জন্মদিনে স্মরণঃ বি প্ল বী লো ক না থ ব ল
বাবলু ভট্টাচার্য : চট্টগ্রামের যুব সমাজ ব্রিটিশ রাজশক্তিকে উৎখাত করার জন্যই হাতে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র। এ কোন এ্যাডভেঞ্চার নয়, তারা চেয়েছিল আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বদেশের মুক্তি। আত্মত্যাগের এ আন্দোলনে মাষ্টারদা সূর্য সেনের যে কয়জন সহযোগী মৃত্যুর আন্দোলনে শরীক হয়েছিলেন তাদের মাঝে জালালাবাদ যুদ্ধের সেনাপতি লোকনাথ বল অন্যতম।
লোকনাথ বল চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে বিপ্লবী ছাত্রদের সংস্পর্শে এসে স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হন। নির্মল সেন, যশোদা চক্রবর্তী প্রমুখ বিপ্লবী ছাত্রদের সান্নিধ্যে তাকে চরমপন্থী বিপ্লবীতে পরিণত হতে উৎসাহিত করে।
মাস্টারদার নির্দেশে লোকনাথ বল ও অনন্ত সিংহ চট্টগ্রাম বিদ্রোহের প্রস্তুতির বিষয়ে পরিকল্পনায় অংশ নেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের সফলতার পর ২২ এপ্রিল ভোরে মাষ্টারদার নেতৃত্বে ৫২ জন বিপ্লবী অম্বিকা চক্রবর্তী, নির্মল সেন এবং লোকনাথ বলের নেতৃত্বে জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেন। বিকেল চারটার দিকে ব্রিটিশ বাহিনী জালালাবাদ পাহাড় ঘেরাও করে ফেলে। আসন্ন সংঘর্ষের বিষয়ে চিন্তা করে সমগ্র বাহিনীকে পরিচালনা করার জন্য মাস্টারদা সূর্যসেন কর্তৃক লোকনাথ বলকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
জালালাবাদ সংঘর্ষের পর বিপ্লবীদের কাছ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেক পথ ঘুরে লোকনাথ বল গোপনে ঢাকা হয়ে কলকাতা যান।
অনন্ত সিংহ চন্দননগরে ব্রিটিশদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। অনন্ত সিংহের আত্মসর্ম্পণের পর মাস্টারদা কাছ হতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ও নির্দেশ নিয়ে লোকনাথ বল চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে ভূপেন কুমার দত্তের সহায়তায় চন্দননগরে আশ্রয় নেয়া বিপ্লবীদের সাথে মিলিত হন। সে সময়ে একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বিশ্বাসঘাতকতা করে চন্দননগরের বাড়ি সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পুলিশকে জানিয়ে দেয়।
কলকাতা পুলিশ কমিশনার টেগার্টের নেতৃত্বে বহু সংখ্যক সশস্ত্র ইংরেজ সার্জেন্ট এবং শ্বেতাঙ্গ সিপাহী এ বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং বিপ্লবীদের সাথে প্রচন্ড গুলি বিনিময় হয়। এ সংঘর্ষে বিপ্লবী মাখন ঘোষাল শহীদ হন। গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল ও আনন্দ গুপ্তকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৩২ সালের ১ মার্চ বিচারে লোকনাথ বলকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তারের সাজা দেওয়া হয়।
১৯৪৪ সালে লোকনাথ বল মুক্তিলাভ করে বামপন্থী নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রতিষ্ঠিত র্যাডিকেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৪৬ সালে এ দলের মনোনয়নে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। সে সময়ে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি কলকাতা সিটি কর্পোরেশনে দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে চাকরি গ্রহণ করেন।
লোকনাথ বল ১ মে ১৯৫২ হতে ১৯ জুলাই ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কলকাতা পৌর সংস্থায় ২য় উপকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৪ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ সালে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লোকনাথ বল মৃত্যুবরণ করেন।
বিপ্লবী লোকনাথ বল ১৯০৮ সালের আজকের দিনে (৮ মার্চ) চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর ধোরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment