———–জন্মদিনে স্মরণঃ মনোজ বসু———- বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মনোজ বসু। বাংলার মাটি, মানুষ, আকাশ, জলপাই রংয়ের গাছ-গাছালি, গঙ্গা পদ্মার শব্দ-নৈঃশব্দের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে মনোজ বসু সাহিত্যকর্ম। মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারের সন্তান তিনি। সম্পদ-সম্পত্তি বলতে যা বোঝায় তা ছিল না তাঁদের। গ্রামে তাঁদের ছিল বংশ গৌরব ও প্রচুর খ্যাতি। তাঁর ঠাকুর দাদার লেখার অভ্যাস পিতা রামলাল বসুর মধ্যেও ছিল। তিনি ভাল কবিতা লিখতে পারতেন। দুই পুরুষের সাহিত্যচর্চার সঞ্চয় ছিল মনোজ বসুর লেখক হওয়ার পাথেয়। মনোজ বসু সাত বছর বয়সেই বঙ্কিম বাবুর লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৯০৯ সালের জুন মাসে মাত্র আট বছর বয়সে লেখক মনোজ বসু হলেন পিতৃহীন। তখনও পাঠশালার গন্ডি শেষ হয়নি। লেখক হওয়ার সাধ, স্বপ্ন, বাসনা সব কিছুর উপর পড়ল যবনিকা। এক নিদারুণ অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রথমে নিজ গ্রামে পরে কলকাতায় তাঁর শিক্ষাজীবন চলতে থাকে। কলকাতায় তিনি ভর্তি হন রিপন কলেজিয়েট স্কুলে। ১৯১৯ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি কয়েকটি বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে পাশ করেন। এর পর তিনি বাগেরহাট কলেজে ভর্তি হন। এই বাগেরহাট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন।১৯২২ সালে তিনি আই. এ পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯২৪ সালে সাউথ সাবারবন কলেজ (বর্তমান আশুতোষ কলেজ) থেকে ডিস্টিংশন নিয়ে বি. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। শুরু করেন আইন পড়া। কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে তিনি আইন পড়া বন্ধ করতে বাধ্য হন। অতঃপর তিনি যোগ দিলেন শিক্ষকতায়। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্কুলের পাঠ্য পুস্তক লেখার কাজেও মনোনিবেশ করেন। ফলশ্রুতি হিসেবে পরবর্তীতে তিনি ‘বেঙ্গল পাবলিশার্স’ নামে একটি প্রকাশনী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলে পড়াকালীন কয়েকজন উৎসাহী বন্ধু মিলে একটি হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশ করেন। প্রথম সংখ্যা থেকেই মনোজ বসু লিখতে শুরু করেন। পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যায় লেখকের ‘গৃহহারা’ একটি গল্প প্রকাশিত হয়। গল্পের পাশাপশি প্রকাশিত হচ্ছিল মনোজ বসুর সৃষ্টিধর্মী কবিতা। মনোজ বসুর জীবন অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে সাহিত্য চিন্তার প্রতিফলন। ‘আমি সম্রাট’, ‘সেই গ্রাম সেইসব মানুষ’, ‘নিশিটুকুম্ব’, ‘নবীন যাত্রা’, ‘একদা নিশিথকালে’, ‘কিংশুক’, ‘মায়াকন্যা’, ‘বন কেটে বসত’, ‘রূপবতী’, ‘সেতুবন্ধ’, ‘ঝিলমিল’ মনোজ বসুর রচনাবলী। তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ফসল জমা হয়ে আছে ‘আগস্ট ১৯৪২’, ‘ভুলি নাই’, ‘সৈনিক’, ‘বাঁশের কেল্লা’ এই সকল রাজনৈতিক উপন্যাসগুলিতে। মনোজ বসু ভারতীয় সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণের বিচিত্র অভিজ্ঞতায় তাঁর লিখিত ‘ভ্রমণ কাহিনী’, ‘চীন দেখে এলাম’, ‘সোভিয়েতের দেশে দেশে’, ‘নতুন ইউরোপ নতুন মানুষ’, ‘পথচলি’ বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ হিন্দী, ইংরেজী, গুজরাটি, মারাঠা, মালয়ালাম ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি গ্রন্থ চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে।
স্বদেশে ও বিদেশে লেখক পেয়েছেন অভাবনীয় স্বীকৃতি ও পুরস্কার। ‘একাডেমী পুরস্কার’ ও ‘নরসিংহদাস’ পুরস্কার, কলকাতা বিশ্বাবিদ্যালয় প্রদত্ত ‘শরৎচন্দ্র পদক ও পুরস্কার’ অমৃত বাজার পত্রিকা প্রদত্ত ‘মতিলাল ঘোষ’ পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন।বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ মনোজ বসু ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পরলোকগমন করেন।মনোজ বসু ১৯০১ সালের আজকের দিনে (২৫ জুলাই) যশোর জেলার কেশবপুর থানার ডোঙাঘাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
মনোজ বসু মাত্র সাত বছর বয়সেই বঙ্কিম চন্দ্র’ র লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কবিতা লিখতে শুরু করেন। তিনি ভারতীয় সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন……….
More from GeneralMore posts in General »
- পরিবারে একত্রিত, বয়সে বিভক্ত: হেল্পএজ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন আন্তঃপ্রজন্মীয় বন্ধন কে জোরদার করার আহ্বান জানায়…।
- নতুন সংসার শুরু করার স্বপ্ন স্বামী স্ত্রীর চোখে, ভালোবাসার হাসি, প্লেনে চড়ার আনন্দ, বিদেশ যাত্রা সব কিছু কেমন যেন আকাশ এই মিলিয়ে গেল আর হঠাৎ করে হয়ে গেল সবাই আকাশের-তারা…।
- Lupin Receives Tentative Approval from U.S. FDA for Oxcarbazepine ER Tablets….
- ইংরেজি দৈনিক ইকো অফ ইন্ডিয়া গ্রুপের বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন…।
- Cycling is Faster than Perceived – Beats Cars in Congested Corridors….
- দুপুর বেলায় খাওয়া দাওয়ার পর্ব হল শেষ, বাংলাদেশে এই দিনটার গুরুত্ব অশেষ…।
Be First to Comment