ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা, ২৪ মে, ২০২৫। শুরু করছি আপনভোলা কবির জীবনের একটি কাহিনী দিয়ে ৷- “বিদ্রোহী কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে তাঁর জন্মস্থান চুরুলিয়া গ্রাম ” !
বিখ্যাত কবি হয়েও তিনি ছিলেন একবারে অন্যরকম ৷ এজন্য অনেকবার নানা কষ্ট , নির্যাতন তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে ৷ সেরকমই একটা সত্য কাহিনি দিয়ে করছি তাঁকে জন্মদিনে স্মরণ ৷ প্রণাম৷
“তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ” – সকলের খুব প্রিয় একটি নজরুলগীতি । এর পিছনে রয়েছে এক করুণ ভালোলাগার কাহিনি ৷কাজী নজরুল ইসলাম এই গানটি ট্রেনে বসে লিখেছিলেন । উনি যে সিটে বসেছিলেন তার কাছেই বসেছিল এক দম্পতি । ঐ মহিলাকে দেখে নজরুল তার প্রেমে পড়ে যান । তবে মহিলাটি যে বিবাহিতা তা নজরুল জানতেন না । মহিলাকে দেখে তিনি কাগজ নিয়ে লিখতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর মহিলাটির স্বামী টের পেলেন, নজরুল কিছু একটা লিখছেন এবং লেখার সময় তার স্ত্রীর দিকে বারবার তাকাচ্ছেন । মহিলার স্বামী সন্দেহ করলেন, এই লেখা প্রেমপত্র না হয়ে যায় না ! লোকটি নজরুলের কাছে গেলেন এবং লেখাটি দেখতে চাইলেন । দেখলেন, তাতে লেখা –
“তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়
সে কি মোর অপরাধ
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিনী
বলে না তো কিছু চাঁদ ।।
চেয়ে চেয়ে দেখি ফোটে যবে ফুল
ফুল বলে না তো সে আমার ভুল
মেঘ হেরি ঝুরে চাতকিনী
মেঘ করে না তো প্রতিবাদ ।।
জানে সূর্যেরে পাবে না তবু অবুঝ সূর্যমুখী
চেয়ে চেয়ে দেখে তার দেবতারে
দেখিয়াই সে যে সুখী ।
হেরিতে তোমার রূপ মনোহর
পেয়েছি এ আঁখি ওগো সুন্দর
মিটতে দাও, হে প্রিয়তম,
মোর নয়নের সেই সাধ ।।”
লোকটি খুব রেগে গেলেন এবং নজরুলকে যাচ্ছেতাইভাবে গালাগালি করলেন । শাসানি দিলেন লোক ডেকে গণধোলাই খাওয়াবেন ৷আশপাশের লোকজনকে ডাকলেন ৷ কিছুলোক কবিকে চিনতো তারা এসে বলল – আপনি জানেন ইনি কে ? মহিলার স্বামী বললেন – না । তখন লোকগুলি বলল – ইনি বাংলার বিখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলাম । লোকটি তারপর কবির কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং কবি মার থেকে নিষ্কৃতি পেলেন ! কিন্তু , রয়ে গেল তাঁর একটি অমর গান !
