Press "Enter" to skip to content

প্রেমেন্দ্র মিত্র ছিলেন একাধারে কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক, কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা, গীতিকার, চিত্র পরিচালক ও গোয়েন্দা কাহিনির স্রষ্ঠা…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ প্রে মে ন্দ্র মি ত্র

বাবলু ভট্টাচার্য : জ্ঞান আর গুণের সংমিশ্রণ ছিলেন তিনি। বাংলা সাহিত্যিক দুনিয়ায় অত্যন্ত পরিচিত মুখ ও খ্যাতনামা সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র।

তিনি একাধারে কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক, কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা, আবার গীতিকার, চিত্র পরিচালক ও গোয়েন্দা কাহিনির স্রষ্ঠা। এক কথায় প্রতিভার ঝুড়ি ছিল তাঁর কাছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজপুরে তাঁর আদি নিবাস ছিল। কিন্তু তাঁরা যদিও ছিলেন কোন্নগরের সম্ভ্রান্ত মিত্র বংশ। বাংলা সাহিত্যে তাঁর বিপুল অবদান রয়েছে। ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজকর্তার মতো কিছু অবিস্মরণীয় চরিত্রের দরুণ চিরকালের জন্য বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

তাঁর মার নাম সুহাসিনী দেবী, বাবা জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র ছিলেন একজন রেলকর্মী। তাঁর বেড়ে ওঠা ঠাকুরদা-ঠাকুরমার কাছে। পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন প্রতিভাবান এই সাহিত্যিক। কিন্তু অল্প দিনেই বুঝে গিয়েছিলেন এই কাজ তাঁর নয়।

পরবর্তীতে একটি ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে কাজ করতে গিয়ে লেখার প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। কিন্তু তিনি কতটা ভালো লেখক, তার আভাস হয়তো তখনও পর্যন্ত পাননি। এরপর ধীরে ধীরে সাহিত্য সাধনায় মগ্ন হন প্রেমেন্দ্র মিত্র।

১৯২৩ সালে কলকাতার গোবিন্দ লেনের একটি মেসে থাকতে শুরু করেন এবং প্রথম ১৯২৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর গল্প ‘শুধু কেরানী’। পরবর্তীতে ‘গোপনচারিনী’ গল্পটিও প্রকাশিত হয়। আর এই দুটো গল্পই তাঁকে সাহিত্য প্রাঙ্গনে এক আলাদা জায়গা করে দিয়েছে।

তবে রোম্যান্টিক বাঙালি কিন্তু আজও প্রেমেন্দ্র মিত্রকে মনে রেখেছে একজন অন্য ধারার কবি হিসেবেই। কল্লোলযুগের কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘প্রথমা’। তার পর একে একে তিনি বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। তবে আজও তাঁর ‘ফেরারী ফৌজ’, ও ‘সাগর থেকে ফেরা’ পাঠককে ছুঁয়ে যায়।

১৯২৬ সালে, মুরলীধর বসুর অনুরোধে ‘কালিকলম’ পত্রিকা’র সম্পাদনায় হাত লাগান এবং একে একে উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, সায়েন্স ফিকশন, রম্যরচনা, শিশু সাহিত্য, চিত্রনাট্য, গান, ফিল্ম নির্দেশনায় জায়গা করে নেন তিনি। ছোট গল্প দিয়ে সাহিত্যজীবন শুরু করেছিলেন।

তিনিই প্রথম বাঙালি সাহিত্যিক যিনি, নিয়মিত বিজ্ঞান- ভিত্তিক গল্প-উপন্যাস লিখেছেন।

তাঁর লেখায় ফুটে ওঠে নগরজীবনের ধোঁয়াশা, অনিবার্য ব্যর্থতা। কর্মজীবনের বৈচিত্র্যের মতো তাঁর লেখাতেও বৈচিত্র্যের নানা রং প্রতিফলিত হয়েছে। গীতিকার, সম্পাদক, চিত্র পরিচালক সবেতেই খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি।

তাঁর সৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্র হল ঘনাদা। আজও গল্পবাগীশ সর্বজ্ঞানী মেসবাড়ির ঘনশ্যাম দাস সকলের কাছে বেশ প্রিয়।

বেশ কয়েকটি ছবিও পরিচালনা করেছিলেন তিনি। যার মধ্যে- ‘হানাবাড়ী’, ‘কুয়াশা’, ‘চুপি চুপি আসে’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অন্যদিকে তাঁর কবিতার গ্রন্থ ‘প্রথমা’ আজও সকলের কাছে প্রিয়।

তিনি অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, তার কিছু উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হল– শরৎ স্মৃতি পুরস্কার, সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কা, শিশু সাহিত্য পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, নেহেরু পুরস্কার, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান ডি. লিট। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান জগত্তারিনী সোনার পদক। ১৯৮৪ সালে পান বিদ্যাসাগর পুরস্কার। ১৯৮৮ সালে বিশ্বভারতী থেকে পান দেশিকোত্তম পুরস্কার। তিনি এত পুরস্কারের পাশাপাশি পদ্মশ্রী ও মৌচাক পুরস্কারেও ভূষিত হন।

১৯৮৮ সালের ৩ মে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যু বরণ করেন।

প্রেমেন্দ্র মিত্র ১৯০৪ সালের আজকের দিনে (৪ সেপ্টেম্বর) উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.