শ্রীজিৎ চট্টরাজ / গোপাল দেবনাথ : কলকাতা, ৯ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সাল থেকে অনুষ্ঠিত উল্টোরথ পুরস্কার বেশ কিছু বছর বন্ধ থাকার পর আবার উল্টোরথের নতুন পরিচালন কমিটির উৎসাহে শুরু ১৯৮২সালে। ঐতিহাসিক সে পুরস্কার অনুষ্ঠান পরিচালনায় পত্রিকার বিনোদন বিভাগের দায়িত্ব পেয়ে গর্বিত হয়েছিলাম। সেবার পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এখনও মনে আছে মাইক হাতে নিয়ে পুরস্কার গ্রহণের পর তিনি বলেছিলেন, পুরস্কার তিরস্কার কলঙ্ক কণ্ঠের হার। বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলেন হংস মধ্যে বক যথা। ঠিক একই কথা আরেকটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলে ছিলেন অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়।
একজন শিল্পীর সমাজ স্বীকৃতির সুপ্ত বাসনা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু পুরস্কারে অহংকার বড়ই ক্ষতিকারক। প্রত্যেক শিল্পীসত্তার কাছে সত্যিই পুরস্কার তিরস্কার কলঙ্ক কণ্ঠের হারের মতোই হওয়া উচিত। বাংলার বিনোদন জগতের স্বর্ণযুগ বলা হয় ৬০ ও ৭০এর দশক। বিনোদন বলতে যাত্রা, থিয়েটার, ও সিনেমা। মুষ্টিমেয় শিল্পী, মুষ্টিমেয় পরিসর। ফলে পুরস্কারের আর্থিক মূল্যের চেয়েও গুরুত্ব পেত সাম্মানিক স্বীকৃতি। কলকাতার বিনোদন সাংবাদিকতার সংগঠন বিএফজেএ পুরস্কারেরও এক কৌলিন্য আজও আছে। এখন বিনোদনের পরিধি বহুগুণ বেড়েছে। বেড়েছে শিল্পী সংখ্যা। প্রতিভা স্ফুরণের বহু পথ। মিডিয়ার হাজারও শাখা প্রশাখার দৌলতে কালকের অনামী কেউ রাতারাতি পৌঁছে যেতে পারেন খ্যাতির শিখড়ে। সবক্ষেত্রেই যে যোগ্যতার বিচার হয় তাও নয়। কিন্তু সংস্কৃতিপ্রেমী বহু সংস্থা এগিয়ে এসেছেন শিল্পী স্বীকৃতির দায়ভার গ্রহণ করতে।
এমনই এক সাংস্কৃতিক সংস্থা উড়ান। পরিচালক রিংকি অমর। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কোলকাতার প্যান এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হোটেল ব্যাঙ্কয়েটে সংস্থার তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। হাজির ছিলেন উড়ান সংস্থার কত্রী রিংকি অমর, অভিনেত্রী সুদীপ্তা ব্যানার্জি, সায়ন্তনী গুহ ঠাকুরতা, মডেল স্নেহা ঘোষাল প্রমুখ। সংস্থার প্রধান রিংকি অমর জানালেন, বাংলায় বহু পুরস্কারের ভিড়ে নবজাতক কলাকৃতি ট্রফি প্রদান হবে তাঁদেরও, যাঁরা এতদিন বিনোদনের জগতের কর্মযজ্ঞে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও ব্রাত্য থেকে গেছেন। যেমন ফ্যাশন ডিজাইনার, সেলিব্রেটি নিউট্রিশনিস্ট, কস্টিউম জুয়েলারি ডিজানাইনার প্রমুখ। পুরস্কারপ্রাপকদের মধ্যে শুধু টলিউড বা বলিউডের ব্যক্তিত্বরা শুধু নয়, থাকবেন প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ব্যক্তিত্বরাও। বিচারকদের তালিকায় থাকবেন বিনোদন জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরাও। অনুষ্ঠানটি হবে আগামী ২৪ফেব্রুয়ারি কলকাতার তারকাখচিত হোটেল জে, ডব্লিউ ম্যারিয়টে। বিভিন্ন বিভাগে ৩০টি পুরস্কার দেওয়া হবে। এই দিনেই চোখ ধাঁধানো ট্রফিটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন উপস্থিত কর্মকর্তা সহ অতিথিবৃন্দ। বিশ্বের সব পুরস্কার নিয়ে এক বিতর্কও দানা বাঁধে। বাদ নেই আমাদের দেশের সরকারি পুরস্কার ও। তালিকায় যেমন নোবেল পুরস্কার আছে, তেমন আছে অস্কার পুরস্কারও। তবু শিল্পী মনে তাঁদের কাজের স্বীকৃতির এক অমোঘ আকর্ষণ থাকে। পুরস্কার স্বীকৃতি শিল্পী বা কলকাকুশলীদের উৎসাহিত করে সেটাই বা কম কিসের।
Be First to Comment