এবার জানাই তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী ৷ বাংলার১১জ্যেষ্ঠ ১৩৬৬(১৮৯৯ : ২৫শে মে, মঙ্গলবার, )জন্ম। তৎকালিন বর্ধমান এখনকার পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের কাছে জামুরিয়া থানার ” চুরুলিয়া ” গ্রামে তাঁর জন্ম ৷ডাক নাম : দুখুমিয়া ও তারাখ্যাপা। পিতা : কাজী ফকির আহমদ, মাতা : জাহেদা খাতুন। পিতামহ : কাজী আমিনুল্লাহ। মাতামহ : মুনশী তোফায়েল আলী।
১৯০৮ : পিতার মৃত্যু। বয়স প্রায় ৬০ বছর।
১৯১০ : গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশ। মসজিদের ইমামতি, মাজারের খাদেম। সুমধুর কন্ঠের জন্য তিনি দারুন আজান দিতে পারতেন ৷
১৯১১ : ’নবীনচন্দ্র ইন্সটিটিউটে’ ষষ্ঠ শ্রেণীতে পাঠ ও চাচা বজলে করিমের কাছে ফারসি ভাষা সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ। স্থানীয় লেটো দলের জন্য বাংলা-উর্দু-ফারসি-ইংরেজি মেশানো ভাষায় ’কবিগান-পাঁচালি-প্রহসন নাটক’ ইত্যাদি রচনা।লেটো রাঢ় বাংলার যাত্রা জাতীয় একরকম নাটক ৷ যাতে আঞ্চলিক ভাষা ও গ্রাম্যতা দোষ থাকে ৷
১৯১২ : আসানসোলে চা-রুটির দোকানে কাজ ৷
১৯১৪ : ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে ক্লাস সেভেন – দরিরামপুরে বছরখানেক ছিলেন।
১৯১৫ : সিয়ারসোল হাই স্কুলে ক্লাস এইটে ভর্তি – দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন এখানে। কবিতাচর্চা। সেখানে কবিতা লিখে পুরস্কৃত হন ৷ তিনটি অভিনন্দন পত্র লিখেছিলেন ! ঐ বয়সে !
১৯১৭ : ছাত্র থাকাকালে নাম লেখালেন ৪৯ নং বাঙ্গালী পল্টনে। নৌশোরার ট্রেনিং শেষে করাচিতে গেলেন। ব্যাটালিয়ান কোয়ার্টার মাষ্টার পদে প্রমোশন। সেখানেও ঊর্দ্দু , ফারসী ভাষা শেখেন ৷
১৯১৮ : মাসিক ’সওগাত’ ও ত্রৈমাসিক ’বঙ্গীয়-মুসলমান-সাহিত্য-পত্রিকা’ প্রকাশিত।
১৯১৯ : সাহিত্যে প্রথম প্রবেশ। করাচি থেকে গল্প পাঠালেন, ’বাউন্ডেলের আত্নকাহিনী’ ’সওগাতে’ প্রকাশিত হলো জ্যৈষ্ঠ ১৩২৬ সংখ্যায়। প্রথম প্রকাশিত কবিতা ’মুক্তি’ ত্রৈমাসিক ’বঙ্গীয়-মুসলমান-সাহিত্য-পত্রিকা’ শ্রাবন ১৩২৬ সংখ্যায়।
১৯২০ : করাচি থেকে কলকাতায়। বাল্যবন্ধু শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মেসে, পরে কমরেড মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে ’বঙ্গীয় মুসলমান-সাহিত-সমিতি’র অফিসের একটি ঘরে। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের অর্থানুকূল্যে নজরুল ও মুজাফ্ফর আহমেদর যুগ্ম-সম্পাদনায় সান্ধ্য দৈনিক ’নবযুগ’-এর আত্মপ্রকাশ। নজরুল ঐ বছরই ’নবযুগ’ ছেড়ে দেন।
