Press "Enter" to skip to content

বিশ্ব স্ট্রোক দিবসে স্ট্রোকের চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্যের দাবী….।

Spread the love

বিশেষ প্রতিনিধি ; কলকাতা, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪। গীতা দেবী, একজন ৬২ বছরের মহিলা, বছর তিনেক আগে হটাৎ একদিন উনার কথা গুলো জড়িয়ে যায়, তারপর উনি চেতনা হারান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বাড়ির লোকেরা জানতে পারেন উনার সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়েছে। অনেকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে উনি ছুটি পান। এতো বছর পরেও উনি ঠিক করে কথা বলতে পারেন না। আমাদের দেশে এরকম মানুষের সংখ্যা অসংখ্য, যাঁরা সেরিব্রাল স্ট্রোক এর পরে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এলেও সারা জীবন বাক প্রতিবন্ধকতাই ভোগেন।

প্রতিবছর অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ বিশ্বজুড়ে “ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক ডে” পালন করা হয়। প্রতি বছর বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ স্ট্রোকের কারণে মারা যায় এবং বহু মানুষ স্থায়ী প্রতিবন্ধকতাই সারা জীবন ভোগেন। ল্যান্সেট নিউরোলজির (২০১৯) রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর সারা বিশ্বে অন্তত দেড় কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। ভারতে এই সংখ্যা ১৮ লক্ষ মতো। পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ট্রোক রুগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রথম দিন থেকে বাক চিকিৎসক বা স্পিচ প্যাথলজিস্ট স্ট্রোক কেয়ার টিমে থাকলে স্থায়ী কথা বলার সমস্যা ৭০ শতাংশ কম হয়। এই প্রসঙ্গে এস এস কে এম হাসপাতালের বাক চিকিৎসক বা স্পিচ প্যাথলজিস্ট মহ: শাহিদুল আরেফিন বলেন যে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে যত মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, তার প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের ভাষা ও বাক জনিত সমস্যা হয়, তা ছাড়াও ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্রিটিকাল কেয়ার এ ভর্তি ৬০ শতাংশ রুগীর ডিসফ্যাজিয়ার (গেলার সমস্যা) সমস্যা হয় এবং সেখান থেকে এসপিরেটেড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক রুগী মারা যান। তিনি আরো বলেন যে আমেরিকান জার্নাল অফ মেডিসিনের (২০২১) রিপোর্ট অনুযায়ী, স্পেচ প্যাথলজিস্টদের পরামর্শ নিয়ে ডিসফ্যাজিয়ার (গেলার সমস্যা) মতো বিষয়ে নজর দিলে গুরুতর অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এমনকি গলাধঃকরণে সমস্যার সঙ্গে কথা বলা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানও একই সঙ্গে সম্ভব। তাতে রোগীর পক্ষে অনেক দ্রুত অনেক বেশি স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে সেরিব্রাল অ্যাটাকের পরবর্তী সময়ে হওয়া শ্বাসযন্ত্রে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে পারে। বাকশক্তি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তো কমেই, তাছাড়া মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাও অনেকাংশ কম হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো বেশ কয়েকটি দেশে স্ট্রোক হওয়ার ফলে কাউকে আইসিইউতে ভর্তি করলে, প্রথম দিন থেকেই স্পিচ প্যাথোলজিস্টদের পরামর্শ নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদলের মধ্যেও তাঁদের রাখা হয়। এব্যাপারে আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন এবং এনএসএইচ গাইডলাইন্সের নির্দিষ্ট নীতিও রয়েছে যা মেনে চলতে হয়। এই নিয়মন অনুযায়ী স্ট্রোক হয়েছে বলে শনাক্ত করা হলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পিচ প্যাথোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হয়। এই নীতি চালু হওয়ার পরে দেখা গেছে যে রুগীর হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় ও চিকিৎসার খরচ ও অনেকাংশে কমে যায়। যদিও ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখনও এই ব্যাপারে উদাসীন। ভারতে মাত্র ২৫ শতাংশ হাসপাতালে স্থায়ী স্পিচ প্যাথলজিস্ট আইসিইউতে বিশেষজ্ঞ টীম এ কাজ করে এবং পুরো বিষয়টিই অবহেলিত। সরকার যাতে এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে হাসপাতালের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হয় সেই জন্য ওয়ার্ল্ড স্ট্রোকে ডে উপলক্ষে অখিল ভারতীয় বাক ও শ্রবণ সংস্থার পশ্চিমবঙ্গ শাখা স্বাস্থ্য ভবনে সাস্থসচিব ও রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠিও পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থার জেনারেল সেক্রেটারি। তিনি চান আইসিইউতে চিকিৎসা চলাকালীন এবং তার পরে পরেই এই চিকিৎসা শুরু করা হোক। এজন্য সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা করুক। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলিতে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, সেই পেশাদারি পদ্ধতি এই রাজ্যে চালু করার সুপারিশও তিনি করেছেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.