স্মরণঃ ভূ পে ন হা জা রি কা
বাবলু ভট্টাচার্য : ‘মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য’, ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি রে.. ছুটে ছুটে আয়’, ‘ও মালিক সারা জীবন কাঁদালে যখন এবার মেঘ করে দাও’- গানে গানে এমন আকুতির কথা ছিল বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী ভূপেন হাজারিকার।
ভূপেন হাজারিকা ১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসামের সাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একাধারে তিনি ছিলেন গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।
বিষয় ও বক্তব্যের কারণে তাঁর দরদ ভরা গানগুলো সহজেই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। যেমন- ‘বিস্তীর্ণ দু’ পাড়ে’, ‘সাগর সঙ্গমে’, দোলা হে দোলা’, ‘প্রতিধ্বনি শুনি’, ‘আমায় একটা সাদা মানুষ দাও’, ‘শরৎ বাবু খোলা চিঠি দিলেম তোমার কাছে’, ‘গঙ্গা আমার মা-পদ্মা আমার মা’, ‘জীবন নাটকের নাট্যকার কি বিধাতা পুরুষ’, ‘আমি এক যাযাবর’, ‘মোর গায়ের সীমানার পাহাড়ের ওপারে নিশিথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি’, ‘মোরা যাত্রী একই তরণীর সহযাত্রী একই তরণীর’- এমনই জীবন অনুসন্ধানী গান ছিল ভূপেন হাজারিকার। ভূপেনের গান মানুষকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করেছে।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর গানে আকৃষ্ট হয়েছেন শ্রোতারা। অসমিয়া, ফোক, বলিউড এবং আধুনিক গানকে তিনি জনপ্রিয় করেছেন। বাংলা ও হিন্দি দু’ভাষাতেই আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা পায় ভূপেনের গান।
বাংলাদেশের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্কের বাঁধন ছিল তাঁর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই শিল্পীর সঙ্গীত স্বাধীনতাকামী জনগণের মাঝে যে আশার আলো জাগিয়েছিল তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে ঢাকায় গিয়েও ভক্ত শ্রোতাদের মাতিয়ে দেন তিনি।
বাংলাদেশে ভীষণ জনপ্রিয় ভূপেন হাজারিকা ১৯৭৩ সালে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ নামে যৌথ প্রযোজনায় ছবিতে কণ্ঠ এবং ১৯৭৭ সালে ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেন। এ চলচ্চিত্রের বিখ্যাত গান ‘মেঘ থম থম করে’ এখনও সবার মুখে মুখে।
ভূপেন শুধু গায়ক ছিলেন না, ছিলেন একজন মহান সমাজসংস্কারকও। ভারতের পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিলেন তিনি।
তিনি প্রথমে ১৯৭৭ সালে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী সম্মাননা পান। ‘শঙ্করদেব’ পুরস্কার পান ১৯৮৭ সালে। ‘অসম রত্ন’ পুরস্কার পান ২০০৯ সালে। গ্রামোফোন কোম্পানি তাঁকে ‘গোল্ডেন ডিস্ক’ পুরস্কার দিয়েছেন ১৯৭৮ সালে। ‘দাদা সাহেব ফালকে’ সর্বভারতীয় পুরস্কার পান ১৯৯২ সালে। ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার ২০০১ সালে।
ড. ভূপেন হাজারিকা ২০১১ সালের আজকের দিনে (৫ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment