Press "Enter" to skip to content

মাইকেলেঞ্জেলো ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও স্থপতি…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ মা ই কে লে ঞ্জে লো

বাবলু ভট্টাচার্য :ইউরোপীয় রেনেসাঁসে অর্থনীতি- রাজনীতির অনেক বিকাশ ঘটলেও এর শিল্পের বিকাশ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। আর এই বিকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মাইকেলেঞ্জেলো।

মাইকেলেঞ্জেলোর বাবা লুদভিকো দি লিওনার্দো বুওনারোত্তি সিমোনি এবং মা ফ্রাঞ্চেসকা দি নেরি দেল মিনিয়াতো দি সিয়েনা।

ছয় বছর বয়সে, তার মা মারা গেলে তিনি সেত্তিগনানো নামক শহরের এক পাথর খোদাইকারী পরিবারে সাথে থাকতে শুরু করেন। এখানেই তার ভাস্কর্য তৈরির হাতেখড়ি হয়।

মাইকেলেঞ্জেলো ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও স্থপতি। কিন্তু ছোট থেকেই মার্বেল পাথর খোদাইয়ের সাথে জড়িত থাকায় এদিকে ঝোঁকও ছিল তুলনামূলক বেশি। তার ধারণা ছিল- মানবদেহের আসল সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা যায় ভাস্কর্যে।

মাইকেলেঞ্জেলোর সৃষ্ট ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘পিয়েতা’। মার্বেল পাথরের এই মর্মস্পর্শী ভাস্কর্য তিনি তৈরি করেন ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার ব্যাসিলিকার জন্য। ভাস্কর্যে উপস্থিত মাতা মেরির কোলে ক্রুশবিদ্ধ যীশুর প্রাণহীন দেহ দেখানো হয়েছে। এমন স্তব্ধ, সংযত, শোকাবহ, শান্ত কিন্তু পবিত্র ভাব কীভাবে শক্ত পাথরের গায়ে প্রতিফলিত হলো তা এক রহস্যই বটে!

‘পিয়েতা’র পর মাইকেলেঞ্জেলো ফ্লোরেন্সে গিয়ে নির্মাণ করেন ‘ডেভিড’। ডেভিড সম্পূর্ণ নগ্ন এবং সুঠাম দেহের অধিকারী, ফলে পুরুষোচিত সৌন্দর্যের আধার হয়ে ওঠে তার ডেভিড। দেহের প্রতিটি ভাঁজ আদর্শায়িত, যার সাথে গ্রীক বা রোমান ক্ল্যাসিক্যাল স্টাইলের মিল পাওয়া যায়। শরীর এবং মুখভঙ্গির মধ্যে দেখা যায় দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এবং কিছুটা বেপরোয়া কিন্তু শান্ত ভাব।

ভাস্কর্যের প্রতি টান থাকলেও পোপের পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিক কারণে অ্যাঞ্জেলোকে চিত্রকর্মও করতে হয়েছে। ভাস্কর্যের মতোই তার আঁকা ছবিগুলোও ছিল আদর্শায়িত। তাঁর বেশিরভাগ চিত্রকর্মই ফ্রেস্কো পদ্ধতিতে করা। ভ্যাটিকান সিটিতে অবস্থিত সিস্টিন চ্যাপেলের পুরো ছাদে যে ফ্রেস্কোওয়ার্ক দেখা যায় তার জুড়ি মেলা ভার।

এর একটি অংশে দেখানো হয়েছে ‘দ্য ক্রিয়েশন অফ অ্যাডাম’ শীর্ষক ঈশ্বর কতৃক অ্যাডামকে প্রাণদানের ঘটনা। ছবিতে দেখা যায়- ঈশ্বর এবং অ্যাডাম পরস্পরের আঙুল ছুঁয়ে আছেন। ঈশ্বর যে অংশে আছেন সেটুকু আঁকা হয়েছে স্বর্গের মতো করে, আর অ্যাডামের অংশটুকু পৃথিবীর মতো। অ্যাডামের পৃথিবীতে আবির্ভাব এবং পৃথিবীর সাথে ঈশ্বরের যোগাযোগের ইঙ্গিতপূর্ণ এই চিত্রকর্ম অ্যাঞ্জেলোর সেরা কাজগুলোর একটি।

