Press "Enter" to skip to content

পৃথিবীর সর্বকালের স্মরণীয় ঔপন্যাসিকদের মধ্যে অন্যতম একজন, তিনি ফিওদর দস্তয়ভস্কি……।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ ফিওদর মিখাইলোভিচ দস্তয়ভস্কি

“মানুষ একটা রহস্য। এর জট খোলা জরুরি। তুমি যদি তোমার পুরোটা জীবন এই জট খোলার পেছনে খরচ করে ফেলো, তবে এ কথা বলো না যে তুমি সময় নষ্ট করেছো। আমি সে রহস্য পাঠ করছি, কারণ আমি একজন মানুষ হতে চাই।”

——— ফিওদর দস্তয়ভস্কি

বাবলু ভট্টাচার্য : পৃথিবীর সর্বকালের স্মরণীয় ঔপন্যাসিকদের মধ্যে অন্যতম একজন, তিনি ফিওদর দস্তয়ভস্কি।

‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’, ‘দ্য ব্রাদার্স কারামাযোভ’, ‘দ্য ইডিয়ট’, ‘দ্য গ্যাম্বলার’, ‘দ্য অ্যাডোলসেন্ট’ ‘হিউমিলিয়েটেড অ্যান্ড ইনসাল্টেড’ এর মতো সুবিখ্যাত, সুচিন্তিত ও কালজয়ী সব রচনার লেখক এই দস্তয়ভস্কি।

সাহিত্যে আধুনিকতাবাদ, অস্তিত্ববাদ, মনস্তত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি দর্শনে দস্তয়ভস্কির তাবৎ অবদান রয়েছে। সাহিত্যের এই উপাদানগুলো তার চিন্তাধারা দ্বারা হয়েছে আরও সমৃদ্ধ।

মানুষ নিয়ে আদতেই তিনি আজীবন চর্চা করেছেন। নানাভাবে, নানা দিক দিয়ে তিনি মানুষকে পাঠ করেছেন। তাই তার লেখায় কখনো ফুটে উঠেছে মানুষের কুটিলতম, তমসাচ্ছন্ন দিক; কখনো আবার ঝলমলে প্রশংসা। তাই মানুষকে নিয়ে তার দৃঢ় আশাবাদই ব্যক্ত হয়েছে তার রচনাগুলোতে।

বাবা মিখাইল দস্তয়ভস্কি ছিলেন সেনাবাহিনীর ডাক্তার। মেরিন্সকি হাসপাতালের কোয়ার্টারের ভেতরে তারা সপরিবারে বাস করতেন। তার বাবা ছিলেন রুক্ষ, কড়া মেজাজের মানুষ; মিলিটারি নিয়মানুবর্তিতার কঠোরতার ছাপ পরিবারের উপরও ফেলেছিলেন। ফলে পরিবারের সকলেরই প্রাণ অতিষ্ঠ ছিল বলা যায়। মা মারিয়া দস্তয়ভস্কায়া ছিলেন দরদী মহিলা। স্বামীর কঠোর শাসন থেকে তিনি সন্তানদের রক্ষা করে চলতেন।

খুব কম বয়সেই সাহিত্যের সাথে ফিওদরের পরিচয় ঘটে। তার দাইমা অ্যালেনা ফ্রোলোভনার কাছে মুখে বীরত্বব্যাঞ্জক কাহিনি, রূপকথা ও কিংবদন্তী শুনতে শুনতে তার বেড়ে ওঠা। ফিকশনের প্রতি অনুরাগটা বোধহয় তখন থেকেই। একে একে পরিচয় হয় পুশকিন, কারামযিন, অ্যান র‍্যাডক্লিফ, শিলার, গ্যাটে, ওয়াল্টার স্কট, হোমারের সাথে।

১৮৩৭ সালে ফিওদরের বাবা তাকে ও তার ভাই মিখাইলকে সেইন্ট পিটার্সবার্গের নিকোলাই মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে পাঠিয়ে দেন। বিজ্ঞান, গণিত ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ফিওদরের কোনোকালেই আকর্ষণ ছিল না। এর চেয়ে বরং চিত্রাঙ্কন ও স্থাপত্যকলা তাকে বেশি টানতো। কাজেই মিলিটারি ইন্সটিটিউটে তিনি হয়ে পড়েছিলেন সম্পূর্ণ বহিরাগত একজন। তবে তার চরিত্রের একটা বড় অংশ এখান থেকেই তৈরি হয়। সাহসিকতা, ন্যায়পরায়ণতা, দুর্নীতির সমালোচনা, দুর্বলের রক্ষা প্রভৃতি গুণ তার মধ্যে ফুটে ওঠে। সহপাঠীদের কাছে তিনি ছিলেন শ্রদ্ধেয়।

