গোপাল দেবনাথ : আসানসোল, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২।প্রতিদিন প্রায় ২০০ মানুষের মুখে একবেলার আহার তুলে দিচ্ছেন অল ইন্ডিয়া হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান বুম্বা মুখোপাধ্যায়। গত দেড় হাজার দিন ধরে লাগাতার বুম্বা মুখোপাধ্যায় এবং তার সংগঠনের সদস্যরা আসানসোল স্টেশন এবং বার্নপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ভবঘুরে ফুটপাথবাসীদের মুখে রাতের আহার তুলে দিচ্ছেন।
ঝড় জল বৃষ্টি করোনা কোনো বাধা আটকাতে পারে নি এই মহান কর্মযজ্ঞ কে। ২০১৮ সালে এই পথ চলা শুরু হয়েছিল। অভুক্ত মানুষদের দেখে স্থির থাকতে পারেননি বুম্বা মুখোপাধ্যায়। নিজের সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি শুরু করেন “ফুড ব্যাঙ্ক”।
প্রথম প্রথম সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। প্রতিদিন খাবারের টাকা যোগাড় করা, সেটা পৌঁছানো এসব নিয়ে বিক্ষিপ্ত সমস্যা চলত। কিন্তু সদস্যদের ডেডিকেশন এবং সবারই এগিয়ে আসায় সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সদস্যরা নিজেদের পরিবারের প্রিয়জনদের স্পেশাল দিন পালন করতে এগিয়ে আসেন এই ফুড ব্যাঙ্কে।
তবে শুধু সদস্যরাই নয়, আসানসোল শহরের বিভিন্ন শুভানুধ্যায়ী মানুষ এগিয়ে এসেছেন ফুড ব্যাঙ্কের সঙ্গে। তবে বুম্বা মুখোপাধ্যায়ের আহ্বান কোন অর্থ নয় বরং খাবার দিয়ে সহায়তা করুন ফুড ব্যাঙ্কে। ফুড ব্যাঙ্ক খাবার সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গা থেকে এবং সেই খাবার তারা নিয়মিতভাবে তুলে দেন ফুটপাথবাসী ভবঘুরেদের হাতে। প্রতিদিন রুটি সবজি সহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়া হয়। যদিও সদস্যদের স্পেশাল ডে’গুলিতে স্বাদ বদল হয় ভবঘুরেদের। সেদিন কেউ মাংস ভাত, কেউবা বিরিয়ানি, কেউ আরো নানান মুখরোচক খাবার মুক্তহস্তে দান করেন ফুড ব্যাঙ্কে। এভাবেই ফুড ব্যাঙ্ক চলে আসছে দেড় হাজার দিন ধরে।
আসানসোল, বার্নপুর ছাড়িয়ে এখন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা যেমন মুর্শিদাবাদ, ডোমকল কলকাতার বিভিন্ন স্থানে এই ফুড ব্যাঙ্ক নিয়মিতভাবে চলে।
তার পাশাপাশি রাজ্যের বাইরেও ঝাড়খন্ড, পাঞ্জাব হরিয়ানা এমনকি বারানসীর দশাশ্বমেধ ঘাটেও এই ফুড ব্যাঙ্ক প্রায়ই অনুষ্ঠিত হয়। বুম্বা মুখোপাধ্যায় বলেন শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্যে এবং সংগঠনের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই ফুড ব্যাঙ্ক চলছে। আমরা কোনও অর্থ নিই না। যে সকল মানুষের সামর্থ আছে, তাদের বলি খাবার দিন দুঃস্থদের জন্য। ঝড় জল বৃষ্টি প্রকৃতির কোন খামখেয়ালিপনাতেই কিংবা দুর্গাপূজা, কালীপূজা সহ বিভিন্ন উৎসবে কখনও এই ফুড ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়নি।
দিনের পর দিন মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে আসছি আমরা। ধীরে ধীরে আমাদের এই কাজ বিস্তৃত হচ্ছে। সকলের শুভেচ্ছা ভালোবাসা ও আশীর্বাদ নিয়ে এই মহান কাজ আমরা অনন্তকাল ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এই দুঃস্থ মানুষজন যখন খাবার হাতে পেয়ে আমাদের দিকে হাসিমুখে তাকে তখন আমরা আমাদের সব কষ্ট ভুলে যাই।
এই ফুড ব্যাংক ছাড়াও আমরা সারা বছর ধরে নানান ধরণের সামাজিক কর্মকান্ড করে থাকি তার মধ্যে অন্যতম নানান সময়ে বস্ত্র বিতরন কর্মসূচি।
Be First to Comment