Press "Enter" to skip to content

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরি নিয়েছিলেন পাথুরিয়াঘাটার জমিদার খেরাতচন্দ্র ঘোষের এস্টেটে সেক্রেটারি ও গৃহশিক্ষক হিসেবে….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

“জীবনকে, খুব কম মানুষই চেনে। জন্মগত ভুল। সংস্কারের চোখে সবাই জীবনকে বুঝিবার চেষ্টা করে, দেখিবার চেষ্টা করে, দেখাও হয় না, বােঝাও হয় না।”

[ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ]

বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতি, নান্দনিকতা, নিসর্গ, আর গ্রাম্য জীবনকে কেউ যদি সবচেয়ে নিখুঁতভাবে সাহিত্যে ফুটিয়ে তুলে আনেন, তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

চরিত্রের উপস্থাপন, অতুলনীয় গদ্য আর দৈনন্দিন জীবনকে বাস্তবিকভাবে সাহিত্যে তুলে আনা থেকে ভাষার অপরূপ উপস্থাপন- সবকিছু মিলিয়ে তাঁর লেখা বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে বাংলা সাহিত্যে।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিঃসন্দেহে বলা যায় প্রকৃতির জীবন শিল্পী। বাংলা কথা সাহিত্যের ব্যাপ্তিতে যার তুলনা পাওয়া ভার।

মজার বিষয় হলো সেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরই সাহিত্যে আসার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। সাহিত্য চর্চা তো দূরে থাক, তার গণ্ডি আবদ্ধ ছিল কেবল পড়ায়। আজীবনই মেধাবী ছিলেন তিনি। বাবার কাছেই বিভূতিভূষণের লেখাপড়ার হাতেখড়ি।

আনুষ্ঠানিক পড়াশোনার হাতেখড়ি গ্রামের পাঠশালায়। এরপর বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। সেখানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। আর্থিকভাবে খানিকটা ধাক্কা খেলেও মেধাবী হওয়ায় অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।

১৯১৪ সালে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স পাশ করার পর ১৯১৬ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বিভূতিভূষণ। ফের একই কলেজ থেকেই বিএ পরীক্ষায়ও ডিস্টিংশনসহ পাশ করেন।

বিএ পাশ করার পর তিনি প্রথম চাকরি পেলেন হরিণাভির একটি স্কুলে। এই স্কুলে থাকাকালীন সময়েই সাহিত্য যাত্রা শুরু হয়েছিল তাঁর।

১৩২৮, মাঘ মাসের ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্প ‘উপেক্ষিতা’। ওই গল্পটি সেই বছর শ্রেষ্ঠ গল্পের পুরস্কারও পেয়েছিল। সেই তাঁর পথচলা শুরু।

একসময় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরি নিয়েছিলেন পাথুরিয়াঘাটার জমিদার খেরাতচন্দ্র ঘোষের এস্টেটে সেক্রেটারি ও গৃহশিক্ষক হিসেবে। এখানে থাকাকালীন সময়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’।

১৯২৫ সালে তিনি ‘পথের পাঁচালী’ রচনা শুরু করেছিলেন এবং লিখতে সময় নিয়েছিলেন ৩ বছর। সাহিত্যিক ও বিচিত্রার সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এ লেখাটি পছন্দ করে বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশ করলে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

পাথুরিয়াঘাটার জমিদার খেরাতচন্দ্র ঘোষের জমিদারির অন্যতম অংশ ছিল বিহারের ভাগলপুর সার্কেলে। বিভূতিভূষণ সহকারী ম্যানেজার নিযুক্ত হয়েছিলেন সেখানে। এখানে এসেই তাঁর সামনে উন্মোচন হলো প্রকৃতির এক বিশাল দুয়ার।

১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভাগলপুরে থাকাকালীন বিভূতিভূষণ তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘আরণ্যক’ লেখার পরিকল্পনা করেন। এই সময় বছর চারেক পাথুরিয়া ঘাটা এস্টেটের সহকারী ম্যানেজার হিসাবে ইসমাইলপুর এবং আজমাবাদের অরণ্য-পরিবেশে থাকার ফলে আজন্ম প্রকৃতির পূজারী বিভূতিভূষণ ব্যাপক পরিভ্রমণ ও নানা বিষয়ে পর্যবক্ষেণ করেছিলেন যার ফলে বিভূতিভূষণের প্রকৃতি প্রেম আরও প্রগাঢ় হয়েছিল।

প্রবাসী মাসিক পত্রিকায় কার্তিক ১৯৩৮ থেকে ফাল্গুন ১৯৩৯ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল ‘আরণ্যক’। এটি ছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চতুর্থ উপন্যাস।

যদিও এরই মধ্যে বিভূতিভূষণ লিখে ফেলেছেন পথের পাঁচালী ট্রিলজির দ্বিতীয় উপন্যাস ‘অপরাজিত’ এর দুই খণ্ড ও ‘দৃষ্টিপ্রদীপ’ উপন্যাস।

সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের কাহিনিকে চলচ্চিত্রে রূপদানের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা করেন। চলচ্চিত্রটি দেশি-বিদেশি প্রচুর পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করে। এরপর ‘অপরাজিত’ অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’। চলচ্চিত্র তিনটি ‘অপু ট্রিলজি’ নামে সারাবিশ্বে পরিচিত।

‘অশনি সংকেত’ উপন্যাস নিয়েও সত্যজিৎ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এটিও বিশেষ প্রশংসা অর্জন করে। মাত্র কয়েক বছর আগে শিশুতোষ উপন্যাস ‘চাঁদের পাহাড়’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটি ভারতীয় বিভিন্ন ভাষা এবং ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে- ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’ (১ম ও ২য় খণ্ড), ‘দৃষ্টিপ্রদীপ’, ‘আরণ্যক’, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘বিপিনের সংসার’, ‘অনুবর্তন’, ‘দেবযান’, ‘কেদার রাজা’, ‘ইচ্ছামতী’, এবং ‘অশনি সংকেত’।

গল্প-সংকলনের মধ্যে- ‘মেঘমল্লার’, ‘মৌরীফুল’, ‘যাত্রাবাদল’, ‘জন্ম ও মৃত্যু’, ‘কিন্নর দল’, ‘বিধুমাস্টার’, ‘ক্ষণভঙ্গুর’, ‘অসাধারণ’, ‘মুখোশ ও মুখশ্রী’, ‘আচার্য কৃপালিনী কলোনি’ (পরে ‘নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব’), ‘অনুসন্ধান’, ‘ছায়াছবি’, ‘সুলোচনা’ ইত্যাদি।

‘ইছামতী’ উপন্যাসের জন্য তিনি মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫১) লাভ করেন। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার (লেখকের জন্মস্থান) পারমাদান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নাম লেখকের সম্মানার্থে রাখা হয়েছে ‘বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের আজকের দিনে (১২ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বনগাঁ মহকুমার ঘোষপাড়া-সুরারিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.