১৯২১ : এপ্রিল মাসে আলী আকবর খানের সঙ্গে কুমিল্লা গেলেন, দৌলতপুরে আসেন, আ-আ-খানের ভাগ্নি সৈয়দা খাতুনের সঙ্গে প্রণয়। ১৮ই জুন বিবাহ। প্রথমা স্ত্রীর নাম দিয়েছিলেন ” নার্গিস ” ৷ ঘরজামাই না থাকতে চাওয়ায় বিচ্ছেদ হয় ৷আ-আ-খানের পরিবারের সঙ্গে নজরুলের বিরোধ, এবং রাতেই দৌলতপুর ত্যাগ। ঘটনাচক্রে নভেম্বর মাসে আবার কুমিল্লায় আসেন। ভারতে প্রিন্স অব ওয়েলস্-এর আগমনে প্রতিবাদ ও হরতাল। প্রতিবাদী মিছিলে স্বরচিত গান গেয়ে নজরুলের অংশগ্রহন। ডিসেম্বর মাসের শেষে রাত জেগে ’বিদ্রোহী’ কবিতা লেখেন। প্রথম প্রবন্ধ ’তুর্কি মহিলার ঘোমটা’ ’সওগাত’ প্রত্রিকার কার্তিক ১৩২৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ৷
১৯২২ : সাপ্তাহিক ’বিজলী’ ও ’মোসলেম ভারত’ প্রত্রিকায় বছরের প্রমেই প্রাকশিত হলো ’বিদ্রোহী’ কবিতা। এর পরই অ্যনান্য পত্রিকায় পুনর্মুদ্রিত হলো। বিপুল আলোড়নের সৃষ্টি করলো এই কবিতা। ’বিদ্রোহী কবি’ অভিধাটি নজরুলের নামের সঙ্গে চিরকালের জন্য যুক্ত হয়ে গেলো। প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ’ব্যথার দান’, প্রথম কবিতাগ্রন্থ ’অগ্নি-বীণা’, প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ ’যুগ-বাণী’(যুগ-বাণী
বাজেয়াপ্ত হলো)। ১১ই আগষ্ট নজরুলের সম্পাদনায় অর্ধ-সাপ্তাহিক ’ধুমকেতু’ আত্নপ্রকাশ করলো। ২৬শে সেপ্টেম্বর ’আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য ’ধুমকেতু’ বাজেয়াপ্ত হলো এবং নজরুল গ্রেফতার হলেন।১৯২২ সালের ১৩ অক্টোবরের ধূমকেতুতে তিনি প্রথম “ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী তোলেন ৷
১৯২৩ : ৭ই জানুয়ারী রচনা করলেন ’রাজবন্দীর জবানবন্দী’। কবি এক বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলেন। কবির অনশন ধর্মঘট। অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র দাসের কারামুক্তির দাবীতে তিনি ” পূর্ণ অভিনন্দন” কবিতাটি লেখেন ৷ সেখানেই প্রথম ” জয় বাংলা ” কথাটি লেখেন ৷ যা অনেক পরে বঙ্গবন্ধু মুজিব বাংলাদেশের “জাতীয় শ্লোগানে” পরিণত করেন ৷রবীন্দ্রনাথ তাঁর ’বসন্ত’ নাটক উৎসর্গ করলেন নজরুলকে। ডিসেম্বর মাসে নজরুল মুক্ত হলেন। কারামুক্তির পর মেদেনীপুরে সংবর্ধনা। তিনি ছিলেন কুলী , মজুর , সর্বহারা মানুষের কবি ৷ তাই ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার আলর্বাট হলে তাঁকে ” বাঙ্গালী জাতির কবি ” অভিধা দেওয়া হয় ৷ সাহিত্য-প্রত্রিকা ’কল্লোল’ প্রকাশিত নজরুল সাহিত্যপত্রের নিয়মিত লেখক।
১৯২৪ : ২৫শে এপ্রিল কলকাতায় আশালতা সেনগুপ্তা-র সঙ্গে নজরুলের বিবাহ৷ তিনি নাম দেন “প্রমীলা “। প্রথম পুত্র আজাদ কামালের জন্ম – শৈশবেই অকালমৃত্যু। ’বিষের বাঁশী’ ও ’ভাঙার গান’ প্রকাশের পরে-পরেই সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত।
১৯২৫ : ’চিত্তনামা’ প্রকাশিত। কবি-র পরিচালনায় সাপ্তাহিক ’লাঙল’ প্রত্রিকার প্রকাশ, ১৬ই ডিসেম্বর।
১৯২৬ : দ্বিতীয় পুত্র বুলবুল-এর জন্ম। গজল রচনার সূত্রপাত। প্রথম গজল ’বাগিচায় বুলবুলি তুই’। নবপর্যায় মাসিক ’সওগাত’ প্রকাশিত।
১৯২৭ : ’মুসলিম সাহিত্য সমাজ’-এর বার্ষিক অধিবেশনে আমন্ত্রিত হয়ে ঢাকা সফর। ঢাকা থেকে ’মুসলিম সাহিত্য সমাজ’-এর বার্ষিক মুখপত্র ’শিখা’ প্রকাশিত। ঢাকা থেকে ’প্রগতি’ প্রকাশিত। কলকাতা থেকে মাসিক ’নওরোজ’ প্রকাশিত। ’মাসিক মোহাম্মদী’ প্রকাশিত। নজরুল এসব পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন ৷
১৯২৮ : মাতার মৃত্যু। বমর্ণ পাবলিশিং হাউস ও ডি, এম, লাইব্রেরী থেকে কবির শ্রেষ্ঠ কবিতাসংগ্রহ ’সঞ্চিতা’-র দুটি স্বতন্ত্র সংস্করণ প্রকাশিত। যা রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন ৷
১৯২৯ : কলকাতার ’এ্যালবার্ট’ হলে সমগ্র বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ’জাতীয় কবি’ রূপে সংবর্ধনা। সভাপতি : আচার্য প্রফুল−চন্দ্র রায় (১৮৬১-১৯৪৪)। অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি : এস ওয়াজেদ আলী (১৮৭৯-১৯৫৪)। কবির তৃতীয় পুত্র কাজী সব্যসাচীর জন্ম (মৃত্যু ১৯৭৯)। মন্ময় রায়ের ’মহুয়া’ নাটকের গান রচনা ও ব্যাপক লোকপ্রিয়তা।
১৯৩০ : বুলবুলের মৃত্যু ৮ই মে। ’প্রলয়-শিখা’ ও ’চন্দ্রবিন্দু’ কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত ৷ গ্রন্থটি সাথে সাথেই বাজেয়াপ্ত হয় । মন্ময় রায়ের ’কারাগার’ নাটকের একগুচ্ছ সংগীত রচনা করেন। স্বনির্বাচিত সংগীতসংগ্রহ ’নজরুল-গীতিকা’ প্রকাশিত।তাঁর গান সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সৌভাগ্য হয়েছিল নজরুল ঘনিষ্ঠ এবং প্রাবন্ধিক নারায়ণ চৌধুরী ও কল্পতরু সেনগুপ্তর কাছে ৷ এঁদের সাথে চুরুলিয়ায় “নজরুল জয়ন্তীতে” সারা রাত কাটিয়েছিলাম ৷
১৯৩১ : ২১শে ফেব্রুয়ারি ’ম্যাডাম থিয়েটার্স লিমিটেড’ এ ’সুরভান্ডারী’ নিযুক্ত। নজরুলের ছয় মাসের কারাদন্ডাদেশ, শেষ-পর্যন্ত এই কারাদন্ডাদেশ কার্যকর হয়নি। কনিষ্ঠ পুত্র কাজী অনিরুদ্ধের জন্ম (মৃত্যু ১৯৭৪)।
১৯৩২ : সিরাজগঞ্জে বঙ্গীয় মুসলিম তরুণ সম্মেলনে সভাপতিত্ব।
১৯৩৩ : ৩রা ডিসেম্বর পাইওনিয়ার কোম্পানির ফিল্ম ডিরেক্টর হিসাবে চুক্তিবদ্ধ। এইচ. এম. ভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে ’পুতুলের বিয়ে’ নাটিকা প্রকাশিত। ’বুলবুল’ পত্রিকা প্রকাশিত। যোগেশ চৌধুরীর ’মীরাবাঈ’ রেকর্ড-নাট্যে নজরুল-রচিত গান।
