জন্মদিনে স্মরণঃ রা জ শে খ র ব সু (পরশুরাম)
বাবলু ভট্টাচার্য : রাজশেখর ছিলেন বিজ্ঞানী। কাজ করেছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সঙ্গে বেঙ্গল কেমিক্যালে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
রাজশেখর বসুর বাবা ছিলেন দ্বারভাঙা-রাজ-এস্টেটের ম্যানেজার। পৈতৃক নিবাস নদীয়া জেলার বীরনগরে হলেও বাবার কর্মসূত্রে বাস করতেন বিহারে। দ্বারভাঙায় কাটে তার শৈশবকাল।
১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বারভাঙা রাজস্কুল থেকে এন্ট্রাস, ১৮৯৭ সালে পাটনা কলেজ থেকে এফএ, ১৮৯৯ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স -সহ বিএ পাস করেন। তখনও এমএসসি কোর্স চালু না হওয়ায় ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে রসায়নে এমএ পরীক্ষা দেন এবং প্রথম হন।
বাঙালি সাহিত্যিক, অনুবাদক, রসায়নবিদ ও অভিধান- প্রণেতা রাজশেখর বসু ‘পরশুরাম’ ছদ্মনামে লিখেছেন ব্যঙ্গকৌতুক ও বিদ্রূপাত্মক অসংখ্য গল্প। ৯ খানা সংকলনে তা গ্রন্থভুক্ত হয়েছে। এই ৯ খানা গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে ৯৭টি গল্প। মৃত্যুর পর উদ্ধার করা হয় আরও তিনটি। পুরোপুরি একশ গল্পের ডালি পরশুরামের।
৯টি সংকলনের কালানুক্রমে— গড্ডলিকা, কজ্জলী, হনুমানের স্বপ্ন, গল্পকল্প, ধুস্তুরীমায়া, কৃষ্ণকলি, নীলতারা, আনন্দীবাই, চমৎকুমারী (তৃতীয় এবং শেষের পাঁচটির নামের সঙ্গে ‘ইত্যাদি গল্প’ লেজুড় আছে)।
১৯২০-এর দশকে রাজশেখর সাহিত্যিক কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯২২ সালে ‘পরশুরাম’ ছদ্মনামে তিনি একটি মাসিক পত্রিকায় ‘শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড’ নামে ব্যঙ্গ রচনা প্রকাশ করেন। সেখানে অনেকগুলো রসরচনামূলক গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়— যা তাকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
গল্পরচনা ছাড়াও স্বনামে প্রকাশিত কালিদাসের মেঘদূত, বাল্মীকি রামায়ণ (সারানুবাদ), কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসকৃত মহাভারত (সারানুবাদ), শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ইত্যাদি ধ্রুপদী ভারতীয় সাহিত্যের অনুবাদগ্রন্থগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় রাজশেখর বসুর প্রবাদপ্রতিম বাংলা অভিধান গ্রন্থ ‘চলন্তিকা’।
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যকর্মে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত বানান-সংস্কার সমিতি ও ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিভাষা সংসদের সভাপতিত্বও করেন রাজশেখর।
১৯৫৭-৫৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়াও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ উপাধিতেও সম্মানিত হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জগত্তারিণী পদক ও ১৯৫৫ সালে সরোজিনী পদকেও ভূষিত হন।
প্রখ্যাত এ সাহিত্যিক ১৯৬০ সালের ২৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।
রাজশেখর বসু ১৮৮০ সালের আজকের দিনে (১৬ মার্চ) বর্ধমান জেলার বামুনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment