Press "Enter" to skip to content

মতুয়া সমাজের এক অংশের বিদ্রোহ, রাজনীতির ফাঁদে আর নয়….।

Spread the love

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : কলকাতা, ১ মার্চ,২০২২। বাংলার ভূমিপুত্রের ইতিহাসে অন্যতম মতুয়া সম্প্রদায়। ব্রাহ্মণ্যবাদের যাঁতাকল থেকে মুক্ত হয়ে হিন্দু বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষক সমাজের ব্রাত্যজনেদের নিয়ে মতুয়া সমাজ গড়ে তুলেছিলেন বাঙালির নায়ক হরিচাঁদ ঠাকুর। জন্ম তাঁর ওপার বাংলার ফরিদপুরের গোপালগঞ্জে। সময়টা ১৮১২। হরিচাঁদ ঠাকুরের পিতা যশোবন্ত ঠাকুর বৌদ্ধ ধর্ম আর চৈতন্যদেবের ভক্তিবাদের প্রভাবে এক নতুন সম্প্রদায়ের সূচনা করেন ব্রাহ্মণ্যবাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। ভক্তি ও প্রেমের মন্ত্রে মাতোয়ারা হবার সুবাদেই সম্প্রদায়ের পরিচিতি হয় মতুয়া হিসেবে। বৈষ্ণব ধর্মে আস্থা রাখলেও মতুয়া সমাজ একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী।

হরিচাঁদ ঠাকুরের মৃত্যুর পর পুত্র তাঁর পুত্র গুরু চাঁদ ঠাকুর সমাজের দায়িত্ব নেন। ১৯৪৭এর বঙ্গভঙ্গের পর জন্মভূমি ফরিদপুর ছেড়ে এপার বাংলায় তাঁর পুত্র ব্যারিস্টার প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী বীণপানি দেবীও চলে আসেন। সীমান্ত পেরিয়ে ঠাকুরনগরে গড়ে ওঠে মতুয়া সমাজ। ১৯৯০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর সমাজের গুরুমা হন তিনি। সমাজ তাঁকে ডাকতেন বড় মা নামে। সমাজের উন্নয়নের জন্য বিধান রায়ের মন্ত্রিসভায় রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ত্ব নিয়েছিলেন প্রমথরঞ্জন। বাংলার বিখ্যাত কৃষকদের তেভাগা আন্দোলনে বামপন্থী কৃষকসভার সঙ্গে জমিদারদের বিরুদ্ধেও ছিলেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। সুভাষচন্দ্র গুরুচাঁদকে বলেছিলেন, মহামানব। গান্ধীজি বলেছিলেন, মহান গুরু। এরপর আবার ১৯৭১এ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এক বিশাল সংখ্যক মতুয়া পশ্চিমবঙ্গে আসেন। যাঁর ফলশ্রুতিতে আজ যখন রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন হয়, তখন নদীয়া জেলার ১০টি আসন, উত্তর ২৪পরগণার ৯ টি আসন দক্ষিন ২৪ পরগণার ১২টি আসন এবং পূর্ব বর্ধমানের ৮ টি আসনের জয় পরাজয় নিষ্পত্তি হয় মতুয়া ভোটের নিরিখে। ফলে সংসদীয় রাজনীতিতে বিশ্বাসী বাম , ডান সব দলই ভোট বাক্সে প্রতিফলন ঘটাতে সহজ সরল মতুয়াদের অভিভাবক ঠাকুর পরিবারের ওপর প্রভাব বিস্তারে সফল হয়।

