বিশেষ প্রতিনিধি : বদ্রীনাথ : ২৫ অক্টোবর, ২০২৪। বদ্রীনারায়ণের চরণ ছুঁয়ে কল্পেশ্বরের আশীষ নিতে নতুন এক ট্রেক পথে এসে পৌঁছলেন কলকাতার দ্য ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশনের ৫ সদস্যের দল। দলের নেতৃত্ব দেন বহড়ু হাইস্কুলের শিক্ষিকা সায়ন্তনী মহাপাত্র, অন্যান্যরা হলেন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এম. নবী তরফদার ও শ্রেয়দীপ প্রধান, বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের অধ্যাপক ডা. সৌমিত্র কয়াল, আন্দুলিয়া এস. এস. হাইস্কুলের ( এইচ এস ) শিক্ষক প্রসেনজিৎ সিনহা ।
অক্টোবরের ৬ তারিখ যে পদচারনা শুরু হয়েছিল তা শেষ হয় ২০ শে অক্টোবর । পথে ডুমকল খড়ক ( ৩৮৭৪ মি. ), নীলকন্ঠ খাল লোয়ার বেস ক্যাম্প ( ৪২১৮ মি. ), নীলকন্ঠ খাল অতিক্রম করে ছেদ্দার ( ৪০৬৯ মি. ), কানজিলা খড়ক ( ৩৩৬৯ মি. ), খিরাও গঙ্গা পার করে বারমাই ( ৪০৬৯ মি. ), মাটপাটা ( ৩৮৬৮ মি. ), মাটপাটা সেম (৪৩১৯ মি. ), বুরস খাল অতিক্রম করে পুনা বাঁক ( ৪৮৮৭ মি. ), পানারসা খাল, পানারসা তাল ( ৪৩৮৬ মি. ), ফুলানা রিজ ( ৪৩৮০ মি. ), লোরি টপ ( ৪২২০ মি. ) অতিক্রম করে ভেদুয়া খড়ক ( ৩৯৮৬ মি. ) হয়ে ফুল্লা নারায়ণ ( ২৯৫০ মি. ) এবং কল্পেশ্বর ( ২০৯৩ মি. ) অঞ্চলে ক্যাম্প করতে হয়।
পানপাতিয়া কল এক্সপিডিশনের কারণে নীলকন্ঠ খাল, খিরাও গঙ্গা, খিরাও ভ্যালী ট্রেকার্সদের মধ্যে বেশ পরিচিতি পেলেও, খিরাও গঙ্গার ডান অববাহিকার লুকমারা, বার্মেই, মাটপাটা অঞ্চল খুবই কম পরিচিত। মেষপালকরাও অমন চড়াইয়ের কারণে এ অঞ্চলে নিজেদের ভেড়া নিয়ে আসতে বিশেষ পছন্দ করেনা। কীড়া জড়ি সংগ্রাহকদের দেখা পাওয়াও বেশ দুষ্কর। তবে ভালুকের দর্শন পাওয়া উপদ্রবেরই সমান। বারমেই ও মাটপাটা ক্যাম্পসাইটে এমনই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল দলকে।
খিরাও গঙ্গা পেরোনোর পর বোল্ডার – হাম্পের ওপর শ্যাওলা ও পাতা পড়ে পিচ্ছিল পথে যেমন তাদের চলতে হয়েছিল। রক ক্লাইম্ব করে পার হতে হয়েছিল তামাচুনি অঞ্চলের দেওয়াল, যেখানে রোদ পড়লে তামার মত রঙ নেয় পাথর ( ৩০° ৬৭.১৫ উঃ ৭৯°৪৪. ৮৮ পূঃ ) । এ অঞ্চলেরই উত্তর – পূর্বে রয়েছে নীলকন্ঠ পর্বত উনিয়ানী খাম । আবার নীলকন্ঠ খাল অতিক্রম করার সময় ঋষি গঙ্গার স্নাউটকে বামদিকে রেখে ৭০° থেকে ৮০° বোল্ডার জোনকে অতিক্রম করতে হয়েছিল। ঠিক তেমনি পাস থেকে নামার সময় খাড়া উতরাই কাঁটা – ঝোপ সামলে নিতে বেশ কসরত করতে হয়েছিল এই দলকে।
মাটপাটা সেমের পথে দেখা মেলে মানা মুকুটের (উত্তর – পুর্বে ) এবং মাটপাটা সেম থেকে দ – পূর্বে একাধিক রিজ – হাম্প, বোল্ডার জোন শেষ করে শুরু হয় আইসফিল্ড। যেখানে গ্লেশিয়াল টেবিল, লুকানো ও উন্মুক্ত ক্রীভার্স পার করে প্রায় কুড়ি মিটার রোপ ফিক্সড করে দল পার করে বুরস খাল ( পাস ) এবং তুষারপাত মাথায় নিয়ে খাড়া উৎরাই বোল্ডার পথে পৌঁছায় পুনা বাঁকের ছোট্ট একটা রিজ ক্যাম্প সাইটে। এখান থেকে পূর্বে নন্দাদেবী, নিচে যোশীমঠ শহর চোখে পড়ে। পানারসা খাল ( পাস ) অতিক্রম করতে গিয়ে তাদের প্রায় ৭৫° থেকে ৮০° বরফ – পাথর মিশ্রিত দেওয়াল ও রক ফল জোন পার হতে হয়। এরকম পথের বন্ধুরতার সাথে পাল্লা দিয়ে রয়েছে ব্রহ্মকমল, ফেণ কমল, নীলকমল কাঞ্জিলার আধিক্য । বুরস খাল ( পাস ) পার করলে দেখা পাওয়া যায় নন্দা দেবী, নন্দাঘুন্টি, হাতি – ঘোড়া পর্বত।
আর এসবের মধ্যে মনে উদ্বিগ্নতা বাড়ায় বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব, একাধিক গ্লেসিয়ার পর্যন্ত শুকিয়ে ঘাস জমি হয়ে গিয়েছে। চারপাশে বড় বড় বোল্ডারের স্তূপ। এতদসত্ত্বেও, অলকানন্দার পূর্বের কুন্ঠখাল যেমন স্বীকৃত এক বিকল্প পথ তেমনি নদীর পশ্চিমের এ পথটিকেও আপদকালীন পরিস্থিতিতে বিকল্প রূপে ব্যবহার করা যেতে পারে ।
সর্বোপরি, দ্য ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্রেশন এর এই দলই প্রথম ট্রেকিং দল যারা সম্পূর্ণ পথটি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সুষ্ঠুভাবে অতিক্রম করে আর এ কাজে যারা প্রতি মুহূর্ত দলের সাথে থেকে সর্বতোভাবে তাদের সাহায্য করেন তারা হলেন হিম্মত সিং নেগী, রঘুবীর সিং, জগৎ সিং নেগী, বিরেন্দর সিং, গিরিশ, রাজু, সাত্তা এবং দত্তা’দের মতো সাহসী পাহাড়ি বন্ধুরা। আশা করা যায় এমন কাজ আগামী দিনের পর্বত অনুসন্ধানীদের আরো উৎসাহ প্রদান করবে।।
Be First to Comment