১৯৩৪ : ১লা জানুয়ারী ’ধ্রুব’ ছায়াছবি মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রে কবি নারদের ভুমিকায় অভিনয় করেন। মূলত ছিলেন সংগীত-পরিচালক। গ্রামোফোন রেকর্ডের দোকান ’কল-গীতি’ স্থাপন। ঢাকার “নজরুল ইন্সিটিউটের সাথে যুক্ত সুধীন দাস ও নীলিমা দাসের বাড়ী গিয়ে তাঁর বৈচিত্র্যপূর্ণ গান ও তার কাহিনী শুনে অসাধারন প্রতিভাকে উপলব্ধি করি ৷ মনে পড়ছে প্রয়াত বিশিষ্ট নজরুলগীতি শিল্পী খালেদ হোসেনকে যাঁর ঢাকার মহম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসায় গিয়ে নজরুল গবেষণা সর্ম্পকে কত কিছু জেনেছি ৷ পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক নজরুল গবেষণার খোঁজ মাঝে মাঝে পেতাম ছোটবেলার বন্ধু চুরুলিয়ার গ্রন্থাগারিক “অদীপকুমার চট্টোপাধ্যায়ের” কাছে ৷
১৯৩৫ : নজরুল রচিত ’বিয়ে-বাড়ী’ রেকর্ড নাটিকা প্রকাশিত। রেকর্ডে নজরুলের নকশা ’ভ্যাবাকান্ত’।
১৯৩৬ : এইচ. এম. ভি থেকে ’বিদ্যাপতি’ ও ’ঈদুল ফিতর’ রেকর্ড নাটিকা প্রকাশিত।
১৯৩৭ : কলকাতা বেতারকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হলেন কবি। অসুস্থতার আগে পর্যন্ত যুক্ত থাকেন।১৯৪২ সালের ৯ জুলাই তাঁর স্ট্রোক হয় ৷ ৩৪ বছর এরপর তিনি পিক্স ডিজেজে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে ছিলেন ৷
১৯৩৮ : নজরুল রচিত ’দেবীস্ত্ততি’ বেতারে সম্প্রচার। নজরুল কাহিনী অবলম্বনে ’বিদ্যাপতি’ চলচ্চিত্র ২রা এপ্রিল ’চিত্রা’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি লাভ করে। এইচ. এম. ভি রেকর্ড থেকে রেকর্ড নাটিকা ’জন্মাষ্টমী’ প্রকাশিত। রবীন্দ্রনাথের ’গোরা’ ছায়াছবিতে সংগীত পরিচালনা।
১৯৩৯ : এইচ. এম. ভি রেকর্ড থেকে নজরুল-রচিত ’পুরনো বলদ নতুন বউ’ এবং ’আল্লার রহম’ নাটক দুটি প্রকাশিত। কবি-রচিত ’বিজয়া’ ও ’হরপ্রিয়া’ বেতারে সম্প্রচার।
১৯৪০ : ’নবরাগমালিকা’ নামে নজরুল-সৃষ্ট নতুন রাগ-রাগিনী সংম্বলিত অনুষ্ঠান সম্প্রচার। আকাশবানী থেকে ছোটদের ’জাগো সুন্দর চির কিশোর’ নাটক সম্প্রচারিত। ’বনের বেদে’ রেকর্ড নাটিকা প্রকাশিত। বেতারের ত্রয়োদশ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে প্রচারিত হয় নজরুল-রচিত গীতিচিত্র ’আকাশবানী’।
১৯৪১ : ’নবযুগ’-এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে যোগদান। ৫ ও ৬ই এপ্রিল ’বঙ্গীয়(মুসলমান-সাহিত্য-সমিতির’র রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব। এইচ. এম. ভি রেকর্ড থেকে নজরুল-রচিত ’বিলাতী ঘোড়ার বাচ্চা’ ও ’বাঙালির ঘরে হিন্দি গান’ কৌতুক নাটিকাদ্বয় প্রকাশিত।
১৯৪২ : হিন্দি ’চৌরঙ্গী’ ছায়াছবিতে গীত রচনা। বাংলা ’চৌরঙ্গী’ ছবিতে সংগীত পরিচালক। অসুস্থ ও বাকশক্তিরহিত। লুম্বিনী পার্ক ও রাঁচির মানসিক হাসপাতালে ব্যর্থ চিকিৎসা।
১৯৪৩ : প্রেমাঙ্কুর আতর্থী -পরিচালিত ‘দিকশূল‘ ছায়াছবিতে নজরুলের দুটি গান। কাহিনী : উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
১৯৪৪ : বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা‘ প্রত্রিকার ‘নজরুল-সংখ্যা‘ প্রকাশিত।
১৯৪৫ : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃক ’জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ প্রদান।
