মোল্লা জসিমউদ্দিন:কলকাতা,৯ই জানুয়ারি২০২০ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মেট্রোরেল সম্প্রসারণে বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট পেশের সময়সীমা ছিল রাজ্যের। তবে এদিন রাজ্যের তরফে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জানানো হয়েছে – ‘রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরে মেট্রোরেল সম্প্রসারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নেই’। জানা গেছে একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে এই ধরণের পাতাল রেললাইন গড়তে বিশেষজ্ঞ কমিটি। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি কলকাতা ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোরেল সম্প্রসারণে বর্তমানে কোন সমস্যা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখুক বলে বিভিন্ন মহলে দাবি উঠেছে । জানা গেছে, এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় রিপোর্ট তলব করেছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৭ ফেব্রুয়ারিতে। এর আগের শুনানিতে মেট্রোরেল অধীনস্থ কেএমআরসিএলের পক্ষে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোরেল সম্প্রসারণ করতে অনুমতি চাওয়া হয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। উক্ত সংস্থা কে মেট্রোরেল সম্প্রসারণ করার রিপোর্ট টি রাজ্য কে জানাবার নির্দেশ দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য সেটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে জানাবে পুনরায় মেট্রোরেল সম্প্রসারণ করা যাবে কিনা। রাজ্যের আওতাধীন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি কেএমআরসিএলের রিপোর্ট টি পর্যবেক্ষণ করবে বলে নির্দেশিকা ছিল। রাজ্যের অনুমতি নিয়েই মেট্রোরেল সম্প্রসারণ করতে হবে, তা পরিস্কার করে জানিয়ে ছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য জানিয়ে দেয় – ‘মেট্রোরেল সম্প্রসারণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নেই তাদের হাতে’। গত বছরের নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজে ৫ মিটার বোরিং করার ছাড়পত্র দিয়েছিল মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কে। বোরিং করার দ্বিতীয় মেশিন টি এই ৫ মিটার বোরিং করার ছাড়পত্র পায়। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে মৌখিকভাবে জানিয়েছিল – ‘গত ৩১ আগস্ট কলকাতার ৪৮ নং ওয়ার্ডে যে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়েছিল। সেখানে ওই এলাকা থেকে ৭৮ টি পরিবারেরর ৬৮২ জন কে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৮৩ টি পরিবার কে গড়ে ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে’। উল্লেখ্য,গত বছরের আগস্ট মাসের শেষের দিকে মেট্রোরেলের ইস্ট ওয়েস্ট রেললাইন নির্মাণে বড়বাজার এলাকায় বেশ কিছু বাড়ী ভেঙ্গে পড়ার ঘটনায় তোলপাড় হয় মহানগর। বড়বাজারের দূর্গা পিতুরি লেনের তিনতলা এক বাড়ী ভেঙ্গে পড়ে, আরও বেশ কয়েকটি বাড়ি ধসে যায়। কোন প্রাণহানি না ঘটলেও প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় ৩২৩ জন কে ঘটনাস্থলের বাড়ী গুলি থেকে সরিয়ে নেয় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। নিজের বাড়ীতে ঢুকতে না পারা এবং বিশেষজ্ঞ মহলের রিপোর্ট নিয়ে যৌক্তিকতা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জরুরি কালিন শুনানির পিটিশন দাখিল করে এক সমাজসেবী সংস্থা। