Press "Enter" to skip to content

বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে রবীন্দ্রনাথের পর যে মানুষটি সবচেয়ে অবদান রেখেছিলেন, তিনি প্রমথ চৌধুরী। ‘বীরবল’ ছদ্মনামে তিনি বেশি পরিচিত….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ প্র ম থ চৌ ধু রী

বাবলু ভট্টাচার্য : ভাষা একটি গতিশীল মাধ্যম- এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু প্রতিটি ভাষারই একটি সুশৃঙ্খল সুন্দর রূপ প্রয়োজন। বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে রবীন্দ্রনাথের পর যে মানুষটি সবচেয়ে অবদান রেখেছিলেন, তিনি প্রমথ চৌধুরী। ‘বীরবল’ ছদ্মনামে তিনি বেশি পরিচিত।

তিনি বাংলা সাহিত্যের গতিপথ ঘুরিয়ে দিয়েছেন তার রচনার সুনিপুণতা, অনুপম সৃষ্টিশৈলীর মাধ্যমে। প্রমথ চৌধুরীর রচনার গাম্ভীর্য, যুক্তিনিষ্ঠতা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে, আর তাই তিনি শুধু সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নন, চলিত গদ্যরীতিরও জনক।

তার পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুরে। স্থানীয় জমিদার বংশে তার জন্ম। তার পিতার নাম দুর্গাদাস চৌধুরী।

 

প্রমথ চৌধুরী কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে বিএ এবং ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাশ করেন। তার শিক্ষা জীবন ছিল অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ। ১৮৯৩ সালে তিনি ইংল্যান্ড যান এবং সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে ব্যারিস্টারি পাশ করেন।

কর্মজীবনে কিছুকাল তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যাপনা ছাড়াও সরকারের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেন। অবশ্য সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই। সুতরাং সে হিসেবে রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী-জামাতা ছিলেন প্রমথ চৌধুরী।

 

দর্শন, রাষ্ট্রনীতি, ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদি নানা বিষয়ে তিনি যেসব প্রবন্ধ লিখেছেন সেগুলোর সর্বত্রই তীক্ষ্ম মৌলিকতার চিহ্ন রয়েছে। তাকে এককথায় সৃষ্টিশীল এবং রূপবাদী আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। বাংলা ভাষার একজন আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানী ও বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক মহাম্মদ দানীউল হক প্রমথ চৌধুরীকে ‘রূপবাদী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

সাহিত্য ক্ষেত্রে প্রমথ চৌধুরীর প্রধান খ্যাতি মননশীল প্রবন্ধলেখক হিসেবে। তবে তিনি উচ্চমানের গল্প ও কবিতাও রচনা করেছেন। বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধ রচনা করেন। বুদ্ধিদীপ্ত তির্যকভঙ্গি তার গদ্য-পদ্য সব রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। শাণিত যুক্তি ও আলঙ্কারিক ভাষা প্রয়োগেও তিনি দক্ষ ছিলেন।

 

তিনি ইংরেজি ও ফরাসি সাহিত্যে সুপন্ডিত ছিলেন। ফরাসি সনেটরীতি ট্রিয়লেট, তের্জারিমা ইত্যাদি বিদেশি কাব্যবন্ধ বাংলা কাব্যে তিনিই প্রবর্তন করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : তেল-নুন-লাকড়ি, সনেট পঞ্চাশৎ, চার-ইয়ারি কথা, বীরবলের হালখাতা, The Story of Bengali Literature, পদচারণ, রায়তের কথা, নীললোহিত ও আত্মকথা।

প্রমথ চৌধুরীর মতে, সাহিত্যের উপাদান হচ্ছে মানবজীবন ও প্রকৃতি। মানব জীবনের সাথে যার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ নেই তা সাহিত্য নয়। তবে সাহিত্য মানব জীবনের বস্তুগত রূপ নয়, আবার প্রকৃতির হুবহু অনুকরণও নয়। মানবজীবন ও প্রকৃতি থেকে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে উপযুক্ত উপাদান নির্বাচন করে শিল্পী মনের রূপ-রস, সুখ-দুখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা মিলিয়েই সৃষ্টি হয় প্রকৃত সাহিত্য।

১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।

১৯৪৬ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনে তাঁর মৃত্যু হয়।

প্রমথ চৌধুরী ১৮৬৮ সালের আজকের দিনে (৭ আগস্ট) যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.