Press "Enter" to skip to content

‘মায়াডোর’ সিনেমায় অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে পাঁচ দিন কাজ করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার….।…।

Spread the love

দেবজিৎ কুন্ডু : কলকাতা, ২৩ জুলাই, ২০২৫।  প্রথম ছবিতে সুযোগ।এক ডাক্তারের চরিত্রে অভিনয়। খুব দুরুদুরু বুকে নব্য যুবকটি পা রাখলেন স্টুডিও ফ্লোরে।পরিচালক শট বুঝিয়ে দিলেন। চারপাশ থেকে আলো জ্বলে উঠল। এই প্রথম নবাগত অভিনেতা দেখলেন তাঁর সামনের অভিনেত্রীর মুখ। সেই সময়কার বিখ্যাত প্রভা দেবী। পাশের ভিড় থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘এ কলির ভীমকে কোত্থেকে আনলেন? পায়ে শেকল বেঁধে রাখুন। নইলে যে ঝড় উঠলে উড়ে যাবে।’ তখন ছেলেটি সত্যিই খুব রোগা ছিলেন। প্রচণ্ড অপমানিত হলেন ফ্লোরের মধ্যে শুটিং দেখতে আসা লোকজনের সামনে। তবুও গায়ে মাখলেন না কিছু। পরিচালক স্টার্ট ক্যামেরা বলার সঙ্গে সঙ্গেই এক কদম এগিয়ে গেলেন অভিনেত্রীর দিকে। কিন্তু পরিচালকের অ্যাকশন বলার আগেই প্রভা দেবী ছেলেটির হাতটা আচমকা ধরে ফেললেন। ‘আরে এই ছেলে আমার ডাক্তারি পরীক্ষা করবে কী? ওর নিজেরই তো হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।’ চারপাশ থেকে সবাই হো হো করে হেসে উঠল। পরিচালক সেদিন আর দৃশ্যটি গ্রহণ করেননি। ছবিটির নাম ‘মায়াডোর’। অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে এই ছবিতে পাঁচ দিন কাজ করেছিলেন যিনি তিনি মহানায়ক উত্তম কুমার। তবে ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। তখন অবশ্য তিনি উত্তমকুমারও ছিলেন না, তাঁর নাম তখন অরুণকুমার।আর একবার হারানো সুরের শুটিং চলছে, তখন টালিগঞ্জ কী ছিল তা এখন চিন্তার অতীত। বাস একটাই চলে, ৬ নম্বর। বিরাট বিরাট গাছে ঢাকা অঞ্চল। কেউ কোথাও নেই। রাতে সে জায়গা খুব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত। অজয় করের পরিচালনায় শুধু এক বার বলো গো তুমি আমার গানের শুটিং হবে। প্রয়োজন দুটি মালার। কিন্তু অজয় কর হঠাত্ জানতে পারেন, দুটো মালা লাগবে, কিন্তু একটা রয়েছে। এদিকে মেজাজি মিসেস সেন যদি জানতে পারেন যে তাঁকে মালা না দিয়ে উত্তমকে দেওয়া হয়েছে, তাহলে রাগারাগি করবেন। এদিকে, উত্তম কুমার কে মালা না দিলে তিনি যদি আবার কিছু মনে করেন! অতঃপর একজনকে পাঠালেন মালা জোগাড় করতে। তখন টালিগঞ্জে বাজার ছিল না। কাছের বাজার বলতে সেই লেক মার্কেট। যাই হোক, অবশেষে মালা এল। শুটিংও শেষ হল। পরবর্তী কালে অজয় কর দুঃখ করে বলেন, আমি আজও উত্তম কুমারকে জানাতে পারিনি যে সেদিনের মালাটি ক্যাওড়া তলা শ্মশান থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। শুটিং যাতে ভেস্তে না যায় তাই সেদিন চুপ ছিলেন অজয় কর।এর পর একদিন উত্তমের জীবনে ঘনিয়ে এলো শেষ শুটিংয়ের দিনটা। সেদিনটাও ছিলো আজকের মতোই ২৩ জুলাই।সাল ১৯৮০।সকাল সকাল স্নান সেরে পূজা-অর্চনা করে বেরোলেন শুটিংয়ে। এগিয়ে গেলেন গাড়ির দিকে। গাড়িতে উঠতে গিয়ে যা দেখলেন, তাতে তিনি স্তম্ভিত, বাকরুদ্ধ।এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! শুটিংয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে যে জিনিসটা সতেরো বছর ধরে তাঁকে রিলিফ দিয়ে এসেছে, আজ তা উধাও! খোঁজ খোঁজ শুরু হলো। শেষে বোঝা গেল তাঁর প্রিয় টেপ রেকর্ডারটি চুরি গিয়েছে। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়লেন তিনি। এতটাই বিমর্ষ হয়ে পড়লেন, মনে হলো প্রিয়জন হারানোর থেকেও বেশি আঘাত পেয়েছেন এই টেপ রেকর্ডারটি চুরি যাওয়ায়।শুটিংয়ের আগে প্রতিদিন নিয়ম করে এই টেপ রেকর্ডারে কাছে নিজেকে মেলে ধরতেন। নানা স্মৃতি জড়িয়ে! মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে এভাবেই হয়তো আগেই তাঁর স্মৃতি ছেড়ে চলে যায়। সেই ইঙ্গিত ঘুণাক্ষরে বোঝা যায়নি।এত মন খারাপের মাঝেও সে দিন ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির ফ্লোর সেটে হাজির হয়েছেন। টেপ রেকর্ডারের চুরি যাওয়াটা কোনওমতে মেনে নিতে পারছিলেন না উত্তম কুমার। অন্যমনস্ক ছিলেন সারাটা দিন। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমতো করেননি। কিন্তু এ দিনই যে তাঁর জীবনের শেষ শুটিং কে বা জানতো! তাঁর শেষ সংলাপ, “আমিও দেখে নেবো, আমার নাম গগন সেন…”। এই সংলাপ বলতে বলতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন উত্তম কুমার।অসুস্থ শরীরে বাড়ি এলেও নিজেকে বিছানায় ফেলে রাখেননি। বন্ধু দেবেশ ঘোষের কথা রাখতে সে দিন রাতে তাঁর বাড়িতে হাজির হন উত্তম কুমার। গাল জুড়ে অম্লান হাসি। যন্ত্রণার ছিটে ফোঁটাও নেই সেই মুখে। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে মাঝ রাতে যখন বাড়ি ফেরেন, ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তারপর একেবারে শয্যাশায়ী। একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। পাঁচ-পাঁচটা ডাক্তারের নিরলস প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পরের দিন ২৪ জুলাই রাত ৮টা ৩২ মিনিটে, জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে সকল ‘মায়াডোর’ কাটিয়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন বাঙালির হার্টথ্রব উত্তম কুমার। মহানায়কের জীবনটাই যেন পুরো একটা সিনেমার গল্প। আজ তিনি নেই, পরে রয়েছে শুধু তাঁর উত্তম স্মৃতি। তবে যা কিছু তিনি দিয়ে গেছেন, তা আর দ্বিতীয়টি গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসের প্রাক্কালে ভারাক্রান্ত মনে তাঁকে জানাই শত কোটি প্রনাম।

প্রবীর রায় পরিচালিত “যেতে নাহি দিব” সিনেমাতে এই দৃশ্যগুলো আছে। আইনী ঝামেলার জন্য এই সিনেমাটি মুক্তি পেতে বহু সময় নিয়ে ছিল।

সহায়তায় – প্রবীর রায়।

 

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.