সঙ্গীতা চৌধুরী : কলকাতা, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। দেখতে দেখতে এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা আসন্ন। গত কয়েক বছর ধরে এই পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চরম সংশয় সৃষ্টি হয়। অতিমারির সময় এক বছর পরীক্ষা পুরোপুরি বন্ধই হয়ে যায়, তারপরের বছরে পরীক্ষা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয় কিন্তু শেষ অবধি স্বল্প সিলেবাসে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। গত দুই বছরের এই টানাপোড়েনের পর এ বছর ২৩ মার্চ ছাত্রছাত্রীরা আবার পূর্বের নিয়মেই পরীক্ষা দিতে চলেছে। তাই বহু ছাত্রছাত্রী একটু ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছে কারন মাঝে কিছুদিন পড়াশোনার স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে যাবার আগে তাদের এই মানসিক অস্থিরতা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের শেষ মুহূর্তে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটা খুবই জরুরি। তাই তারা সবরকম ভয় ও দ্বিধা কাটিয়ে কি ভাবে মানসিক তরতাজা থাকবে এবং শরীরকেই বা কি ভাবে ঠিক রাখবে সেই ভালো থাকার উপায় জানিয়েছেন দুই বিশেষজ্ঞ।
বিশিষ্ট মনোবিদ সোমদত্তা ব্যানার্জীর মতে,” ছাত্রছাত্রীদের মাথায় রাখতে হবে কোভিডের সময় পড়াশোনার ক্ষেত্রে যে অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা শুধু তার একার সমস্যা ছিল না, সারা বিশ্বের ছেলেমেয়েদেরকেই ঐ একই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। তাই যেটা ঠিকমত হয় নি সেই বিষয়টি নিয়ে আর না ভেবে ভবিষ্যতের লড়াইয়ের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। তবে এখন পড়াশোনা করার সময় যদি মানসিক উদ্বেগ ও চাপ বৃদ্ধি পায় তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে মানসিক উদ্বেগ শরীরের ওপর প্রভাব ফেলবে। আর শরীর এবং মন একটি অন্যটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেজন্য এসময় পড়াশোনা, খাওয়া- দাওয়া ও ঘুমের ক্ষেত্রে একটু নিয়ম মেনে চলতে হবে। একটা রুটিন অনুসরণ করে চললে খুব ভাল হয়। পরীক্ষার্থীদের জন্য আরও যেটা জরুরি তা হল ভোরবেলা একটু যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন করা। তবে একজন মনোবিদ এবং একজন শিক্ষিকা হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেব যে, কোন বিষয়ের পড়াই দীর্ঘ সময় ধরে পড়বে না। ছোট ছোট ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় পড়তে হবে। আর পড়ার মাঝে একটি ভাগ শেষ করে অন্য ভাগ শুরু করার আগে একটু বিরতি নিয়ে গান শোনা, টিভি দেখা বা খোলা হওয়ায় ঘুরে নিতে পারলে পড়াটা ভালো তৈরি হয়ে যাবে। এই পদ্ধতি না মানলে এটা মাথায় রাখতে হবে যে একটি বিষয়ের ওপর টানা তিন- চার ঘণ্টা সময় কাটালেও সেটা মনে থাকবে না, ভুলে যাবার সম্ভাবনাই থেকে যায়।
তবে শেষে বলবো, এই সময় পরীক্ষার্থীদের কথা বলাটা খুব দরকার। পরীক্ষা বলে সবসময় বইয়ের মধ্যেই ডুবে না থেকে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে হবে। বাবা-মা, শিক্ষক- শিক্ষিকা এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ যেন ভাল থাকে। তবে অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখতে হবে তাদের সন্তানরা এই সময়টায় যেন একা না হয়ে যায় বা নিজেদের গুটিয়ে না নেয়।”
বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ জয়শ্রী বনিক জানিয়েছেন, ” পরীক্ষার আগে শরীর ঠিক রাখাটা অত্যন্ত আবশ্যিক। শরীর ঠিক না থাকলে পড়াশোনায় সঠিক ভাবে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়, তাই এই সময় বাইরের খাবার খাওয়া একেবারেই অনুচিত। পরীক্ষার আগের এই ক’টা দিন একদম হালকা খাবার খেতে হবে, খাবার মেনুতে এমন সব খাবার রাখতে হবে যা সহজেই হজম হয় এবং কোনরকম গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় যাতে পড়তে না হয়। যারা রাত জেগে পড়াশোনা করে তাদের বলবো এই সময় বেশি রাত জাগা ঠিক নয়, তাতে শরীরের ওপর প্রভাব পড়বে। তা- ও যদি জাগতেই হয় কয়েকটি জিনিস মনে রাখতে হবে, রাত জেগে পড়ার সময় চা বা কফি খাওয়া একদমই চলবে না। প্রয়োজনে ছাতু খাওয়া যেতে পারে। তবে যাদের ছোলার ছাতু সহ্য হয় না তারা বাজরা বা জোয়ারের ছাতু খেতে পারে। আবার খুব ভোরে উঠেও বেশিক্ষণ পেট ফাঁকা রাখা উচিত নয়, তাই সকালে ব্রেকফাস্টের আগে একটু স্প্রাউট খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।
সকাল থেকে রাত অবধি কোন ধাপের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। রোজ সকালে একটি করে ডিম সেদ্ধ খেতে পারলে ভাল হয়। প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া খুবই দরকার। রোজ দুধ খেতে হবে। তবে যাদের দুধ সহ্য হয় না তারা টক দই বা ঘোল খেতে পারে। এই সময় টক দই খেতে পারলে খুব ভাল হয়,গ্যাস- অম্বলের সমস্যা কমবে। যারা রাত জেগে পড়াশোনা করে তাদের জন্যও উপকারী। দুপুরের হালকা মাছের ঝোল বা চিকেনের ঝোল খেতে হবে। শাক- সব্জিও খাওয়া দরকার। তবে রাতে হজমের সুবিধার জন্য নিরামিষ খাবার খাওয়াই ভাল। যেমন- ডালিয়া বা ওটসের খিচুড়ি। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা আছে তারা এতে উপকার পাবে। তবে রাতে রুটিও খাওয়া যেতে পারে। আরেকটি প্রয়োজনীয় দিক হল রোজ আড়াই থেকে তিন লিটার জল অবশ্যই খেতে হবে। ডাবের জল বা লেবুর জল খাওয়া এই সময় শরীরের জন্য খুবই উপকারী। রোজ একটি ফল খাওয়া আবশ্যিক। একটু ড্রাই ফ্রুটস খেতে পারলে ভাল হয়। শেষে একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় দিক উল্লেখ্য যে, রোজ খুব ভাল করে স্নান করা খুবই জরুরি তাতে মানসিক ও শারীরিক উদ্বেগ উভয়ের থেকেই পরিত্রাণ মিলবে।”
Be First to Comment