যেন শোলে সিনেমার ‘গব্বর সিং’, অথবা তার চেয়েও বেশি নৃশংস!! কিছুত্তেই ধরা দিচ্ছিলো না। দলের অ-নে-ক সাগরেদকে নির্মূল করলেও, বা ব-হু পুলিশ শহীদ হলেও , ওকে বাগে আনতে পারা যাচ্ছিলো না। কেউ খবর দিলে কয়েক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিলো। তাতেও কিছু হচ্ছিলো না। বরঞ্চ ও আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলো।
কেন্দ্রীয় সরকার থেকে প্রস্তাব যায়, “মাধো সিং, তুমি আত্মসমর্পন করো, কথা দিচ্ছি, আমরা তোমাকে তাহলে কোনও শাস্তি দেবো না। শান্তিতে বাঁচতে দেবো। ”
অনেক কথা চালাচালির পর মাধো সিং রাজী হয়। কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে। “আমি মুক্ত বাঘের মতো বেঁচে অভ্যস্ত। মানুষ আমাকে সম্ভ্রম করেছে।
আমাকে মুক্ত বাঘের মতো, সম্ভ্রমের সঙ্গে বাঁচতে দিতে হবে।”
— ঠিক আছে তাই হবে। তুমি নিজেকে কীভাবে পরিচিতি দিতে চাও। কী হবে তোমার জীবিকা ?
অনেক ভেবে ও বলেছিলো, আমি পি. সি. সরকারের মতো জাদুকর হতে চাই। সবার প্রিয় হতে চাই। আমার নাম হবে-“চম্বল কা পি সি সরকার, মাধো সিং, জাদুগর। ”
—কিন্তু তুমি কি ম্যাজিক জানো?
—জানিনা, তবে জেনে নেবো। ব্যবস্থা করুন।
******* ********* *******
পুলিশের বড় বড় মাথারা দিল্লী থেকে আমাদের বাড়িতে আসেন। আমি সম্মত হই। বলি যান্ত্রিক কিছু ম্যাজিক আছে যাতে বেশি রেওয়াজ প্রয়োজন নেই। একটু দেখিয়ে দিলেই পারবে।
মাধো সিংও গোপনে তালিম নিতে আসে। সহকারী হিসেবে ছদ্মবেশী পুলিশ। জাদুর জগতে তখন শঙ্কর দাস নামে আমাদের দলেরই একজন পুরোন শিল্পী যন্ত্র বানিয়ে বিক্রি করতেন। তাঁর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিই। মধুরেণ সমাপয়েত।
উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ জুড়ে ছোট বড়ো অনেক জায়গায় ও অনুষ্ঠান চালায়। বেশ ভীড় করে মানুষ টিকিট কাটতে আসে। শো এর শেষে ও চুরুটের টান দিয়ে সন্ত্রস্ত ভক্তদের অটোগ্রাফ দেয়, “চম্বল কা পি সি সরকার, মাধো সিং। ”
আমি আগ্রাতে ওর শো দেখতে যাই। সঙ্গে কে ছিলেন জানেন? স্বয়ং ফুলন দেবী, M. P.
সে আর এক কাহিনী। সেটা পরে বলবো।
Be First to Comment