সিস্টিন চ্যাপেলের আরেক দেয়ালে এঁকেছেন ‘দ্য লাস্ট জাজমেন্ট’। এই ফ্রেস্কোতে দেখানো হয়েছে বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের বর্ণনানুযায়ী ঈশ্বরের শেষ বিচারের কার্যক্রম, যীশুর পুনর্জন্ম, যেখানে যীশুর সাথে তাঁর অনুসারীরাও উপস্থিত। আর নিচের দিকে দেখা যায় পাপীদের নরকে প্রেরণের এক ভয়ংকর দৃশ্য।

ভাস্কর্যের মতোই অ্যাঞ্জেলোর চিত্রকর্মেও ফিগারের মধ্যে একধরনের চঞ্চলতা দেখা যায়। কর্মব্যস্ত, অস্থির এবং উত্তেজিত দেহভঙ্গি সাধারণ ফিগারগুলোকে যেমন প্রাণবন্ত করে তুলেছে, আরেকদিকে তেমন অ্যাডামকে দেখানো হয়েছে এক ঐশ্বরিক জীবনীশক্তিতে ভরপুর মানব হিসেবে; মানুষ হয়েও যে সে সবার থেকে আলাদা এটা বোঝানোর জন্যই।

আবার পৃথিবীর সাথে ঈশ্বরের যে এক যোগসূত্র আছে তা-ও বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্যণীয়। একপাশে যেমন ধুলো-মাটির পৃথিবী, অপরদিকে তেমন দেবদূতবেষ্টিত ঈশ্বরের স্বর্গীয় জগৎ। অথচ এই দুই জগত মেলবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে দুটি আঙুলের স্পর্শে!

ভাস্কর বা চিত্রশিল্পী ছাড়াও অ্যাঞ্জেলোর ছিল আরও একটি পরিচয়। স্থপতি হিসেবেও বেশ নামডাক ছিল তাঁর। ভাস্কর্য, চিত্রকলার মতো এই ক্ষেত্রেও দক্ষতার ছাপ রেখেছেন তিনি। এর পরিচয় পাওয়া যায় ভ্যাটিকান সিটিতে অবস্থিত ‘সেন্ট পিটার’স ব্যাসিলিকা’ থেকে। তৎকালে এটাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গীর্জা।

প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে গীর্জাটির নির্মাণ কাজ চলে। অ্যাঞ্জেলো এর প্রধান স্থপতি হলেও এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে রাফায়েল, ফ্রা জিওকন্দো, জুলিয়ানো দ্য সাঙ্গালো, আন্তোনিও দ্য সাঙ্গালোও কাজ করেছেন। অ্যাঞ্জেলোর দুর্ভাগ্য যে, ব্যাসিলিকার কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে থাকতে পারেননি।

মাইকেলেঞ্জেলোর ব্যাপারে বলা হয়- তিনি স্বর্গীয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত। কারণ তার কাজের ধরনই ছিল এমন যে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত রং তুলির ছবি বা প্রাণহীন পাথরের মূর্তি— এত প্রাণবন্ত কীভাবে হতে পারে ভেবে।

তার শিল্পকর্মের প্রভাব এতটাই সুদূরপ্রসারী যে ১৫৬৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর মায়া কাটালেও পৃথিবী তার মায়া আজও কাটাতে পারেনি। তার প্রতিটি কাজের মধ্যেও মানুষ আজও তাকে খুঁজে পায়, পাবে।

মাইকেলেঞ্জেলো ১৪৭৫ সালের আজকের দিনে (৬ মার্চ) ইতালির ক্যাপ্রিসির আরেজ্জোতে জন্মগ্রহণ করেন।

More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *