Press "Enter" to skip to content

ফকির আলমগীরের গণমানুষের শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল যে গানের চরিত্রের, তার নাম ‘সখিনা’….।

Spread the love

স্মরণঃ ফ কি র আ ল ম গী র

বাবলু ভট্টাচার্য : মানব মুক্তির গান মানেই তাঁর কাছে ছিল গণসংগীত। ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ‘৯০- এর স্বৈরাচার বিরোধী গণ-আন্দোলনে তিনি সামিল হয়েছিলেন তাঁর গান দিয়ে।

তিনি গণ-মানুষের শিল্পী ফকির আলমগীর।

১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরে তাঁর জন্ম। কালামৃধা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফকির আলমগীর জড়িয়ে যান বাম ধারার ছাত্র রাজনীতিতে। সেই সূত্রে ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে তাঁর গান আর সংগ্রামের জগতে প্রবেশ।

ঠিক তার পরপরই এল ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সেই উত্তাল সময়। গানের শিল্পী ফকির আলমগীর তাতেও কণ্ঠ মেলালেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। তখন তার বয়স মাত্র একুশ বছর।

স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে মাতেন তরুণ শিল্পীদের একটি দল। আজম খান, ফিরোজ সাঁই আর ফেরদৌস ওয়াহিদের সঙ্গে ফকির আলমগীরও তখন পপ গানে উন্মাদনা ছড়িয়েছিলেন শ্রোতাদের মাঝে।

ফকির আলমগীরের গণমানুষের শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল যে গানের চরিত্রের, তার নাম ‘সখিনা’। ১৯৮২ সালে বিটিভিতে ঈদের আনন্দমেলায় ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইলা আমারে’ গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া পড়ে যায়। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি ফকির আলমগীর গানটির সুরও করেছিলেন।

পরে আশির দশকের শেষভাগে তিনি নিজেই লেখেন ‘চল সখিনা দুবাই যাব, দ্যাশে বড় দুঃখরে’। তাঁর কণ্ঠের সেই গানটিও বেশ আলোচনার জন্ম দেয়।

নব্বইয়ে সামরিক শাসনবিরোধী গণ-আন্দোলনে প্রতিবাদী গানে ফকির আলমগীরের সরব উপস্থিতি তাঁকে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তার নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়। তবে তার আগেই মা-কে নিয়ে লেখা তাঁর আরেকটি গান মানুষের মুখে মুখে ফিরত। ‘মায়ের একধার দুধের দাম’ গানটি সিনেমাতেও ব্যবহৃত হয়েছিল।

‘মন আমার দেহ ঘড়ি’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’, ‘ঘর করলাম না রে আমি’, ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’, ‘বনমালী তুমি’সহ তাঁর গাওয়া বহু গান আশি ও নব্বইয়ের দশকে দারুণ জনপ্রিয় ছিল।

নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন উপলক্ষে গাওয়া একটি গান ছিল ফকির আলমগীরের নিজের কাছেই প্রিয়। ১৯৯৭ সালের মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নেলসন ম্যান্ডেলা যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন, সে সময় তাকে নিয়ে লেখা সেই ‘কালো কালো মানুষের দেশে’ গানটি শুনিয়েছিলেন ফকির আলমগীর।

ফকির আলমগীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীত শিল্পী পরিষদের সভাপতি এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের সহ-সভাপতির দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন।

গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন এই শিল্পী। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তাঁর।

বাংলাদেশের গণসংগীতে অবদানের জন্য ফকির আলমগীর একুশে পদক সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

ফকির আলমগীর ২০২১ সালের আজকের দিনে (২৩ জুলাই) ৭১ বছর বয়সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.