গোপাল দেবনাথ : কলকাতা, ১২ এপ্রিল, ২০২৪। চিরতরে চলে গেলেন বেলেঘাটা নারকেলডাঙ্গা মেন রোড কাদাপাড়া অঞ্চলের অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রবীণ ডাক্তারবাবু সুদীপ রায়। মৃত্যকালে বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। রেখে গেলেন দুই পুত্র এবং সহধর্মিনী কে। গত ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিনের বেলায় প্রতিদিনের মতো রোগীদের চিকিৎসায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। রাতে পরিবারের সাথে সল্টলেকের বাড়িতেই ছিলেন ফুটবল পাগল মোহনবাগান দলের অন্ধ ভক্ত ডাক্তারবাবু।
নিজের প্রিয় দল মোহনবাগানের চার গোলে জেতার খবরে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে ওঠেন এবং তার কিছু পরেই হৃদ যন্ত্র স্তব্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানা যায়। বেলেঘাটা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে ডাক্তারবাবুর মৃত্যুর খবরে। ডাক্তারবাবুর মরদেহ শুক্রবার সকালে তার নিজস্ব চেম্বার এবং পুরোনো পাড়া সুরেন সরকার রোড এর ক্লাব ও বসত বাড়ির সামনে নিয়ে গেলে সাধারণ মানুষ গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেন এবং শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। গরিব দরদী ছিলেন প্রয়াত ডাক্তারবাবু। বহু দুঃস্থ মানুষের বহু বছর ধরে চিকিৎসা করলেও সেভাবে অর্থ নিতেন না এমন কি ওষুধ ও দিয়ে দিতেন।
সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া সুদীপ বাবু বরাবরই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। নীলরতন সরকার হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাশ করার পর অত্যন্ত সফলতার সাথে রোগীদের সফল ভাবে চিকিৎসা করে গেছেন। একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় তা হলো করোনা অতিমারীর সময় যখন অল্পবয়সী ডাক্তারবাবুরা মৃত্যুভয়ে বাড়ির বাইরে এক পা রাখার সাহস পেতেন না সেই সময় জনদরদী ডাক্তারবাবু প্রতিনিয়ত চেম্বারে এসে রোগীদের পরিষেবা দিয়ে যেতেন। এই প্রতিবেদক একদিন ডাক্তারবাবু কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আপনার মৃত্যভয় নেই?
৮৮ বছর বয়সে আপনি এখনো কেন রোগী দেখছেন? যেখানে অল্পবয়সী ডাক্তারবাবুরা মৃত্যুভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে সাহস পান না! ডাক্তারবাবু বলে ছিলেন আমি না দেখলে এই রোগী ও তার পরিবার কোথায় যাবে! তিনি ছিলেন প্রকৃতঅর্থে জনদরদী এবং সমাজসেবী। বহু মেডিকেল ক্যাম্পে নিজে উপস্থিত থেকে রোগীদের চিকিৎসা করতেন। খুবই মিশুকে স্বভাবের মানুষ ছিলেন এবং এই বয়সেও সকলের নাম মনে রাখার বিশেষ গুন ছিল। এই প্রতিবেদকের পারিবারিক চিকিৎসক ও ছিলেন ডাক্তার রায়। আজকের দিনে বহু ডাক্তারবাবু গায়ে টাচ না করেই প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। ডাক্তার রায় নিজের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা কে পাথেয় করে রোগীর শরীর স্পর্শ করে রোগ বুঝে ওষুধ দিতেন। রোগীর চিকিৎসার প্রথমেই হাজারো মেডিকেল টেস্ট করানোর পক্ষপাতি ছিলেন না ডাক্তারবাবু।
যে রোগের চিকিৎসা মনে হতো ডাক্তারবাবু আয়ত্তের মধ্যে নেই সেই কথা সরাসরি রোগীর পরিবারের লোকদের জানিয়ে দিতেন। আরেকটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় মেডিকেল রিপোর্ট দেখার জন্য কখনো কোনো রকম অর্থের দাবি করতেন না। ডাক্তারবাবু যতদিন আপনার রোগী ও রোগীর পরিবার বেঁচে থাকবে ততদিন আপনাকে ও সেবা কে মনে রাখবে। আপনি চিরতরে চলে গিয়েও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
Be First to Comment