Press "Enter" to skip to content

মীজানুর রহমান ১৯৪৬ সালেই বের করলেন হাতে লেখা পত্রিকা ‘মুয়াজ্জিন’, এই কলকাতা থেকেই…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ মী জা নু র র হ মা ন

বাবলু ভট্টাচার্য ; তিনি জন্মেছিলেন ঢাকা মহানগরীর অদূরে, বিক্রমপুরে। কিন্তু কয়েকমাস বয়স থেকেই হয়ে পড়েন কলকাতার বাসিন্দা। শৈশব-কৈশোরের অনেকটাই কেটেছে কলকাতায়। অর্থাৎ অবিভক্ত বাংলার ঐ মহানগরীতেই তার চেতনার উন্মেষ।

বাবা ফজলুর রহমান কাজ করতেন কলকাতায়। জন্মের পর বাবার সঙ্গে কলকাতা গেলেন। ভর্তি হলেন বিখ্যাত মিত্র ইনস্টিটিউটে ১৯৪০ সালে।

শৈশব থেকে ধীরস্থির মানুষ মীজানুর রহমান ১৯৪৬ সালেই বের করলেন হাতে লেখা পত্রিকা ‘মুয়াজ্জিন’, কলকাতা থেকেই। হাতে লেখা পত্রিকা দিয়ে পত্রিকা-সম্পাদক হিসাবে তার অভিযাত্রার শুরু।

১৯৪৭ সালে ভয়াবহ দাঙ্গা ও উপমহাদেশ বিভক্তির সময়ে বাবার সঙ্গে চলে আসেন পূর্ব বাংলায়। আরমানীটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পড়াশোনা যাই করেন, মননের গভীরে রোপিত বীজ, পত্রিকা কেবলই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। তিনিও সাড়া দিলেন। বের হলো ১৯৪৯ সালে মুয়াজ্জিনের পরিবর্তিত রূপ, পূর্ব বাংলার প্রথম কিশোর মাসিক পত্রিকা ‘ঝংকার’।

উচ্চ মাধ্যমিক শেষে তিনি ভর্তি হলেন ঢাকা আর্ট কলেজে, এখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারু ও কলা বিভাগে। কিন্তু বর্ণান্ধতার কারণে চারুকলায় অধ্যয়ন শেষ করতে পারেননি। তবে নতুন উদ্যমে শুরু করলেন নতুন অভিধায় নতুন পত্রিকা প্রকাশের পরিকল্পনা।

১৯৫১ সালে বের করেন রম্য, সাহিত্য ও বিনোদন পত্রিকা ‘রূপছায়া’। এটি সম্পাদনা করেন প্রায় ১০ বছর। পত্রিকাটি ছিল তখনকার পূর্ব বাংলার জনপ্রিয় পত্রিকা। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা লেখকের লেখাসহ নায়ক-নায়িকাদের সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হতো এতে। তখনকার তরুণ অনেক লেখকের লেখা নিয়ে প্রেম সংখ্যা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

যে পত্রিকার নামের মধ্য দিয়েই তার পরিচয়ের যাথার্থ্য নিরূপিত হয়ে থাকে— সেই ‘মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা’-র প্রকাশ ১৯৮৩ সালে। পরম নিষ্ঠার সঙ্গে পত্রিকার প্রতিটি লেখার দুই থেকে তিনবার প্রুফ দেখতেন। তার কোনো সহকারী ছিল না, স্ত্রী নূরজাহান বকশী ছাড়া। পত্রিকার যাবতীয় কাজ তিনি নিজেই করতেন। সঙ্গে থাকতেন স্ত্রী, সবসময়, ছায়ার মতো।

মীজানুর রহমানের ছিল ভয়ংকর হাঁপানি। একেক সময়ে হাঁপানিতে তিনি এতটা কাবু হয়ে যেতেন, দেখে মনে হতো এইবার শেষ। কাশতে কাশতে মানুষটি নুয়ে যেতেন, কিন্তু ইনহেলার টেনে আবার দাঁড়াতেন। মুখের স্নিগ্ধ হাসি দেখে বোঝাই যেত না এই মানুষটি কিছুক্ষণ আগে শরীরের সঙ্গে কী লড়াইটা না করেছেন।

তার জীবিতাবস্থায় পত্রিকার আশিটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। তার লক্ষ্য ছিল প্রচলিত সাহিত্যিক বিশ্বাসে প্রভাবিত না-হয়ে একটি উন্নতমানের সাময়িক পত্রিকা উপহার দেওয়া।

নিয়মিত সংখ্যা ছাড়াও পত্রিকাটির কতগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। যেমন- ‘আহসান হাবীব সংখ্যা’ (১৯৮৫), ‘বৃক্ষ সংখ্যা’ (১৯৮৬), ‘কামরুল হাসান সংখ্যা’ (১৯৮৭), ‘রশীদ চৌধুরী সংখ্যা’ (১৯৮৭-৮৮), ‘পক্ষী সংখ্যা’ (১৯৮৯), ‘বৃক্ষ ও পরিবেশ সংখ্যা’ (১৯৯১), ‘শামসুর রাহমান সংখ্যা’ (১৯৯১), ‘গণিত সংখ্যা’ (দুই খণ্ড, ১৯৯৫), ‘বিদ্যাসাগর সংখ্যা’ (১৯৯৭), ‘নদী সংখ্যা’ (১৯৯৯)।

প্রত্যেকটি সংখ্যায় সম্পাদকের বিচিত্র আগ্রহ ও কৌতূহলের স্বাক্ষর লক্ষ করা যায়।

২৬ জুন ২০০৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মীজানুর রহমান ১৯৩১ সালের আজকের দিনে (১৯ ফেব্রু) মুন্সিগঞ্জের টোল বাসাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.