ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে শ্রীপদ্মনাভ গোস্বামীর সংগ্রহ দুর্লভ পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ….।

নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ১১ জুন, ২০২৫। ভারতের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে এক গৌরবজনক পদক্ষেপ হিসেবে, ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টার (BRC) এবার শ্রীপদ্মনাভ গোস্বামীর দুর্লভ পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ ডিজিটাইজেশানের কাজ শেষ করল। শ্রীপদ্মনাভ গোস্বামী গৌড়ীয় বৈষ্ণব পরম্পরার অন্যতম স্তম্ভ শ্রীগোপাল ভট্ট গোস্বামীর চতুর্দশ প্রজন্মের উত্তরসূরী এবং ঐতিহাসিক শ্রী রাধারমণ মন্দিরের জ্যেষ্ঠ সেবাইত।
শুধু আধ্যাত্মিক দায়িত্বই নয়, ব্রজ অঞ্চলে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডেও তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত। তাঁর বংশ পরম্পরা বরাবরই নাগরিক ও বৌদ্ধিক সেবায় অগ্রণী। শ্রীপদ্মনাভ গোস্বামীর পিতা আচার্য শ্রীবিশ্বম্ভর গোস্বামী ১৯৫০-এর দশকে বৃন্দাবনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তৎকালীন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।
এই বিরল সংগ্রহে রয়েছে শ্রীপদ্মনাভ গোস্বামীর প্রপিতামহ, পণ্ডিত সর্বভৌম মধুসূদন গোস্বামীর মূল রচনাসমূহ। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ন্যায় ও সংস্কৃত ব্যাকরণ পণ্ডিত, সমাজ সংস্কারক এবং আধ্যাত্মিক গুরু। তিনি ভারতব্যাপী ভ্রমণ করে গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের প্রচার করেন এবং ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর, শ্রী শিশিরকুমার ঘোষ এবং শ্রী মদন মোহন মালব্যের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
এই ডিজিটাইজেশন প্রকল্প শুরু হয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে, BRC-র গবেষক ও কিউরেটর সৌরীশ দাস-এর নেতৃত্বে। সম্প্রতি সেই কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মোট ডিজিটাইজড পাণ্ডুলিপির সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৮০০।
এই পাণ্ডুলিপিগুলির অধিকাংশই সংস্কৃত ও বাংলায় রচিত গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনভিত্তিক, তবে ন্যায়, বেদান্ত ও ভারতের প্রাচীন জ্ঞানতন্ত্র সম্পর্কিত রচনাও এতে অন্তর্ভুক্ত।
শ্রীপদ্মনাভ গোস্বামী বলেন, “শাস্ত্র সংরক্ষণ একরকম আসক্তির মতো যখন মন ও হৃদয় এই প্রবল আগ্রহে আবিষ্ট হয়, তখন আর কিছুই তেমন অর্থপূর্ণ বলে মনে হয় না। সেটাই জীবনের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে।”
ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের অ্যাকাডেমিক ডিন ডঃ সুমন্ত রুদ্র বলেন, “এই দুর্লভ ও মূল্যবান পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ ডিজিটাইজ করার সুযোগ পেয়ে আমরা সম্মানিত বোধ করছি। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের গবেষক, ইতিহাসবিদ ও জ্ঞানপিপাসুদের জন্য পথপ্রদর্শক হবে।”
প্রকল্পটি প্রসঙ্গে সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ ফের্দিনান্দো সারডেলা বলেন, “এই পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ একটি বিরল, অবিচ্ছিন্ন বৌদ্ধিক ও ধর্মতাত্ত্বিক ধারার পরিচয় বহন করে। এ ধরনের আর্কাইভ ডিজিটাইজ করা ভারতের অসাধারণ সাহিত্য ও দার্শনিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *