Press "Enter" to skip to content

মীরা শেষ জীবন কাটিয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীনতায়, একটি বৃদ্ধাশ্রমে। আর.ডি. যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন মীরা ছেলের কাছেই ছিলেন সান্তাক্রুজের বাড়িতে। পুত্রশোক তাঁকে পুরো শেষ করে দেয়…….।

Spread the love

প্রবীর রায় : বিশিষ্ট চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা : কলকাতা, ৩১ জুলাই, ২০২১।।       “ব্যর্থরাই প্রকৃত মানুষ। সফলেরা শয়তান।” — হুমায়ুন আজাদের কথাটাই বারবার সত্যি হয়ে ধরা দেয়!

শচিন কত্তার স্ত্রী মীরা দেব বর্মণ ৭১শ এ মুক্তিযুদ্ধের শেষে ছুটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। নাড়ির টান বলে কথা! যখন ফিরছিলেন গ্রামের পুকুর পাড় দিয়ে, দেখলেন একটি চোদ্দ-পনের বছরের মেয়ে পুকুর পাড়ে বসে ডিকসি মেরে মেরে কাঁদছে। জিজ্ঞেস করায় মেয়েটি বলল — তার সবে বিয়ে হয়েছে, ভাইয়ের আসার কথা বাপের বাড়ি থেকে, নিয়ে যাওয়ার জন্য। সকাল থেকে অপেক্ষা করে করে খুব ক্লান্ত সে। অথচ, ভাইয়ের দেখা নেই। বাড়ি ফিরেই সংবেদী হৃদয় নিঙড়ে বেরিয়ে এল — ‘কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া আমার ভাই ধনরে কইও নাইয়র নিত আইয়া’।

ইয়েস, মীরা দেব বর্মণ !

পন্ডিত ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেওয়ার পর কীর্তন ও ঠুমরীর শিক্ষাপর্ব সঙ্গীতাচার্য ধীরেন্দ্রনাথ দেবের কাছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতসহ গানের আরো অনেক ধারাতেই মীরার অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্য ছিল।

স্বামী-পুত্রের জনপ্রিয়তায় অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে মীরার নাম। বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে, দোল দিল কে বীণায়, কেন আলেয়ারে বন্ধু ভাবি, বাঁশী তার হাতে দিলাম, শোনো গো দখিন হাওয়া, বিরহ বড় ভাল লাগে, ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা, কালসাপ দংশে আমায়, কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া, কী করি আমি কী করি, না আমারে শশী চেয়ো না, রাধার ভাবে কালা, আমি তাগডুম তাগডুম বাজাই – শচীনকত্তার এইসব কালজয়ী গান সৃষ্টিই হ’ত না যদি না মীরার অমন একখানা লিরিক্সের হাত থাকত! গানের কথায় চিত্রকল্প আঁকা খুব সহজ কাজ নয়। মীরা কী অনায়াসে তৈরি করেছেন এক একটি অসামান্য লিরিক্যাল অবয়ব! যেমনঃ

“নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক
পায়েল খানি বাজে
মাদল বাজে সেই শান্তিতে
শ্যামা মেয়ে নাচে…”

কৃষ্ণকায়া এক রমনীর পা নিয়ে এমন লিরিক্স ক’জন গীতিকার লিখেছেন জানা নেই।

মীরা শেষ জীবন কাটিয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীনতায়, একটি বৃদ্ধাশ্রমে। আর.ডি. যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন মীরা ছেলের কাছেই ছিলেন সান্তাক্রুজের বাড়িতে। পুত্রশোক তাঁকে পুরো শেষ করে দেয়। এমতাবস্থায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় আদ্যন্ত কেরিয়ার-সচেতন পুত্রবধূ অতি সন্তর্পণে তাঁকে রেখে আসেন ওল্ডেজ হোমে। ২০০৭ এর ১৫ ই অক্টোবর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়! ত্রিপুরা সরকার মীরা দেববর্মণকে কোনো একটা সাম্মানিক পুরস্কার দিতে গেলে সান্তাক্রুজের বাড়িতে তাঁর খোঁজ মেলে না।

বহুকষ্টে অনেক খুঁজে সেই বৃদ্ধাশ্রমে পাওয়া যায় অশীতিপর মীরাকে। এমনকি বৃদ্ধাশ্রমের মালিকও সেদিনই প্রথম জানতে পারেন যে তার বাড়িতে ধুঁকে ধুঁকে এতগুলো বছর কাটিয়ে দিয়েছেন অসংখ্য টাইমলেস গীতিকবিতার স্রষ্টা মীরা দেববর্মণ!

কৃতজ্ঞতা ::– দেবরাজ রায়।

More from CultureMore posts in Culture »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.