১৯৪৬ : নজরুল পরিবারের সদস্যা তাঁর শাশুড়ি ‘গিরিবালা দেবী‘ নিরুদ্দেশ।
১৯৪৯ : কবি সম্পর্কিত প্রথম গ্রন্থ কাজী আবদুল ওদুদ (১৮৯৪-১৯৭০)-এর ’নজরুল প্রতিভা’ প্রকাশিত।
১৯৫৩ : ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে ব্যর্থ চিকিৎসা – ১০ই মে থেকে ১৫ই ডিসেম্বর দেশের বাহিরে অবস্থান।
১৯৬০ : ভারত সরকার-কর্তৃক ’পদ্মভূষণ’ উপাদি দান।
১৯৬৬ : নজরুল-রচনাবলী প্রথম খন্ড প্রকাশিত হলো। কবির মৃত্যুর পরে ১৯৮৪ সালে প্রাথমিকভাবে সমগ্র নজরুল-রচনা সংকলন সম্পুর্ণ হয়। এই রচনাবলী-র সম্পাদক আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪) দশ বছর পরে (১৯৯৩) নজরুল-রচনাবলী নতুনভাবে চার খন্ডে
পুনঃসম্পাদিত হয় নয়জনের একটি সম্পাদনা-পরিষদ-কর্তৃক – এই সম্পাদনামন্ডলীর সভাপতি আনিসুজ্জামান।
১৯৬৯ : রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃক সন্মানসূচক ডি. লিট. উপাধি প্রদান।
১৯৭২ : ২৪শে মে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে জ্যেষ্ঠ পুত্রবধু উমা কাজী ও অনান্য আত্নীয়স্বজন সমেত বাংলাদেশে আনীত।
১৯৭৪ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি. লিট. উপাধি প্রধান।
১৯৭৬ : বাংলাদেশ সরকার-কর্তৃক ’নাগরিকত্ব’ ও একুশে ফেব্রুয়ারি স্বর্ণপদক’ দান। মৃত্যু : সকাল এগারোটা, ২৯শে আগষ্ট, ১২ই ভাদ্র ১৩৮৩, রোববার। পি. জি. হাসপাতাল, ঢাকা। সেদিনই সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সন্মানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবিকে সমাহিত করা হয়।তিনি ২১ কাব্য গ্রন্থ ও প্রায় তিন হাজার বিভিন্ন ধরনের গান লিখে গেছেন ৷ তাঁর গান “রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ” ছাড়া যেমন ঈদ উল ফেতর এখন অকল্পনীয় তেমনি “তাঁর তিমির বিদারী অলখ বিহারী কৃষ্ণমুরারী ” বাংলার অন্যতম সেরা ভজন ৷ আবার আমরা কালী পুজোয় বাজাই তাঁর শ্যামাসঙ্গীত ” মায়ের পায়ে জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন ” ! তিনি বাংলাদেশের ” জাতীয় কবি” ৷ সেখানকার “রণসঙ্গীতও হলো তাঁর ” চলরে চলরে চল” এই কবি , সঙ্গীতজ্ঞ , সঙ্গীতস্রষ্ঠা , ধার্মিক , অসাম্প্রদায়িক , দেশপ্রেমী , ঔপনাসিক ও দার্শনিককে জানাই আমার প্রণাম ৷ আর সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে হয়নিকো “নজরুল”৷
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে শ্রর্দ্ধাঘ্য….।

More from BooksMore posts in Books »
- মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ও ধর্মচিন্তার প্রকাশ দেখা যায় জামাই ষষ্ঠী ব্রতে….।
- “Load the Box” Book Fair – book fair Returns of Acropolis Mall to delight book enthusiasts….
