Press "Enter" to skip to content

মান্না দে’র গাওয়া তার লেখা ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ ২০০৪ সালে বিবিসির বিচারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানে ঠাঁই পেয়েছে….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ গৌ রী প্র স ন্ন ম জু ম দা র

বাবলু ভট্টাচার্য : লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’ গানটি হয়তো আপনি শুনে থাকবেন। অথবা, মান্না দে’র কন্ঠে ‘তীর ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়’, কিশোর কুমারের ‘আকাশ কেন ডাকে’, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘জীবনে যদি দ্বীপ জ্বালাতে নাহি পারো’ কিংবা ‘জানি একদিন আমার জীবনী লেখা হবে’— গানগুলো কি মনে করতে পারছেন?

আরও আছে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের— ‘মেঘ কালো আঁধার কালো’, ‘আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’, ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’, ‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই’ ইত্যাদির কথা মনে পড়ে?

হ্যাঁ, বলছিলাম বিখ্যাত কালজয়ী গানের স্রষ্টা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথা।

তার পিতা হরিপ্রসন্ন মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর বিজ্ঞান অনুষদে অধ্যাপনা করেছেন। শৈশবে ঢাকায় এলেও কোন স্মৃতি মনে নেই।

গৌরীপ্রসন্ন যখন ‘শোন একটি মুজিবর’ লেখেন তখন তিনি ইংরেজিতে মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। এর কুড়ি বছর আগে ১৯৫১ সালে বাংলায় এমএ করেছেন। বাল্যকালে সংগীতচর্চা শুরু। প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র থাকাকালে সুরকার অনুপম ঘটকের কাছে গান শিখেছেন। প্রিয়শিল্পী ছিলেন শচীনদেব বর্মণ ও আব্বাসউদ্দিন। তাদের গানের জলসার নিয়মিত শ্রোতা ছিলেন। সে সুবাদে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে শচীনদেব বর্মণের সঙ্গে।

ভেবেছিলেন অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করবেন, পিতার মতোই অধ্যাপনা বেছে নেবেন। কিন্তু শচীন কর্তা তাকে যেন বেঁধে দিলেন আষ্টেপৃষ্ঠে গানের জগতে। কিন্তু ছিলেন তিনি বাঁধন হারা। গানপাগল হলেও গায়ক হিসেবে নিজের আত্মপ্রকাশে আগ্রহী ছিলেন না। শচীন কর্তার অনুরোধে গান লেখা শুরু, তারপর আর থেমে থাকেন নি। নিতান্ত সাধাসিধে, পাজামা- পাঞ্জাবী পরিহিত এক বলিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। উচ্চতায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সমান বলেই হয়তো ঘনিষ্ঠতাও ছিল বেশি। একসঙ্গে কাজও করেছেন।

সমকালে ছিলেন তিনি গীতিকার শ্রেষ্ঠ। তার গানের বাণী কখনো একঘেঁয়ে নয়। ভাব, ভাষা, শব্দ, ছন্দ ও রচনাশৈলী নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গেছেন। একই ফর্মে বেশিদিন গান লেখেননি। এ ব্যাপারে ছিলেন সতর্ক, সচেতন।

গৌরীপ্রসন্ন ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। সবুজের মেঠো ছায়াপথ নয়, দেখেছেন বিধ্বস্ত দেশ, পিতৃস্মৃতি হাতড়াতে ঘুরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেও। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সহায়তার জন্য।

মান্না দে’র গাওয়া তার লেখা ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ ২০০৪ সালে বিবিসির বিচারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানে ঠাঁই পেয়েছে।

প্রায় এক দশক ধরে তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। কিন্তু লেখা থামাননি। ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট ৬১ বছর বয়সে বোম্বের এক হাসপাতালে পরলোক গমন করেন গৌরীপ্রসন্ন।

মৃত্যুর আগে হাসপাতালে লিখেছিলেন শেষ গান– ‘এবার তাহলে আমি যাই, সুখে থাক ভালো থাক, মন থেকে এই চাই।’ কন্ঠ দেন মুহাম্মদ রফি।

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯২৫ সালের আজকের দিনে (৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পাবনার গোপালনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.