মধুমিতা শাস্ত্রী, ৭ অক্টোবর, ২০২০ঃ অতিমারির চোখ রাঙানি যেমন চলছে পাশাপাশি ক্যানিং মহকুমা শহরে মাতৃবন্দনার প্রস্তুতিও চূড়ান্ত লগ্নে পৌঁছেছে। যদিও কলকাতা বা উত্তর ২৪ পরগনার তুলনায় এদিককার পরিস্থিতি অনেক ভালো তবু্ও
এবারে সাজো সাজো রব অন্যান্য বছরের তুলনায় কমই। কারণ দীর্ঘ লকডাউন এবং ছ’ মাসেরও বেশি সময় লোকাল ট্রেন না চলায় সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট পুজোগুলির বেশিরভাগেরই এখনও বাঁশ বাঁধা হয়নি। তবে বড় পুজোগুলির প্রস্তুতি ঠিকঠাকই চলছে।

পুজোর যে আর পনেরদিনও বাকী নেই তা কিন্তু চতুর্দিকের পরিবেশ দেখলে বোঝার উপায় নেই। বিগত বছরগুলিতে পুজোর তিনমাস আগে থেকে প্যান্ডেল শুরু হয়ে যেত। মানুষের কেনাকাটা দুইমাস আগে থেকে শুরু হয়ে যেত। নিউজ চ্যানেলগুলি ৫০দিন আগে থেকে কাউন্ট ডাউন শুরু করে দিত আর সেই সঙ্গে আমাদের মনও। এবছর চিত্রটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। রোজ করোনায় আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা গুণতে হচ্ছে। কারই বা মন ভালো থাকে। আইপিই এর তথ্য অনুযায়ী ভারতের ৬০% মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। করোনা ভাইরাসের কারণে সংখ্যাটা আরও বাড়ছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার করা সমীক্ষা জানাচ্ছে, লকডাউনে ৮০% পরিবারের আয় কমেছে। এই অনাহারে অর্ধাহারে থাকা মানুষগুলি উৎসবে মেতে উঠবেন কীভাবে?

এমতো পরিস্থিতিতে পুজোকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাইছিলাম যে, এ বছরে পুজোর পরিকল্পনা কী? ক্যানিংয়ের মতো মফস্বল এলাকায় কলকাতার মতো না হলেও বেশকিছু বড় পুজো হয়। এখানকার নামকরা পূজাগুলি হলো মিঠেখালি সর্বজনীন, হসপিটাল পাড়া পুজো, ক্যানিং অঞ্চল অফিস গ্রামবাসীবৃন্দের পুজো, এবং সংহতি ক্লাবের পুজো। ক্যানিং ১নম্বর ব্লকে বিগত বছরগুলিতে ১৩০ থেকে ১৩৫ টির মতো পুজো হতো। এবছর সে সংখ্যাটা কমবে আর জাঁকজমক ফিকে হবে বলাই বাহুল্য।

মিঠেখালি সর্বজনীনের কর্ণধার তথা তৃণমূল কংগ্রেসের কো অর্ডিনেটর পরেশরাম দাস বলেন, তাঁদের পুজো জেলার বড় পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে সমস্তরকম সতর্কতা অবলম্বন করেই হবে এবছরের পুজো। মন্ডপের উপরটা উন্মুক্ত থাকছে। মন্ডপে প্রবেশের গেটে স্যানিটাইজেশন টানেল বসানো থাকবে। দর্শককে ওই টানেলের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করতে হবে মণ্ডপে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, তবে যারা মাস্ক পড়ে আসবেন না তাদেরকে মাস্ক দেওয়া হবে পুজো কমিটির পক্ষ থেকে।

শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকছে কিনা তা দেখার জন্য অতিরিক্ত ভলান্টিয়ার ও সিভিক পুলিস থাকবে। এদের এবছরের থিম ব্রহ্মার উৎস। দুর্গা প্রতিমা হবে সিটি গোল্ডের। অন্য বছরের তুলনায় বাজেট কমিয়ে এবছর পুজোর বাজেট হচ্ছে ১৫ লক্ষ টাকার মতো। কমিটির পক্ষ থেকে কিছু সমাজসেবামূলক কাজও করা হবে। করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন এবং অনেক গরিব অসহায় মানুষ যাদের ঘরে অন্ন নেই, বস্ত্র নেই, অনেক বৃদ্ধ, বাচ্চা যারা নতুন পোশাক কিনতে পারবেন না তাদের নতুন পোশাক বিতরণ করা হবে। এছাড়াও দুঃস্থ ছাত্রছাত্রী ও মুমূর্ষু রুগিদের আর্থিক সাহায্য করা হবে পূজাকমিটির পক্ষ থেকে।

ক্যানিংয়ের আর একটি বিখ্যাত পুজো হসপিটাল পাড়ার পুজো এ বছর ৬৮তম বৎসরে পদার্পন করল। এই পূজাকমিটির কর্ণধার তৃণমূল নেতা দলের জেলা ভাইস প্রেসিডেন্ট অর্ণব রায় বললেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে মণ্ডপের উপরিভাগ খোলা থাকছে’। তিনি জানান, প্রথমে এক সপ্তাহ অনেকটা কাজ এগিয়ে গিয়েছিল। তারপর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো উপরটা খোলা রাখার জন্য প্ল্যান কিছুটা চেঞ্জ হয়েছে। শারীরিক দূরত্ববিধি যাতে বজায় থাকে তার জন্য মার্ক করা থাকবে পুরো রাস্তা জুড়ে।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণের ব্যবস্থা থাকবে। করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে এবছর সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করছে পূজা কমিটি। সেই টাকায় অসহায় মানুষদের জন্য বস্ত্র বিতরণ করবেন। পুজোর শেষের দিকে অর্থাৎ প্রতিমা দর্শনের ভিড় কমে গেলে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে। এবছর তাঁদের পুজোর থিম করোনাসুর বধ।

দেবীদূর্গা অসুররূপী করোনাকে বধ করছেন — এভাবেই সেজে উঠবে মণ্ডপের অভ্যন্তর। বাঁকুড়ার ডোকরা শিল্পের মাধ্যমে অসংখ্য ডাক্তার, নার্সদের ত্যাগ তুলে ধরা হবে এই পূজা মন্ডপে। এদের এ বছরের বাজেট গতবছরের তুলনায় কমে হয়েছে ১০ লক্ষ টাকার মতো।
এদিকে ক্যানিং থানা সূত্রে খবর, স্বাস্থ্যবিধি ঠিকঠাক মেনে চলা হবে এরকম একটি সম্মতি পত্রে পুজো কমিটিগুলিকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হবে। যারা শর্ত লঙ্ঘন করবে তাদের পরের বছর পুজোর অনুমতি দেওয়া হবে না।

থানার সেই লোকবল নেই যে প্রতিটি মণ্ডপে নজরদারি চালাতে পারবে। তাই এই ব্যবস্থা। যদিও সব পুজো যে পুলিশের অনুমতি নিয়ে হয় তা নয়। গ্রামেগঞ্জে বহু পুজোই অনুমতির তোয়াক্কা করে না। এবছর ১ অক্টোবর পর্যন্ত ৭৮টি পুজোর অনুমতি চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে।
ফাইল চিত্র।
Be First to Comment