স্মরণ : মহাশ্বেতা দেবী
বাবলু ভট্টাচার্য : কল্লোল যুগের সাহিত্যিক মনীশ ঘটকের মেয়ে মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম ১৯২৬ সালে বাংলাদেশের ঢাকায়। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক তার কাকা।
দেশভাগের পর মহাশ্বেতার পরিবার বাংলাদেশ থেকে চলে যায় ভারতে। বিশ্বভারতীতে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ করার পর তিনি বিজয়গড় কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে লেখালেখি হয়ে ওঠে তার ধ্যানজ্ঞান। সেই সঙ্গে আদিবাসী এবং নারী অধিকার নিয়ে কাজের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।
তার লেখায় সমাজের প্রান্তজনের কথা এসেছে বার বার। নৃত্য-সংগীতশিল্পীদের নিয়ে তিনি লিখেছেন মধুরে মধুর, নটী; সার্কাসের শিল্পীদের জীবন নিয়ে লিখেছেন প্রেমতারা। যমুনা কী তীর, রূপরাখা, বায়োস্কোপের বাক্স উপন্যাসেও এসেছে শিল্পে সহচার্যে আসা মানুষের প্রান্তিক জীবনের কথা।
রাজনীতি ও ইতিহাসের মিশেলে মহাশ্বেতা ঝাঁসির রানীর স্বাধীনতা সংগ্রামের গল্প লিখেছেন ‘ঝাঁসী কি রানী’ উপন্যাসে। নকশাল আন্দোলনের পটভূমিতে তার লেখাগুলো সে সময় দুই বাংলায় দারুণ সাড়া ফেলে। পরবর্তী জীবনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পনীতি এবং কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে কারখানা করার পরিকল্পনা নিয়েও লেখার মধ্য দিয়ে সরব ছিলেন তিনি।
বাম ঘরানার এই লেখক মুণ্ডা ও সাঁতালদের সংগ্রামী জীবন নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনি লোধা, শবরসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য জীবনভর সংগ্রাম করে গেছেন তিনি।
- মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাস ইংরেজি, জার্মান, ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ভারতের জ্ঞানপীঠ এবং ফিলিপিন্সির র্যামন ম্যাগসাইসাইসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
মুণ্ডা বিদ্রোহের পটভূমি নিয়ে লেখা মহাশ্বেতার উপন্যাস ‘অরণ্যের অধিকার’ ১৯৭৯ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পায়। সাহিত্যে অবদানের জন্য ভারত সরকার ২০০৬ সালে তাকে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে।
তার লেখা শতাধিক উপন্যাসের মধ্যে ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘অগ্নিগর্ভ’, ‘চোট্টি মুণ্ডা এবং তার তীর’, ‘আঁধারমানিক’, ‘বেনে বৌ’সহ অনেকগুলো বাংলাদেশের পাঠকমহলেও আলোচিত।
মহাশ্বেতা দেবীর স্বামী ছিলেন নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য। তাদের সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্যও ছিলেন একজন সাহিত্যিক।
মহাশ্বেতা দেবী তার জন্মস্থান বাংলাদেশে এসেছিলেন ২০০৯ সালে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
মহাশ্বেতা দেবী ২০১৬ সালের আজকের দিনে (২৮ জুলাই) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment