Press "Enter" to skip to content

[প্রদীপের সঙ্গে আলাপ=প্রলাপ]
(পর্ব- ০২৯) আমি ‘হাঁ’ করে সুন্দরীর ঝাঁক দেখছিলাম। প্রত্যেকেই অপরূপা সুন্দরী। মোহময়ী। মায়াবিনী। মাথায় হঠাৎ করে জয়শ্রীর চাঁটি খাই। মোহ ভাঙ্গে……..।

Spread the love

ডঃ পি সি সরকার (জুনিয়র) বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী ও বিশিষ্ট লেখক। ২৩, জানুয়ারি, ২০২১।

আমি যেমন আসামের সংস্কৃতিকে ভীষণ ভালোবাসি, তেমনি, আমি জানি, আসামের মানুষজনও আমাদের, মানে এই সরকার পরিবারের সবাইকে খুব ভালোবাসেন। বললে অবাক হবেন, কিন্তু, যদি আমার কথা বিশ্বাস করেন, তাহলে বলি, সময় বা উপায় পেলেই আমি বিলেত আমেরিকা বাদ দিয়ে আমাদের দেশের এই সরলমনা, উৎসবপ্রেমী, লাজুক কিন্তু মিশুকে, স্বাভিমানী নানারকম জাতি-উপজাতিতে মতিহারের মতো গ্রথিত রাজ্য, খাদ্যরসিক- আসামে যেতে রাজী আছি। পাশ্চাত্যের ওই 'তুমি-টুকু আমি-টুকু'র আত্মকেন্দ্রিক চাল-চলন এবং অন্তর বিহীন রেকর্ডেড শুভেচ্ছাময় 'ভদ্রতা' আমায় প্ল্যাস্টিকের ফুল শোঁকার মতো ভাবাচ্ছে। আমার হিসেবে, কষে খাটবো...., বিনিময়ে খাঁটী জীবনটাই চাই। ধামা-ভরা, ঝাঁ-চকচকে ভ্যাজাল 'সভ্য' জিনিষ মোটেই ভালো লাগ না। আসামে শান্তি আছে, নিরিবিলি আছে। পাগলা কুকুরের ধাওয়া খাওয়া বা চলন্ত আধুনিক, ট্রেন ধরতে ছুটে যাওয়ার দেশ নয়, বরঞ্চ উল্টোটা। ওটা হচ্ছে বহুদিন পর বাড়ি ফিরে, আপনজনদের দিকে দু-হাত বিছিয়ে, ঝাঁপিয়ে পড়ে, গল্প সেরে নিশ্চিন্তে পান-সুপুড়ি চিবুতে চিবুতে বেতের মোড়ায় বসে, জিরিয়ে নেওয়ার জায়গা। অমন জায়গায় পৌঁছুতে কপাল লাগে। খাটা-খাটুনী তো জীবন ভরে আছেই। থাকবেও। কিন্তু এরকম "ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও"-এর আহ্বানে আর কে এমন প্রেম নিবেদন করতে পারে?

এমনি দেশ আসাম।
আসাম হচ্ছে যাদুর দেশ। জাদু নয়, যাদু। অনেকেই এর তফাৎটা জানেন না। ‘জাদু’ হচ্ছে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে অ-বিজ্ঞানের অভিনয় দিয়ে মনোরঞ্জন করা । কিন্তু ‘যাদু’ হচ্ছে একদম অন্য জিনিষ। এর সঙ্গে বিজ্ঞান, অভিনয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা ইচ্ছা, আবেগ, সাফল্যের সমন্বয়ের চূড়ান্ত রূপ। বিজ্ঞানমুক্ত, শিল্প সৃষ্টির
শেষ কথারও ওপর অবস্থিত, যেন ঈশ্বরেরও আইনের আওতার বাইরে। অন্য রকম বিজ্ঞান।
আসাম হচ্ছে সেই ‘যাদু’র দেশ। পুরোনো আমল থেকেই সবার বিশ্বাস, আসামের মায়ং অঞ্চল, মানে সোজা হিসেবে নওগাঁ ডিস্ট্রিক্টের পাহাড়ী অঞ্চলের মেয়েরা 'যাদু' জানে। কোনো বিদেশী পুরুষ, তা সে বিবাহিতই হোক বা অবিবাহিত হোক, একবার ওদের মেয়েদের দিকে তাকালে কেমন যেন 'ভ্যাড়া' হয়ে যায়। তার পেছন পেছনই ঘোরে। বাড়িতে ফেরে না। পুরোন কথা সব ভুলে যায়।

আর এক জায়গায় শুনলাম, না, ‘ভ্যাড়া’ নয়, প্রজাপতি হয়ে যায়। ওই একই হলো। এ ফুলের পর ও ফুলে বসে উড়ে উড়ে জীবন কাটিয়ে দেয়।
আমি এই কথাগুলো বিশ্বাস করি। অমনটা ঘটে। আমি যখন প্রথম নওগাঁ যাই, গাড়ি করে হোটেল থেকে হলে যাচ্ছি। ঠিক তখনই কাছের একটা মেয়েদের স্কুল নাকি কলেজের ছুটি হয়েছিলো। আমি ‘হাঁ’ করে সুন্দরীর ঝাঁক দেখছিলাম। প্রত্যেকেই অপরূপা সুন্দরী। মোহময়ী। মায়াবিনী। মাথায় হঠাৎ করে জয়শ্রীর চাঁটি খাই। মোহ ভাঙ্গে। নইলে দরজা খুলে প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাচ্ছিলাম আর কি।
-“হাঁ করে কি দেখছো?”

  • মানে , ইয়ে,…মেয়েগুলো কি মানে…সহজ, সরল তাই না ?”

জবাব দিয়ে ছিলো তিন দিন পর।

তিন,… তিনটে দিন ‘চিনি না, চিনি না’ খেলার পর… আমার অ-নে-ক দেবী স্তোত্র, স্তুতি-পাঠ, কৃচ্ছ-সাধনের পর, হঠাৎ উনি শব্দভেদী বান ছুঁড়ে বলেন,- “তাতে তোমার কি? এই জন্যই সব সময় ‘আসাম যাবো, আসাম যাবো’ করো, তাই না ? তোমাকে আমি একা ছাড়বো না। আমিও আসবো। তেজপুরের ছেলেরা ভালো, খুব তেজী। তোমার মতো অমন হাভাতে, নির্লজ্জ হ্যাংলা নয়। চলো, এরপর আমরা তেজপুরে শো দেখাতে যাবো। ব্যবস্থা করো”।

বোবার শত্রু নেই।
সেটাই আসামে আমার শেষ যাওয়া।
কোভিডের পালা কাটুক, যাবো। । আগে তেজপুরে যাবো, তারপর নওগাঁ।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *