Press "Enter" to skip to content

মিঠুর উদ্যোগে কচুখালি তে ত্রাণ বিতরণ…..।

Spread the love

রূপা মজুমদার : সম্পাদক : (নবকল্লোল ও শুকতারা ম্যাগাজিন) ক্যানিং হয়ে চুনোখালি। ওখান থেকে ভুটভুটি করে ঘন্টা দেড়েক লাগে কচুখালি পৌঁছতে। অনেকগুলি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ থাকায়, ফি সপ্তাহেই কেউ না কেউ ত্রাণ পরিষেবা নিয়ে সুন্দরবন যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল গেলে, একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় যাব, যেখানে কম মানুষ পৌঁছোন। তাই বন্ধু দেবাশীষ সরকার যখন কচুখালি যাওয়ার কথা শোনায়, সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলাম, এখানেই যাব।

কোথাও গিয়ে শুধু কাজটুকু সেরে ফিরে আসা, এইটুকুতে আমার মন ভরে না, বরং তাদের সঙ্গে দুদণ্ড সময় কাটিয়ে, তাদের কথা শুনতে, তাদের কথা জানতে ভালো লাগে।

২৮০ টা মতো পরিবার থাকে এই দ্বীপটিতে। মূলত কৃষিজীবী এবং মৎসজীবী। মুগডাল এবং বিভিন্ন আনাজের চাষ। কিন্তু নোনা জল ঢোকায় জমিতে বছর চারেক ফলন হবে না ভালো। পুকুরের জল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাছ চাষের সম্ভাবনাও কম। তাহলে রুজি রোজগার? জানা নেই!
মাটির ঘরে দাওয়া এখনও কাদায় মাখামাখি। নোনা লেগে গেছে যে। শুকনো হতেই চাইছে না। প্রায় সাপ চলে আসছে। এমনকি গোখরো সাপের দেখাও মিলছে ঘরের মধ্যে। সন্ধ্যে হতে না হতেই মশার ভনভনানি।

কাঠের উনুনে রান্না। গ্যাস পৌঁছোয় নি। এক কিলোমিটার অন্তর ডিপ টিউবওয়েল করে দিয়েছে সরকার। প্রায় দশ ফুট গভীর। কিন্তু তার মধ্যেও নোনা জল! অবশ্য বেশ কিছু বাড়িতে ফিল্টার বসানো আছে। কিন্তু তাতেও যে জলের নোনতা স্বাদ কাটছে না।

বছর তিনেক হল ইলেকট্রিক কারেন্ট এসেছে। কিন্তু কোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। অসুখ করলে যেতে হয় গোসাবা ব্লকে। এদের বেশির ভাগেরই শুনলাম চর্মরোগ। শুনে মনে হল আর্সেনিক জনিত সমস্যা। এখানে কোন পুলিস ফাঁড়ি নেই। আছে সেই গোসাবাতে। সুতরাং পঞ্চায়েত সদস্য এবং বুথ সভাপতির প্রতাপ সহজেই অনুমেয়। অবশ্য ইয়াশ পরবর্তী সময়ে সরকারি ত্রাণ শিবির পরিষেবায় এরা বেশ সন্তুষ্ট।

প্রাথমিক বিদ্যালয় খান দশেক আছে, এবং তিনটি উচ্চবিদ্যালয় আছে। মেয়েদের পড়া চালিয়ে যাওয়ার হার যথেষ্ঠ ভালো।


কলেজে পড়তে গেলে যেতে হয় ক্যানিং। আমরা যেই মেয়েটির মাধ্যমে এখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম, সেই মিঠু ক্যানিং থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়ে নার্সিং পড়েছে। কলকাতায় বড় জায়গায় নার্সিং করে, ওর স্বামী ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। সুন্দর স্বচ্ছল পরিবার। মিঠুই ওর বাপের বাড়ির গ্রামে আজ আমাদের নিয়ে গেছিল।

কী করুন পরিস্থিতির মধ্যে এই মানুষগুলো দিন কাটাচ্ছে চোখে না দেখলে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। বাঁধের ওপর বাঁধানো রাস্তার কাজ কিছুটা হয়ে বন্ধ হয়ে আছে। বাকি রাস্তা কর্দমাক্ত। সাপে জলে কাদায় মানুষে সব একাকার! অথচ কী অসাধারণ আন্তরিকতা। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লেবুর শরবত, তারপর চা বিস্কুট। দুপুরে ঢেঁকি চালের ভাত, ডাল, পটল ভাজা, চিংড়ি মাছের তরকারি, ছোট পার্শে মাছের ঝাল, দিশি মুরগির মাংস। ভাবা যায়! কোথা থেকে পায় এরা এত প্রাণশক্তি জানি না। কই আমরা তো পাই না।

ফেরার সময় সকলে মিলে আমাদের সঙ্গে জেটি পর্যন্ত এলো। আর মিঠু? তার মুখ চোখ আনন্দে উজ্জ্বল। প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মাঝেও লেখাপড়া শিখে , স্বনির্ভর হয়ে আজ সে তার গ্রামের জন্য কিঞ্চিৎ ত্রাণ পরিষেবার ব্যবস্থা করতে পেরেছে। গ্রামের সকলের মধ্যমণি যে আজ সে!

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *