Press "Enter" to skip to content

মানুষের সেবায় মিলন সমিতি। পর্যটন শিল্প কে উৎসাহ দিতে সমিতির সদস্যরা সুন্দরবনের জঙ্গলে………..

Spread the love

উমাপতি দত্ত : সম্পাদক মিলন সমিতি, কলকাতা, ৮, অক্টোবর, ২০২০। কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা সংলগ্ন হৃষিকেশ পার্কের মিলন সমিতি।যে সমিতির অবস্থান কলকাতার বাদুরবাগানে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বাড়ীর ঠিক বিপরীতে। মিলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৮ সালে। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মুখ অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতাদের হাত ধরে। সেই প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজের মধ্য দিয়ে সমিতির সদস্যরা তাদের প্রিয় মিলন সমিতিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।


সম্প্রতি কোভিড- ১৯ অতিমারীর সময় লকডাউন কালে দরিদ্র অসহায় নিরন্ন মানুষের মুখে অন্নদান, কিংবা আম্ফান নামক ঘূর্ণিঝড় মহাসাইক্লোনে আক্রান্ত অঞ্চলে ত্রাণ প্রদান, গঙ্গাসাগরের মনসাদ্বীপের রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক মহাশয় স্বামী স্তাবপ্রিয়ানন্দ মহারাজের উদ্যোগে হঠাৎ করে যারা গৃহহীন বা গৃহে আচ্ছাদন হীন হয়ে পড়েছিলেন, তাদের প্রায় ২০০ পরিবারকে যথাযথ সাহায্য করার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। মিলন সমিতির একার পক্ষে এই বৃহৎ কাজ করা সম্ভবপর ছিলো না। এতসব কিছু করার জন্য গাঁটছড়া বাঁধি অন্য সমগোত্রীয় সংগঠন – ইনকাম ট্যাক্স এমপ্লয়িজ ফেডারেশন এন্ড জয়েন্ট কাউন্সিল অফ্ অ্যাকশন, সেন্ট পলস প্রাক্তনী (১৯৮০ব্যাচ), Food Trotters এর মতো সহযোগীদের সাথে।

নাইলনের জাল দিয়ে ঘেরা।


গতমাসের ২৬ শে সেপ্টেম্বর পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ২০১ তম জন্ম বার্ষিকীতে রক্তদান শিবির এবং বিদ্যাসাগর মহাশয় কে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন শিল্প। গত মার্চ মাস থেকেই পর্যটন শিল্প ধ্বংসের পথে।
এত সবের মধ্যেও আমরা সমিতির সভ্যরা সিদ্ধান্ত নিলাম, এই অতিমারি তথা আমফানে বিপর্যস্ত পর্যটন শিল্পকে উৎসাহ দিলে কেমন হয়!

সুন্দরবন এ সূর্যাস্ত।


সেইমত বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে, আমরা সমিতির সদস্যরা আমাদের রাজ্যের সুন্দরবনকে বেছে নিলাম। মিলন সমিতির সদস্যদের অনেকেই পরিবার নিয়ে, বাকিরা একক ভাবে মোট ১৫ জন এই মাসের ২রা অক্টোবর, সকাল ৮ টা নাগাদ আমরা পারি দিলাম সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে বড় বাসে করে সামাজিক দুরত্ববিধি মেনে। বেলা ১১:৩০ নাগাদ পৌঁছালাম সুন্দরবনের অন্যতম দ্বারপ্রান্ত ‘গদখালি’ তে।

বেকন বাংলো।


আমাদের সাদর আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সুন্দরবন এক্সপ্লোরারের রাম দা অপেক্ষা করছিলেন লঞ্চ নিয়ে, যার সাথে আমার পরিচয় প্রায় ১০/১২ বছর ধরে। রাম দা লঞ্চে ওঠার সাথে সাথে বিভিন্ন রকমের ছোট মাছ ভাজা তার সাথে গরমাগরম চায়ের আয়োজন। লঞ্চ ভ্রমণের সাথে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে মাছ ভাজা তার সাথে চায়ের স্বাদ এক কথায় স্বর্গীয় অনুভূতি। প্রথমেই গদখালী র বিপরীতে ‘গোসাবা’ তে হ্যামিল্টন সাহেবের বাংলো, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত ‘বেকন’ বাংলো দর্শন করে আমরা সবাই আবার লঞ্চে উঠলাম পাখিরালয়ের উদ্দেশ্যে।

যেখানে আমাদের সকলের রাত্রি যাপনের আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের লঞ্চে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয় দু রকম তাজা মাছের পদ সহযোগে। যা ছিল লোভনীয় ও অত্যন্ত সুস্বাদু। সেইদিন বিকাল বেলায় পাখির জঙ্গল থেকে ঘুরে এসে সন্ধ্যাবেলায় একবারে হোটেলে প্রবেশ করলাম। দ্বিতীয়দিন ৩ রা অক্টোবর বেড টি র পর তৈরি হোয়ে আবার আমরা লঞ্চে উঠলাম। সজনেখালি টাইগার রিজার্ভের অফিসে গিয়ে জঙ্গল এলাকার প্রবেশের অনুমতি নেওয়ার জন্য টাকা জমা দেওয়া হলো এবং সাইট সিন করার জন্য গাইড নেওয়া হলো। এরপর সকালের জল খাবার খাওয়ার সাথে জল ভ্রমণ শুরু হলো।

মিলন সমিতির সদস্যদের ডাবের জলে তৃষ্ণা নিবারণ।

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি এই অতিমারীর সময় জঙ্গলের কোনো দ্বীপে নেমে ওয়াচ টওয়ার এ ওঠার অনুমতি জঙ্গল কতৃপক্ষ দিচ্ছেন না। তবে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে খারিপথে খাঁড়িপথে সুধন্যখালি, দো বাঙ্কি, পঞ্চ মুকানি সহ ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বিভিন্ন রূপ দর্শন সত্যিই অনন্য অভিজ্ঞতা। কেরালাতে ব্যাক ওয়াটার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সুন্দরবনের খাঁড়ি ভ্রমণ অনেক বেশি রোমাঞ্চে ভরা এবং আকর্ষণীয়। দুপুরের আহারের সময় সুন্দরবনের বিখ্যাত কাঁকরা র জিভে জল আনা সুস্বাদু রান্না।

কুমির দর্শন।

সন্ধ্যাবেলায় স্থানীয় আদিবাসীদের নিয়ে নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন রাম দা।
এর মধ্যেই আমরা এলাকার মানুষের কাছে জানতে পারলাম বাঘের হানায় নিহতদের পরিবারের করুন কাহিনী।

ভ্রমনার্থীদের জন্য এলাকার মহিলাদের নৃত্যানুষ্ঠান।

কামোট এর কামড়ে আক্রান্তদের দুর্দশার কথা, আমরা মিলন সমিতির সদস্যরা শপথ নিলাম ঐ এলাকার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী দুজন কামোট আক্রান্ত কে ক্রাচ এবং একজন বাঘের হানাতে আক্রান্তর স্ত্রী কে জনতা স্টোভ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সামগ্রী ইতিমধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জঙ্গলের মধ্যে হরিণ শাবক।

শেষদিন ফেরার সময় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমরা আবার লঞ্চে উঠলাম, দুচোখ ভরে বাইরের দৃশ্য দেখলাম এক সময় আমাদের চোখের সামনে ধীরে ধীরে সূর্য দেব অস্তমিত হলেন। আমাদের সকলের মনটাও ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।

মনে মনে আশ্বস্ত হলাম গত ছয় মাসের কর্মহীনতা কাটিয়ে পশিমবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিছু অধিবাসীদের মুখে হাসি উপহার দিতে পেরে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.