Press "Enter" to skip to content

” প্রদীপের সঙ্গে আলাপ প্রলাপ”
(পর্ব-০০১)

Spread the love

ডঃ পি সি সরকার (জুনিয়র) বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী ও বিশিষ্ট লেখক। কলকাতা, ২৮, নভেম্বর, ২০২০।
বাবা বলতেন, “ম্যাজিক কখনো কাউকে শিখিয়ে দেওয়া যায় না। শিখে নিতে হয়।” প্রথম প্রথম কথাটার মানেই বুঝতে পারিনি। ভাবতাম সে আবার কী? কতো ম্যাজিক এদিক ওদিকে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে, পয়সা খরচ করে সেগুলো কিনে নিলেই তো হলো। শুধু তাই নয়, সেটা ব্যবহার করাবার জন্য আবার ইন্স্ট্রাকটরও পাওয়া যায়। ব্যাস্, তাকে পেয়ে গেলেই তো ফটাফ্ফট হয়ে যাবো ম্যাজিশিয়ান ! তারপর আবার ভাবতাম,ওই ইন্স্ট্রাকটর মশাই নিজে কেন দেখান না। কেন তাঁর নাম-ডাক নেই? কেন অন্যেকে ইন্স্ট্র্রাকশন দিয়েই জীবিকা চালাচ্ছেন? তখন বুঝতে পারি, কৌশলটা শেখা ছাড়াও আরও অনেক ব্যাপার আছে। সেগুলোই আসল। সেগুলো ওদের নেই । কিনতে পাওয়া যায় না। যদি সেই প্রতিভাটা কারুর থাকে , তাহলে অন্তর থেকেই তার প্রকাশ পাবে। বাবাকে আবার প্রশ্ন করি, ব্যাপারটা কি? বাবা হেসে বলেন, “চেতনা। জাদু-চেতনা না থাকলে কিচ্ছু হবে না। বয়স হোক, বুঝবে”।

অনেক পরে, অনেক হোঁচট খেয়ে বুঝি, ম্যাজিক হচ্ছে একটা অনুভূতির ব্যাপার, এর সৃষ্টি হয় দর্শক, শ্রোতা বা পাঠকদের মনের ভেতর। এটা দেখে, শুনে, পড়ে, ভেবে , মানে – চিন্তা করে , কল্পলোকের রাজ্যেই এর সৃষ্টি । বাস্তবে নয়। সেটাকে দৃষ্টিগ্রাহ্য করে যুক্তির সীমানার বাইরে এক প্রমানিত সত্য, এক অবিজ্ঞান সম্মত আর্ট হিসেব, বিজ্ঞান দিয়েই একে প্রতিষ্ঠা করাতে হয়। সেটা খুব কঠিন ব্যাপার!

কথাগুলো খুব ভারী। বুঝতে সময় লাগে। সেজন্য বেশি চালাকেরা এটাকে ওজন কমাতে ‘সিলেবাসের বাইরে’ করে রেখে দিয়েছেন। ঐন্দ্রজাল বিদ্যাকে যেন 420 ধারার ব্র্যাকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে, ‘যাদু’কে ‘জাদু’র সঙ্গে তালগোল পাকিয়ে লোক ঠকাবার জিনিস বলে অপবাদে ঢেকে রেখে দিয়েছে। ইন্দ্রজাল বিদ্যা উঁচু-শ্রেণীর আর্ট হয়েও তাঁদের যে বিচার-বুদ্ধি কে চ্যালেঞ্জ করছে ভেবে, সেই কারনে স্বল্প- বুদ্ধির দর্শকেরা একে তাচ্ছিল্য প্রকাশ করতে এড়িয়ে চলেন।

এদিকে একেবারে সত্যিকারের অসত্য আর্ট বলে যদি কিছু থেকে থাকে তো, সেটা হচ্ছে নাটক, সিনেমা এবং ছবি আঁকা। নাটকের চরিত্ররা সব নকল। স্টেজে কেউ সত্যিসত্যি হাসছেন না, কাঁদছেন না, কোনো মৃত্যুও সত্যি নয়। সব মিথ্যে। যে যতটা খাঁটি মিথ্যেকে সত্যির মতো দেখাতে পারবে, সে তত বড় আর্টিস্ট। বাঃ । কিন্তু ম্যাজিকের ক্ষেত্রে তা চলবে না। আব্বুলিশ্।” ওরা
আরও বেশী সত্যি করে দেখায়। আড়ি। খেলবো না। আমরা ওগুলো পারি না। আমরা মুখ সর্বস্ব আর্টিস্ট। কাজে দেখাতে পারি না। কিন্তু
আমরা দলে ভারী, বেশি। তোমরা কম। সুতরাং এলেবেলে। “চান্স পেয়েছি, বলে নিচ্ছি। আমাদের হয়ে বলার তো কেউ নেই। কাগজে লেখারও কেউ নেই। তাই মুখ গুঁজে এই আপন-জন-অরণ্যেই রোদন করছি।

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.