১৮৩৭ সালেই ফিওদরের মা যক্ষারোগে মারা গিয়েছিলেন। এরপর ১৮৩৯ সালে তার বাবাও মারা যান। পড়াশোনা শেষ করার পর ১৮৪৩ সালে ফিওদর লেফটেন্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি নেন। এই বছরই তার করা ইউজিন গ্রান্ডে’র ‘অনার ডি বালজাক’ এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়। এটিই তার প্রথম সম্পূর্ণ সাহিত্যকর্ম।

১৮৪৫ সালে ফিওদর তার প্রথম উপন্যাস ‘পুওর ফোক’ লেখার কাজ শেষ করেন। প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক ভিসারিয়ন বেলিন্সকি একে রাশিয়ার প্রথম ‘সামাজিক উপন্যাস’ বলে আখ্যায়িত করেন।

সাহিত্যকর্মে পূর্ণ আত্মনিয়োগের জন্য ফিওদর মিলিটারির চাকরি ছেড়ে দেন। অভাব অনটন যখন নিত্যসঙ্গী, তখন তিনি কল্পিত সমাজতন্ত্রবাদ বা ‘ইউটোপিয়ান সোশ্যালিজম’ এর অনুসারী হয়ে পড়েন। জড়িয়ে পড়েন পেত্রাশেভস্কি সার্কল নামে একটি সমাজ সংস্কারমূলক চক্রের সাথে। এসব রাজনৈতিক বিপ্লবীদের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই তৎকালীন জার খুবই কঠোরহস্ত ছিলেন। অচিরেই নিজের চক্রের লোকজনে সাথে ফিওদর ধরা পড়েন।

মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবার পর ১৮৪৯ সালে ২৩ ডিসেম্বর সকালে ২২ জনের দলটিকে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করানো হয়। কিন্তু গুলি চালানোর ঠিক আগমুহূর্তে খবর আসে যে জার তাদের মৃত্যুদন্ড মওকুফ করে সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত করার হুকুম দিয়েছেন। সাইবেরিয়া ছিল নির্বাসিত অপরাধীদের অভয়ারণ্য। এখানে চার বছর হাড়ভাঙা খাটুনির পরে ১৮৫৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্ত হন ফিওদর দস্তয়ভস্কি।

দস্তয়ভস্কি যে যুগে জন্মেছিলেন, তা ছিল মূলত নবজাত বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থার উন্মেষের যুগ, রাশিয়ার কৃষি অর্থনীতি নির্ভর রাষ্ট্রব্যবস্থার বিলুপ্তির যুগ। সামন্ততন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য তখনও অনেক নিষ্ফল প্রয়াস চলছে। দেশের বুদ্ধিজীবীগণ স্বৈরতন্ত্রের অবসান ও ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদের জন্য গড়ে তুলছিল বিভিন্ন গুপ্ত চক্র। এমনই এক চক্রে জড়িয়েছিলেন দস্তয়ভস্কি নিজেও। দস্তয়ভস্কির কোনো সুস্পষ্ট রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ছিল না। মানুষের জীবন-
যাত্রার দুর্দশা কী করে কাটবে সেটাই ছিল তার আলোচ্য।

দস্তয়ভস্কির রচনার মূল বৈশিষ্ট্য হলো মনোবিশ্লেষণ। একই সাথে তার ছিল মানুষের মনের গহীনতম অংশের মনস্তাত্ত্বিক ভেদন ক্ষমতা এবং অনতিক্রম্য দার্শনিক অনুজ্ঞান। এই দু’য়ের সম্মিলনেই তিনি তৈরি করেছেন তার রচনার মূল চরিত্রদের, বুনেছেন একের পর এক কালজয়ী সাহিত্য বুনন।

১৮৭৯ সালে ফুসফুসের এমফাইসেমা রোগে আক্রান্ত হন দস্তয়ভস্কি। এই রোগ জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাকে ভোগায়। ১৮৮১ সালে ২৬ জানুয়ারি তার পালমোনারি হেমারেজ হয়। একই দিনে পরপর তিনটি হেমারেজের পর ইহধাম ত্যাগ করেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই সাহিত্যিক।

ফিওদর মিখাইলোভিচ দস্তয়ভস্কি ১৮২১ সালের আজকের দিনে (১১ নভেম্বর) রাশিয়ার মস্কোতে জন্মগ্রহণ করেন।

More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.