সঙ্গীতা চৌধুরী : কলকাতা, ১৪, ফেব্রুয়ারি, ২০২১। প্রতি বছর সারা বিশ্বে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে পালিত হয়। তরুণ প্রজন্ম এই দিনটিতে বিশেষ আবেগে ভেসে যায়। বাদ যায় না রোমান্টিক দম্পতির দলও। তবে, অনেকেরই ধারণা এই দিনটি কেবলমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকার ও দম্পতিদের জন্য। এটা একেবারেই ঠিক কথা নয়। যে কেউ এই দিনে তাদের প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। যেমন – বন্ধু , ভাই-বোন , পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্য ব্যক্তি যারাই আপনার জীবনে বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ। এই দিনটি পালনের ক্ষেত্রে একটি প্রাচীন ইতিহাস আছে। তবে অবশ্য বর্তমান যুগে ভালবাসার এই বিশেষ দিনটিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব শুভেচ্ছা কার্ড তৈরিকারী সংস্থা হলমার্কের। ১৯১৩ সাল থেকে হলমার্ক যখন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রচুর কার্ড তৈরি শুরু করে , মূলত সেই সময় থেকেই এই দিনটির কথা বিশেষ ভাবে প্রচার পায় এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

ভ্যালেন্টাইন ডে – এর ইতিহাসের ব্যাপারেও ভিন্ন মত আছে ,তার কয়েকটি হলো-
২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স নামে একজন খ্রিষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দি করেন। কারন তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।

বন্দি অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। পরবর্তীকালে ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও প্রথম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন।

আরও একটি গল্প আছে যেখানে বলা হয়েছে যে, দ্বিতীয় ক্লডিয়াস, একজন রোমান সম্রাট। যিনি বিশ্বাস করতেন যে, অবিবাহিত সৈন্যরা বিবাহিতদের চেয়ে বেশি দক্ষ, তাই তাদের বিয়ে করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি এমন আইন প্রনয়ন করেন যাতে সৈন্যবাহিনীতে চাকরি করা যুবকেরা বিয়ে করতে পারবে না। ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন যখন এই আইন সম্পর্কে জানতে পারেন তখন তিনি বুঝতে পারেন যে এই আইনের দ্বারা সম্রাট অন্যায় করছেন।

তাই যে সব সৈন্যরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান তাদের জন্য গোপনে বিবাহের কাজ চালিয়ে যান। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য লোকদের মধ্যেও ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু খুব দ্রুতই দ্বিতীয় ক্লডিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এই কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার আদেশ দেন। যিনি প্রেমের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন, সেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্বীকার করে সেখানকার মানুষেরা তাঁকে একটা দিন উৎসর্গ করার কথা ভাবে।এই দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি।

প্রচলিত এই কাহিনীগুলি কতটুকু সঠিক , সেটা আমরা জানি না। তবে এই ভ্যালেন্টাইন ডে সারা বিশ্বে আজ খুবই জনপ্রিয়। আমাদের এখানেও বর্তমানে এই দিবস পালন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে , বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে। কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তারা কি ভাবছেন এই বিশেষ দিনটি পালনের ক্ষেত্রে। মাস্টার্সের ছাত্রী অস্মিতা দাসগুপ্তার মতে, “ভ্যালেন্টাইন তো বাবা- মা, বন্ধুবান্ধব অনেকেই হতে পারে। তাই এই দিনটিতে যারা আমার কাছে প্রিয়, তাদের সঙ্গে কাটানোটাই আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের জীবনে সে রকম বিশেষ কেউ যদি না থাকে তাহলে সেল্ফ লাভ বা সেল্ফ কেয়ারে কাটিয়ে, এই দিনটিকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলা যায়। “আইনের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী আদৃতা সাহার সাফ জবাব ,”ভ্যালেন্টাইন ডে হিসাবে কোন বিশেষ দিন হওয়া উচিত নয়, তুমি যাকে ভালোবাসো সেই প্রিয় মানুষের জন্য তুমি রোজই সেলিব্রেট করতে পারো। ভ্যালেন্টাইন মা, বন্ধু বা পার্টনার যে কেউ হতে পারে। তাই আমার মতে এই দিনটিকে আলাদা করে স্পেশাল ভাবার কিছু নেই।”

যাইহোক বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের প্রতিটি দিন যেন ভালোবাসার দিন হয়ে সবার জীবনে একটু আনন্দধারা বইয়ে দেয়। প্রত্যেকের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকুক, এই কামনা করি।


Be First to Comment