∆∆∆ সম্মোহনে আমার প্রথম সাফল্য∆∆∆
ডঃ পি সি সরকার : (জুনিয়র) বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী ও বিশিষ্ট লেখক। কলকাতা, ৭, ডিসেম্বর, ২০২০। আচ্ছা, একটা ঘামে ভেজা জামা, না ধুয়ে, হাওয়ায় শুকিয়ে দিনের পর দিন, কতদিন পরা যায়? যে যাই বলুন না কেন, ঠিক জবাবটা হচ্ছে, এক দিনও নয়। ধুয়ে পরতেই হবে। কিন্তু আমরা, শিল্পীরা সেটা করি কি? নানা রকম কথা কানে আসে। থিয়েটারে নাকি, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্ ‘ ।বিশ্বাসই হতে চায়না। ওগুলো নাকি ধোয়াই হয় না। সেজন্য, কোনো কোনো শিল্পীর জামায় এত দুর্গন্ধ যে হলে লোকে নাকে-মুখে মাস্ক চাপিয়েও আসতে চান না। এই কারণেই নাকি অনেক নাটকে লোক হয় না। শোনা কথা। দুর্মুখের তো আর অভাব নেই। আমাদের ইন্দ্রজাল সম্প্রদায়ে কিন্তু জামা-কাপড় ধোয়া 'ইজ এ মাস্ট'। এটা জয়শ্রীর তৈরি করা আইন। ব্রোকেড, জরী, শিফন, সূতী, সিল্ক ,যা দিয়েই তৈরি হোক না কেন, যতো মূল্যবানই হোক, ধুতেই হবে তারপর প্রয়োজনে হলে আগে এসে ফ্যানের হাওয়ায় অথবা ইস্ত্রি দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। এ নিয়ে অনেক হলের কর্তৃপক্ষের অভিযোগও আছে। আমরা নাকি ফ্যানের হাওয়ায় শুকোতে দিয়ে ইলেকট্রিক বেশি খরচ করাই। আমরা পাজী। জয়শ্রী বলে,"বিল মিটিয়ে দেব, দিয়েই তো থাকি, কিন্তু শো-এর ইজ্জত এবং পরিচ্ছন্নতার মান কমাবো না।" তাঁদের বক্তব্য,"কোই, অন্য কোনো দল তো এমন করে না। "জয়শ্রী বুঝিয়ে বলে,"তাঁদের তো প্রত্যহ শো থাকে না। শো করেন, চলে যান। কিন্তু আমাদেরতো এই একই স্টেজে দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ শো চালাতে হয়। জামা নিয়ে লোক দিয়ে ধোয়াতে হয়, না শুকোলে এখানে এনে শুকোতে হয়। আমরা তো বিল মিটিয়েই দিচ্ছি, অসুবিধেটা কোথায়?"

হল কর্তৃপক্ষ এরপর নিজেদের আইন পাল্টে নতুন আইন করেছেন, শো-এর পর থেকে পরদিন শো এর একটু আগে পর্যন্ত ইলেকট্রিক সাপ্লাই বন্ধ থাকবে। শুধু একটা বিশেষ দলের নাটকের খানা-পিনা এবং রিহার্সেলের ক্ষেত্রে আব্বুলিশ। সেজন্য স্টেজের পেছনে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। আড়ালে। ভালো কথা। আমরা ওই হল ব্যবহার করাই বন্ধ করে দিয়েছি। অন্য প্রদেশে গিয়ে জমিয়ে শো করতে বাধ্য হয়েছি। এতে বঙ্গের গর্বের আর্ট এবং কালচারের কি অবস্থা হলো তা-তো আপনারা জানেনই। "বঙ্গালকা জাদু আভি বঙ্গাল সে নিকল্ গ্যায়া"। ওই হলে আর কোনো বড় মাপের কমার্শিয়াল শো হতে পারবে না। টিকিট কাউন্টার ভেঙ্গে বিল্ডিঙেরই বাইরে বের করে দিয়েছে। ওটা ওদের কাজে-টাজে লাগে না। কাজে লাগালে, বৃষ্টি হলে, জল জমলে পাবলিক ভিজবে। তাতে ওদের ভারী বয়েই গেছে। কি বলতে গিয়ে কি বলছি !!! অবশ্য "প্রলাপে" কোনো আইন নেই। বাঙালি বিলাপেই আইনমতো জন্মেছে। বেশি হোমলি ফিল করে। নেতাজীকে বলেছিল '"কুকুর'"!!! হেঃ হেঃ । প্রলাপ। ***। ***। ***। ***। *** বাবার ব্যবহৃত ব্রোকডের সেরোয়ানীগুলো স্পেশাল লন্ড্রী থেকে ধুইয়ে আনা হতো। বেনারসী ব্রোকেড, মহামূল্যবান। পুরোন হলেও মা বাতিল করেন নি। কোনো কাজে লাগবে না, জায়গায় জায়গায় রং জ্বলে পাল্টে গেছে। তবুও প্রাণে ধরে ফেলতে পারেন নি। ওদিকে আমি তো তখন জাদু স্বপ্নে বিভোর। একটা পোষাক পেলেই নেমে পরি আর কি। মার কাছে, প্রায় ভিক্ষা করে, একটা পুরোন বাতিল সেরোয়ানি পাই। পাড়ায় সুনীলবাবু নামে একজন দর্জি ছিলেন। পাড়ার ছেলেরা তাকে 'হরেকেষ্ট' বলে খ্যাপাতো। কেন খেপতেন জানিনা, কিন্তু খুব রেগে তাড়া করতেন। আমাকে কখনো তাড়া করেন নি। কারণ আমি কখনই ওনাকে ওই নামে থাকিনি। বলতাম 'সুনীলবাবু'। উনি প্রসন্ন থাকতেন। ওনাকে সেই পুরনো সেরোয়ানীটা দিয়ে বলি অল্টার করে আমার মাপে করে দিন। উনি হাসিমুখে করে দেন। মাত্র দুটাকা নিয়ে ছিলেন। হাতাটা লম্বায় একটু ছোট হয়েছিলো। ওই কাপড়টুকু নাকি ঘামে ক্ষয়ে নষ্ট হয়ে গেছিলো। তাপ্পি মারার উপায় নেই। তাতে কী। আমি আনন্দে লাফাচ্ছিলাম। বাবার একটা পুরোন পাগড়ী যোগাড় করলাম মা একটা ব্রোজ দিলেন, পালোকও দিলেন।ব্যাস্, পি সি সরকার জুনিয়র সাজুগুজু করে তৈরি। এখন ম্যজিক করলেই হয
়।

বাবা বিদেশে। খেপাবার জন্য দাদা এবং ভাই কেউ বাড়ি নেই। খেলতে গেছে। সোজা হাজির হলাম মার কাছে। মা কতো আদর করলেন, লজ্জা লাগছিলো। এমন সময় সুনীলবাবু হাজির। মা ওনাকে ডেকে পাঠিয়ে ছিলেন কি সব কাজ করাবেন বলে। আমি গুটি গুটি পায়ে সুনীল বাবুর কাছে যাই। উনি আমাকে দেখে ইমপ্রেস্ড! বলেন “তাইলে একটা ম্যাজিক দ্যাখাও”। আমি পোজ করি। আমার সম্মানার্থে সুনীল বাবু রসিকতা করে
ঢুলে পড়েন। মা কখন যেন রোলিফ্লেক্স ক্যামরা নিয়ে হাজির হন খেয়াল করিনি। ক্লিক্ আওয়াজে দু-জনেরই সম্বিত ফেরে।

Be First to Comment