Press "Enter" to skip to content

বুদ্ধ পূর্ণিমা….।

Spread the love

ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : ১২ মে, ২০২৫।  বৈশাখী পূর্ণিমার এই তিথিতে আজ থেকে আড়াই বছরেরও আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন ৷ আমরা ভারতীয়রা মনে করি যখন বিশ্ব অধর্মে ও হিংসায় ছেয়ে যায় তখন মানুষকে পথ দেখাতে ভগবান স্বয়ং মানব রূপে ধরাধামে অবর্তীন হন ৷ হিন্দু পুরাণ মতে ভগবান বিষ্ণুর নবম অবতার বুদ্ধদেব ( Gautam Buddha) পৃথিবীর সমস্ত জীবের প্রতি অহিংসা ও করুণার বার্তা দিতে মানব রূপে আবির্ভূত হন ৷ অবশ্য পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যরা পৃথক ধর্ম মেনে চলেন ৷ যা “বৌদ্ধ ধর্ম ” ৷ ৬২৩ খ্রিঃপূঃ জন্মেও আজও তিনি প্রাসঙ্গিক ৷ হিংসা , যুদ্ধদীর্ণ পৃথিবীতে মানবতার বার্তা ৷আজ পৃথিবীতে চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম হিসাবে অনেক দেশে বুদ্ধের মত বা বৌদ্ধ ধর্ম মেনে চলা হয় ৷ যেখানে ধনী , রাজা , হত দরিদ্র , চিকিৎসক থেকে নগরনটী ,সমস্ত বর্ণ ও বৃত্তির মানুষ সামিল হন ৷ এই তিথিতেই ৫৮৮ খ্রিঃপূঃ বুদ্ধগয়ায় ( তখনকার উরুবেলায়) সুপ্রসিদ্ধ মহাবোধি( যে গাছের পরম্পরা আজও আছে)গাছের নীচে তিনি সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন বা বোধি লাভ করেন ৷ সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্ব লাভের মাধ্যমেই “বৌদ্ধ ধর্ম” প্রবর্তিত হয় ৷ আবার এই তিথিতেই ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৮০ বছর বয়সে কুশিনারার বা কুশিনগরের মল্লদেব শালবনে তিনি মৃত্যুবরণ বা মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন ৷ বুদ্ধের জীবনের প্রধান তিনটি ঘটনা বা ত্রিস্মতি এই তিথিতে ঘটায় বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিটি “বুদ্ধ পূর্ণিমা” নামে সমধিক পরিচিতি লাভ করেছে ৷ এই দিনে সমস্ত বুদ্ধ মন্দির ও প্যাগোডাতে বুদ্ধ পূজার সঙ্গে হবে পঞ্চশীল , অষ্টশীল , সূত্রপাঠ ,সূত্রশ্রবণ ও সমবেত প্রার্থনা ৷
মন্দির ও বাড়ী সাজানো হয় ফুলের মালায় , জ্বালানো হয় হাজারো বাতি ও প্রদীপ ৷ যখন সাংবাদিকতা করতাম তখন চট্টগ্রামে দেখেছিলাম বৈশাখী পূর্ণিমার “বোধিদ্রুম মেলা “৷
শাক্য বংশীয় কোশল রাজ শুদ্ধধনের রাজধানী ছিল এখনকার নেপালের ” কপিলাবস্তু “৷ সেখানকার লুম্বিনী উদ্যাণে এমনই এক বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে জন্ম হয় মহামানব ” সিদ্ধার্থের ” ৷
জন্মের পর মা মারা যাওয়ায় তাঁকে মাসি গৌতমীর কাছে বড় হতে হয়েছিল – তাই তিনি ” গৌতম ” ৷ কৈশোরে যশোধারার সঙ্গে বিয়ে হয় ৷ রাহুল নামে পুত্র সন্তানের তিনি পিতা হন ৷ একদিন রাজপুত্র সিদ্ধার্থ নগর পরিক্রমায় বের হয়ে জরা , ব্যধি ও মৃত মানুষ দর্শণ করেন ৷ তাঁর ভাবান্তর হয় ৷ মাত্র ২৯ বছর বয়সে সুন্দরী যুবতী স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে রেখে তিনি গৃহত্যাগ করেন ৷ জরা , ব্যধি , মৃত্যু সহ দুঃখের কারন জানতে সব ছেড়ে সন্ন্যাস নেন ৷ রাজগীরে তপস্যার সময় ক্ষুধাকাতর হন সির্দ্ধাথ ৷ অতঃপর সুজাতার হাতে পায়েস খেয়ে দেহকে কষ্ট দিয়ে কোন লাভ নেই বোঝেন ৷ তারপর বুদ্ধগয়ার ময়ূর পাহাড়ে তপস্যা করতে থাকেন ৷ বুদ্ধগয়ায় এক অশ্বথ্থ গাছের নিচে তিনি বোধি বা জ্ঞান লাভ করেন ৷ হন “বুদ্ধ ” ৷ জন্মস্থান – লুম্বিনী , বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির জায়গা – বুদ্ধগয়া , পাঁচ শিষ্যের কছে প্রথম ধর্ম প্রচারের স্থান – সারনাথ এবং মহাপরিনির্বাণ স্থল – কুশীনগর , বৌদ্ধদের কাছে বিশেষ পবিত্র ৷ এছাড়া রাজগীর , বৈশালী , রামগ্রাম , বেঠদ্বীপ , অল্লকপ্পা ও পাবাতে তাঁর অস্থি থাকায় তীর্থস্থান ৷ অন্য ধর্মের মত তাঁর প্রচারিত বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বর নেই ৷ Generator , operator , destructor “- God ” নয় ৷ মানুষের তৃষ্ণা বা আকাঙ্খা তাঁর মতে সৃষ্টিকর্তা ৷ মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্ত্রা ! অহিংসা , পবিত্র মন ও কর্মই তাঁর মতে ধর্ম ৷ তাঁর ত্রিশরণ মন্ত্র ( Three jewels ) হল – ” বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি , ধম্মং শরণং গচ্ছামি ও সংঘং শরণং গচ্ছামি “৷ আর্যসত্য , অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা আটটি আর্যপথ হলো তাঁর দুঃখ নিবারন তত্ব ৷ এগুলো হলো – সম্যক সংকল্প , সম্যক বাক্য , সম্যক কর্ম , সম্যক জীবিকা , সম্যক প্রযত্ন , সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি ৷ যা মেনে চলছে আমরা প্রকৃত মানুষ হতে পারি ৷ আমরা এখন ২৮ তম বুদ্ধ ” গৌতম বুদ্ধের” ধর্মকালে বাস করছি ৷ ৫০০০ বছরের ২৫৫৬বছর হয়েছে ৷ ২৪৪৪ বছর পর আসবেন আরেক বুদ্ধ ৷ বৌদ্ধ ধর্মে সংঘের গুরুত্ব অপরিসীম ৷ বৌদ্ধরাই প্রথম বিহার ও সংঘ স্থাপন করে ধর্ম প্রচার করেন ৷ ভিক্ষু বা ভিক্ষুণীদের থাকার জায়গা বা আশ্রম হলো ” বৌদ্ধ বিহার ” ৷ চিৎ বা চিত্ত থেকেই সাধনা ৷ এখানে ধুতুগর্ভে রাখা থাকে বুদ্ধদেব বা স্থবির( বিশিষ্ট সন্ন্যাসী ) দের চুল ও নখ ৷ তাকে বলে চিত্য বা চৈত্য ৷ এই পবিত্র স্থান ৷ যা আমি ভারতের বহু জায়গায় দেখেছি ৷ “ওঁ মণিপদ্মে হুং ( হে পদ্মমণি , হে নির্বাণ মন্ত্রদাতা ,তুমি মণির মত উজ্বল হয়ে আছো )৷এদিনটি বিশ্ববাসী যেন এই মহামানবেব প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মদ , মাংস , মাছ থেকে দূরে থাকেন ৷ করোনা জর্জড়িত,ঘূর্ণীঝড় পীড়িত , গরিব মানুষকে সাহায্য করেন ৷ মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক স্বরূপ সাদা পোশাক পড়েন ৷ ভগবান বুদ্ধদেবকে জানাই আমার অকুন্ঠ প্রণাম ৷ সবাইকে জানাই “বুদ্ধ পূর্ণিমার ” প্রাণঢালা শুভকামনা ও অভিনন্দন ৷ তিনি বলেছিলেন ,” সবেব সত্তা ভবন্তু সুখীতত্বা” বা জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক ৷ সবাই আনন্দ লাভ করুক।

More from CultureMore posts in Culture »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.