Press "Enter" to skip to content

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম : বরযাত্রী, রানু সিরিজের গল্পগুলি, সর্গাদপী গরীয়সী, দুয়ার হতে অদূরে, কুশীপ্রাঙ্গনের চিঠি……।

Spread the love

স্মরণঃ বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়

বাবলু ভট্টাচার্য : ‘বরযাত্রী’র ছয়বন্ধু গণশা, ঘোঁতনা, ত্রিলোচন, গোরাচাঁদ, রাজেন এবং কে. গুপ্তের সঙ্গে পরিচয় নেই বাংলা সাহিত্যের এমন পাঠক বোধহয় কমই আছেন। অল্প দু’চার কথায় কি করে জীবন্ত চরিত্রদের সৃষ্টি করা যায় বা একটা সমাজকে এরকম সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা যায়— বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় সহজে সবাইকে সেটি দেখিয়ে দিয়েছেন। কৌতুক রসের এরকম বই বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি নেই।

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ২৪ অক্টোবর বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলার পান্ডুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তার বাবা বিপিনবিহারী মুখোপাধ্যায়। তাদের আদি নিবাস হুগলী জেলার চাতরায়। কিন্তু তার তিন পুরুষের বাস বিহারের দ্বারভাঙ্গায়। তিনি দারভাঙ্গা রাজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, রিপন কলেজ থেকে আইএ এবং পাটনা বিএন কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।

১৯১৬ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত কর্মজীবনে বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা, ধনী পরিবারে গৃহ-শিক্ষকতা, দ্বারভাঙ্গা-মহারাজের একান্ত সচিব, রাজপ্রেসের ‘ইন্ডিয়ান নেশন’ পত্রিকার ম্যানেজার পদে নিয়োজিত ছিলেন।

কৌতুক রসের তার আরেকটি বিখ্যাত সৃষ্টি ‘রানু’ সিরিজের গল্পগুলি। কিন্তু বিভূতিভূষণের প্রতিভা ছিল বহুমুখী। ছোটদের জন্য পুজোসংখ্যায় তিনি নিয়মিত লিখেছেন— ‘পোনুর চিঠি ও অন্যান্য গল্প’— যা বুড়োরাও পরম উৎসাহে পড়েছে।

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম : বরযাত্রী, রানু সিরিজের গল্পগুলি, সর্গাদপী গরীয়সী, দুয়ার হতে অদূরে, কুশীপ্রাঙ্গনের চিঠি, একই পথের দুই প্রান্তে, অযাত্রার জয়যাত্রা, পনুর চিঠি, কৈলাশের পাঠরানী, দুষ্টু লক্ষ্মীদের গল্প, জীবনতীর্থ (আত্মজীবনী), কাঞ্চনমূল্য (শরৎস্মৃতি পুরস্কার পান), এবার প্রিয়ংবদা ইত্যাদি।

‘রাণুর প্রথম ভাগ’ গল্পটিতে একটি ছোট্ট বালিকা আর তার কাকার স্নেহমাখা সম্পর্ক নিয়ে রচিত। পরবর্তীতে বিভূতিভূষণ রাণুকে নিয়ে আরো কয়েকটি গল্প লিখলেও ‘রাণুর প্রথম ভাগ’ গল্পটিই বেশি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। শিশুর মনোজগত পড়তে পারার বিরল ক্ষমতার কারণে বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘রাণুর মেজকা’ হিসেবেও পরিচিত।

তার জনপ্রিয়তম উপন্যাস ‘নীলাঙ্গুরীয়’র নায়ক-নায়িকা ছিলেন বিভূতিভূষণের নিজের মা বাবা। তিনি নিজেও (শৈলেন) স্থান পেয়েছেন সেই উপন্যাসে।

১৯৪৩ সালে খ্যাতনামা পরিচালক গুণময় বন্দ্যোপাধায় ‘নীলাঙ্গুরীয়’ উপন্যাসটি নিয়ে চলচ্চিত্র বানিয়েছিলেন। ছবি বিশ্বাস, যমুনা দেবী, ধীরাজ ভট্টাচার্য প্রমূখ অভিনয় করেছিলেন।

সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ১৩৬৪ সালে সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎস্মৃতি পুরস্কার, ১৯৭২ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে ডি এল রায় রীডারশিপ` বক্তা পুরস্কার, ১৯৭৬ সালে জগত্তারিনী পদক, ১৯৮৬ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট উপাধি এবং ১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বহু পুরস্কার লাভ করেন।

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ১৯৮৭ সালের আজকের দিনে (৩০ জুলাই) বিহারের দ্বারভাঙ্গায় মৃত্যুবরণ করেন ।

More from CultureMore posts in Culture »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.