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল নায়ার রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এর এজলাসে মামলাটি ওঠে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মেট্রোরেলের এই কাজ বন্ধে স্থগিতাদেশ জারী করে ছিলেন। প্রথম পয্যায়ে ১৬ সেপ্টেম্বর অবধি কোন কাজ করতে পারবেনা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলে নির্দেশজারী হয় এবং দ্বিতীয় পয্যায়ে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ জারি ছিল। এরেই মধ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট এবং মেট্রোরেলের রিপোর্ট জমা দেওয়ার আদেশনামা থাকে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কে এও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল – যেসব বাড়ী মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কাজের জন্য সিল করে রেখেছে,সেই বাড়ীগুলিতে মালিকপক্ষর একজন করে ঢুকতে পারবেন জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য। এই মামলায় আবেদনকারীর আইনজীবী ঋজু ঘোষাল রয়েছেন। শুনানিতে মেট্রোরেলের আইনজীবী জানিয়েছিলেন – “ইস্ট ওয়েস্ট পাতাল রেলপথের ১০.৮ কিমি রেলপথের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৯.৮ কিমি রেলপথের কাজ শেষ হয়েছে। শুধুমাত্র ১ কিমির পথ বাকি রয়েছে। যার কাজ চলছিল”। মূলত বিবাদি মোড় থেকে ভায়া বড়বাজার হয়ে হাওড়া স্টেশন যাওয়ার পথটি। টানা বর্ষণে ভূ-গর্ভস্থ ট্যানেলে জল ঢুকে যাওয়াতেই এই বিপত্তি বলে কেউ কেউ দাবি করছেন। ইতিমধ্যেই প্রস্তাবিত ভূ-গর্ভস্থ রেলপথের উপরে থাকা বাড়ী গুলিতে প্রথম পর্যায়ে ৩২৩ জন কে সরিয়ে রাখে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। গতমাসে বড়বাজারে বেশ কিছু বাড়ী ভেঙ্গে পড়েছিল। সেইসাথে ওই এলাকায় সিংহভাগ বাড়ীগুলিতে ফাটল দেখা যায়। যদিও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এইসব বাড়ীর মেরামতির পুরো দায়িত্ব নিয়েছে। তবে যখন তখন বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। সেইসাথে হতে পারে প্রাণহানি। তাই বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জরুরি কালীন শুনানির জন্য পিটিশন দাখিল হয়েছিল। এই মামলার প্রথম শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল -১৬ সেপ্টেম্বর অবধি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কে কাজ বন্ধ রাখতে হবে ।এর পর ৭ নভেম্বর পর্যন্ত নির্মাণকাজে স্থগিতাদেশ জারী ছিল। নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে মামলাটি পুনরায় উঠেছিল। তখন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন রাখে দ্বিতীয় বোরিং মেশিন টি যাতে ৫ মিটার খনন করার অনুমতি পায়। এই আবেদন মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ৫ মিটার বোরিং করার পর পুনরায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোরেল সম্প্রসারণ করতে। গত শুনানিতে এই মামলায় শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশনবেঞ্চ জানিয়েছিল – কেএমআরসিলের রিপোর্ট টি দেখবে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর। দুপক্ষের আলোচনায় অনুমতি নিয়ে পর্যালোচনা চলবে। রাজ্য সম্মতি দিলেই বোরিং করার ছাড়পত্র মিলবে। ৭ জানুয়ারি অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি র ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে রাজ্য জানায় – ‘বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের অধীনে পাতাল রেললাইন সম্প্রসারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ নেই তাদের হাতে’। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৭ ফেব্রুয়ারিতে।
মেট্রোরেল সম্প্রসারণে কেন্দ্রের রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের
More from GeneralMore posts in General »
- মঙ্গলকোটের পুলিশ প্রখর রোদে জলছত্রের পাশাপাশি গাছ লাগানোর বার্তা দিল….।
- TV9 বাংলার নতুন নিউজ সিরিজ ‘সন্ত্রাসের ‘স্বর্গ’ রাজ্য’…..।
- মাত্র ২৮ বছর বয়সী মহিলা নারায়ণা হাসপাতাল আরএন টেগোর হাসপাতালে জীবন রক্ষাকারী হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েছেন….।
- Diversity of India missing in advertising – says ASCI-UA report….
- TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ‘ভোটযুদ্ধ-দেশের লড়াই, পর্ব-৬…..।
- বেলেঘাটা অঞ্চলের প্রবীণ ডাক্তারবাবু এবং মোহনবাগান ক্লাবের অন্ধ ভক্ত সুদীপ রায় চিরতরে চলে গেলেন….।
Be First to Comment