একটা সময় গুরুচাঁদ ঠাকুরের পৌত্র প্রমথরঞ্জন বোঝেন, রাজনীতিতে মতুয়াদের দাবার বোড় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তাই রাজনীতি ছেড়ে সমাজের সংগঠনকে মজবুত করা আর শিক্ষার বিস্তারে মন দেন। কিন্তু ভোট বড় বালাই। তাই কংগ্রেস, বাম, তৃনমূল , বিজেপি মতুয়া সমাজের উন্নতির গাজর ঝুলিয়ে সমাজে স্পষ্ট এক বিভাজন সৃষ্টি করে দিতে সমর্থ হয়েছে। এমনই অভিযোগ মতুয়া সমাজের এক অংশের। তাঁদের বক্তব্য, মতুয়া সম্প্রদায়ের উপলব্ধি হয়েছে। তাঁরা রাজনৈতিক ভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। তাই বড়’মার অনুপস্থিতিতে সমাজ যখন বহুধা বিভক্ত, তখন বিদ্রোহ করে বসলেন মতুয়া সমাজের এক অংশ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেলে মতুয়া সমাজের একটি সংগঠন শ্রী শ্রী শান্তিহরি গুরুচাঁদ মতুয়া ফাউণ্ডেশন এক সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেন কলকাতা প্রেস ক্লাবে।

সুমিতা পোদ্দার।

বিগত ১৫ বছর ধরে এই সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন গুরুমা সুমিতা পোদ্দার গুপ্তা। এই সংগঠনের গোঁসাইদের স্থির ধারণা, সুমিতা পোদ্দারই হবেন আগামীদিনের মা। ফলে মতুয়া সমাজের অভিভাবক হিসেবে বর্তমান ঠাকুরবাড়ির দুই গোষ্ঠী যেভাবে দুই রাজনৈতিক দলের ছাতার তলায় থেকে বাঁদরের পিঠে ভাগের খেলায় মত্ত আছেন সেখানে প্রভাব পড়বে। প্রভাব পড়বে মতুয়া সমাজের সাংবিধানিক কাঠামোতে। এমনই দাবি করে তাঁরা একটি প্রেসনোট তুলে দিয়েছেন সাংবাদিকদের হাতে।

এই প্রেস নোটে সরাসরি অভিযোগ জানিয়ে বলা হয়েছে, সুমিতা পোদ্দার ও তাঁর অনুগামীরা ঠাকুরবাড়ির লোকজনদের ধর্মীয় কারণে ভগবানের চোখে দেখেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মমতাবালা বা শান্তনু ঠাকুর মন্ত্রী, বিধায়ক বা সাংসদ হয়েও সমাজের ক্ষুদ্র চাহিদাগুলিও মেটাতে অক্ষম । আসলে এঁরা সমাজের উন্নতি করতে ইচ্ছুক নন। প্রায় ১৬ হাজার দলপতি বা গোঁসাই আছেন, যাঁরা তাঁদের বরাদ্দ প্রণামী যথাস্থানে পৌঁছে দেন। কিন্তু করোনা প্রবাহে গত দুবছরে তাঁদের আয় নেই। ডঙ্কা, কাঁসর কেনার পয়সা নেই। এঁদের কথা কেউ ভাবে না। বিদ্রোহী সমাজের মা সুমিতা পোদ্দারের স্পষ্ট ঘোষণা, আগামীদিনে ঠাকুর পরিবারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার যে ক্ষোভ বাড়ছে, সেই আঁচ ঠাকুরবাড়ি সামলাতে পারবে কিনা তা সময়ই বলবে।

রাজনীতিমুক্ত মতুয়া সমাজের সংগঠন শ্রী শ্রী শান্তিহরি গুরুচাঁদ মতুয়া ফাউন্ডেশন সুমিতা মায়ের নেতৃত্বে কতটা ঠাকুর বাড়ির ফাটলে আঘাত হানবে সেইদিকে লক্ষ্য রাখবেন রাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। দেখার বিষয়, আগামীদিনের সমাজের কর্তৃত্ব ঠাকুর পরিবারের হাত থেকে ছিনিয়ে নেবার ক্ষমতা বিদ্রোহী মতুয়ারা রাখেন কিনা।

More from CultureMore posts in Culture »
More from GeneralMore posts in General »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.