Press "Enter" to skip to content

বিশ্বের সর্বকালের সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের লেখিকা আগাথা ক্রিস্টি। গোয়েন্দা উপন্যাস ও অপরাধ কাহিনি লিখে এত জনপ্রিয়তা তাঁর আগে আর কোন লেখক পাননি….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ আ গা থা ক্রি স্টি

বাবলু ভট্টাচার্য : তাঁর বই বিক্রি হয়েছিলো ২০০ কোটি কপির ওপরে। অনূদিত হয়েছে ১০৩টি ভাষায়। বই অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র- থিয়েটারে চলেছে ষাট বছরেরও অধিক সময় ধরে। সমালোচকরা বলতেন, শৈল্পিক গুণে মানে শেক্সপিয়ারের পরেই তাঁর স্থান। সারা পৃথিবীতে ‘দ্য কুইন অফ মিস্টেরি’ নামে পরিচিত তিনি।

হ্যাঁ, বিশ্বের সর্বকালের সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের লেখিকা আগাথা ক্রিস্টির কথাই বলছি। গোয়েন্দা উপন্যাস আর অপরাধ কাহিনি লিখে এত জনপ্রিয়তা তাঁর আগে আর কোন লেখক পাননি।

সাহিত্য জগতের অসাধারণ সৃষ্টিশীল, জনপ্রিয়, সার্থক ও খ্যাতিমান এই ব্যক্তি এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্ম। মা ক্ল্যারা বোহমার ছিলেন আইরিশ বংশোদ্ভূত। বাবা ফ্রেডরিক বোহমার জন্মসূত্রে আমেরিকান; যিনি একজন সফল স্টক ব্রোকার ছিলেন।

মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মালেও আগাথার সে সুখ বেশি দিন টেকেনি। ১৯০১ সালে তাঁর বাবা মাত্র ৫৫ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তখন তিনি মাত্র ১১। মা ও বোনসহ আগাথা পড়েন অকূল পাথারে।

পুরো পরিবার যখন সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে, তখন অসুস্থ হয়ে পড়েন আগাথার মা। সময়টা ১৯১০ সাল। এ অবস্থায় আবহাওয়া বদলের উদ্দেশ্যে পুরো পরিবার, অর্থাৎ মা ও দুই মেয়ে মিসরের রাজধানী কায়রোতে চলে যান এবং তিন মাস কায়রোর ‘গেরিজা প্যালেস হোটেল’-এ অবকাশ যাপন করেন।

কায়রো থেকে ফিরে এসে তিনি মন দেন লেখালেখিতে। প্রথম দিকে সফলতার চেয়ে তাঁর ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি হলেও আগাথা হাল না ছেড়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন।

এর মাঝে আগাথার জীবনে প্রথমবারের মতো আসে ভালোবাসা। ১৯১৪ সালে তিনি বিয়ে করেন আর্চিবল্ড ক্রিস্টিকে। তিনি ছিলেন ‘রয়েল ফ্লায়িং কোর’-এর এক পাইলট। আগাথা ক্রিস্টির একমাত্র মেয়ে সন্তান রোজালিন্ড হিক্সের জন্ম হয়েছিল তার প্রথম স্বামী আর্চিবল্ড ক্রিস্টির ঔরসে।

আগাথার বিয়ের কিছুদিন পরই বেজে ওঠে প্রথম মহাযুদ্ধের দামামা। মিত্রশক্তির হয়ে লড়তে আর্চিবল্ড উড়াল দেন ফ্রান্সে। এ দিকে আগাথা ক্রিস্টিও স্বদেশের মাটিতে থেকে যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। সম্মুখ সমরে নার্স ও ফার্মাসিস্ট হিসেবে যুদ্ধাহত সৈনিকদের সেবা করেন তিনি।
আর্চিবল্ড-আগাথার বিবাহিত জীবন বেশি দিন টেকেনি। বিয়ের তেরো বছরের মাথায় ১৯২৮ সালে আর্চিবল্ডের সাথে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু স্বামীর পদবি ত্যাগ করেননি তিনি।

অপরাধ জগতে অবিসংবাদিত এই রানি লিখে গেছেন ৬৬টি গোয়েন্দা উপন্যাস, ১৪টি ছোটগল্প সঙ্কলন, একটি কাব্যগ্রন্থ, ১৬টি নাটক ও একটি সম্পাদিত বই। এ ছাড়াও মেরি ওয়েস্টম্যাকট ছদ্মনামে তিনি রচনা করেছেন আরো ছয়টি রোমান্টিক উপন্যাস, দু’টি করে কবিতা ও আত্মজীবনীমূলক বই।

ঊর’ ভ্রমণ থেকে আগাথা ক্রিস্টি পেয়েছিলেন Murder in Mesopotamia এবং Death on the Nile উপন্যাসগুলোর কাহিনি। এরপর তিনি সিরিয়া সফর করেন এবং সিরিয়া অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখেন Come, Tell Me How You Live. তারপর আগাথা যান তুরস্ক। ইস্তাম্বুলের ‘প্যারা প্যালেস’ হোটেলের কক্ষেই রচিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস Murder on the Orient Express.

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নার্সের কাজ করার সময় তাঁর পরিচয় হয় এক বেলজিয়ান শরণার্থীর সাথে, যে একসময়ে বিখ্যাত পুলিশ অফিসার ছিল। তার থেকে আগাথা ‘এরকুল পোয়ারো’ চরিত্রটির ধারণা পান। আর ‘মিস মার্পল’ চরিত্রটি সৃষ্টির পেছনে অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর বড় পিসি। আগাথা ক্রিস্টির সৃষ্ট বিপরীতধর্মী এই দু’টি চরিত্র জনপ্রিয়তায় সব যুগের সব রেকর্ড ভাঙতে সফল হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আগাথা ক্রিস্টি লন্ডন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের বিষের সাথে পরিচিত হন। পরবর্তী জীবনে গোয়েন্দা উপন্যাস লিখতে গিয়ে এ বিদ্যা সফলতার সাথে কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি।

তাঁর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘দ্য মাউসট্র্যাপ’ নাটক লন্ডনের West End Theatre -এ ১৯৫২ সাল থেকে বিরতিহীনভাবে মঞ্চস্থ হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে ২৭ হাজার বারেরও বেশি। শেক্সপিয়ার বাদে বিশ্বের অন্য কোনো নাট্যকারের নাটক, দর্শকরা এভাবে পাগল হয়ে দেখেছে বলে জানা নেই।

আগাথা ক্রিস্টির গল্পের অনুপ্রেরণায় বাংলা ভাষায় এবং ভারতীয় সিনেমা জগতে বেশ কিছু চলচিত্র নির্মিত হয়েছে এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলা ছবি হলো ‘চুপি চুপি আসে’, ‘শুভ মহরৎ’ এবং হিন্দিতে ‘গুমনাম’, ‘ধন্ধ’ ইত্যাদি।

এই রহস্য সাহিত্যিকের জীবনটাও ছিলো বেশ রহস্যমন্ডিত। ব্যক্তিগত জীবনকে ব্যক্তিগত রাখতেই ভালোবাসতেন তিনি। একবার ১৯২৬ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান আগাথা। প্রায় চারটি দেশের আইন সংস্থা তল্লাশি করেও তাঁর সন্ধান পেতে ব্যর্থ হয়। প্রায় ১১ দিন পর তাঁকে পাওয়া যায় ইয়র্কশায়ারের এক হোটেলে।

এই ঘটনা নিয়ে নানান গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ বলেন, মহাজাগতিক জীবরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল তাঁকে। আবার কারো মতে এটি ছিল নিছক পাবলিসিটি স্টান্ট। আশ্চর্য ব্যাপার হলো যে এই বিষয় নিয়ে আগাথা নিজে কোনোদিনই মুখ খোলেননি।

১৯৭১ থেকে আগাথা ক্রিস্টির শরীর ভেঙে পড়তে শুরু করে। তিনি বুঝে ফেলেন তার হাতে আর বেশি সময় নেই। রুগ্ন শরীর নিয়েই সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৭৬ সালের ১২ জানুয়ারি ৮৫ বছর বয়সে ইংল্যান্ড মারা যান এই প্রতিভাবান লেখিকা।

আগাথা ক্রিস্টি (Agatha Christie) ১৮৯০ সালের আজকের দিনে (১৫ সেপ্টেম্বর) ইংল্যান্ডের ডেভনে জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.