- এমনও তো হতে পারে কোনো এক জন্মে আমিই ছিলাম তোমার ঘরে মৃণালিনীর বেশে….।
- হিন্দু নারীর সিঁদুর মুছিয়ে গর্বের ব্যঙ্গ উক্তি, “বলগে প্রধানমন্ত্রীকে তোরা বুঝুক জঙ্গি শক্তি”….!
- কল্যাণীতে বিশ্বমানের আলোচনাসভায় সত্যজিৎ রায়….।
- Highlights from the inauguration of Boiparay Boi Utsab…..
More from InternationalMore posts in International »
- শিল্পী চক্রবর্তীর কাহিনী ও পরিচালনায় সামাজিক বার্তা নিয়ে নির্মিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘দায়ী কে’?
- TV9 বাংলার নতুন নিউজ সিরিজ ‘ঘরের শত্রু’ ……।
- মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ও ধর্মচিন্তার প্রকাশ দেখা যায় জামাই ষষ্ঠী ব্রতে….।
- পাঁশকুড়ায় চুরির অপবাদেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা ক্লাস সেভেনের পড়ুয়ার….।
- আলোঝলমল ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রনে সেজে উঠল কলকাতার ৩ নম্বর গভর্নমেন্ট প্লেস এর শতাব্দী প্রাচীন আয়কর ভবন….।
- মহারাজা কাশিমবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নতুন কম্পিউটার ল্যাব….।
More from MusicMore posts in Music »
- A.R. Rahman’s “The Wonderment Tour”….
- কলকাতায় আম্বেদকর স্মরণে গুণীজন সম্বর্ধনা ও বিশেষ আলোচনা চক্র….।
- ইমন চক্রবর্ত্তীর একক অনুষ্ঠান বোরোলিন তোমাকে দেখব বলে…।
- শ্রদ্ধাঞ্জলি- এই জাকির, এ হলো রাজিকা…পরিমলদা র ছাত্রী..খুব ভালো নাচে।”শুনে উনি পরিষ্কার বাংলায় বললেন, “ভারী মিষ্টি মেয়ে…তাহলে তো তোমার সঙ্গে বাজাতে হয়।”….।
- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে অল ইন্ডিহিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন উদ্যোগে তরফ থেকে এক বিরাট তারকা খচিত সম্মান প্রদান অনুষ্ঠান….।
- দশরূপে দশভূজার ট্রেইলার প্রকাশ….।
More from PoemMore posts in Poem »
- এমনও তো হতে পারে কোনো এক জন্মে আমিই ছিলাম তোমার ঘরে মৃণালিনীর বেশে….।
- হিন্দু নারীর সিঁদুর মুছিয়ে গর্বের ব্যঙ্গ উক্তি, “বলগে প্রধানমন্ত্রীকে তোরা বুঝুক জঙ্গি শক্তি”….!
- কলকাতায় আম্বেদকর স্মরণে গুণীজন সম্বর্ধনা ও বিশেষ আলোচনা চক্র….।
- সাহিত্য অকাদেমির ওয়েবলাইন সাহিত্যমালার অধীনে আয়োজিত হলো বহুভাষিক কবি সম্মেলন…।
- পালক ঝরার মত খসে পড়বে মেকি শুভাকাঙ্খী, ভন্ড আত্মীয়, বন্ধু….।
- একুশে ফেব্রুয়ারী….।
Be First to Comment