দেবাশীষ বিশ্বাস : প্রখ্যাত পর্বতারোহী, আজারবাইজান থেকে সরাসরি, ১ আগস্ট, ২০২৪। আজারবাইজানের এক বন্দর শহর আলাট। বাকু থেকে কাস্পিয়ান সাগরের গা ঘেঁষে যে হাইওয়ে দক্ষিণ দিকে চলে গেছে সেই পথ ধরে প্রায় ৭০ কিলোমিটার এগিয়ে গেলে পৌঁছানো যায় আলাট।
আলাটের কাছেই কাস্পিয়ান সাগরের কাছাকাছি এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি মাড ভলকানো। আমরা এখন পৌঁছে গেছি সেই মাটির আগ্নেয়গিরির এলাকায়।
পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মাটির আগ্নেয়গিরির জন্য আজারবাইজান পরিচিত, যা সারা দেশ জুড়ে রয়েছে। বিশ্বের ৭০০টি মাটির আগ্নেয়গিরির মধ্যে ৩৫০টি আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রে অবস্থিত। স্থানীয় লোকেরা এগুলিকে “ইয়ানারদাগ” (জ্বলন্ত পর্বত), “পিলপিলা” (সিড়ি বা সোপান), “গায়নাচা” (ফুটন্ত জল) এবং “বোজদাগ” (ধূসর পর্বত) বলে ডাকে।
দুই রকমের মাটির আগ্নেয়গিরি রয়েছে আজারবাইজানে – ভূগর্ভস্থ এবং সমুদ্রের নিচের (সাবমেরিন)। কাস্পিয়ান সাগরে ১৪০টিরও বেশি সাবমেরিন আগ্নেয়গিরি রয়েছে। বাকু দ্বীপপুঞ্জের আটটি দ্বীপ মাটির আগ্নেয়গিরি থেকে তৈরি। অন্য ধরনের মাটির আগ্নেয়গিরি হলো কূপ বা কুয়ো আকৃতির। তথ্য অনুসারে, ২৫ মিলিয়ন বছর আগে আজারবাইজানের ভূখণ্ডে মাটির আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ শুরু হয়েছিল।
আমরা যেখানে এসেছি এই মাড ভলকানো গুলো দেখতে নিরীহ হলেও এই দেশের কিছু কিছু মাড ভলকানো থেকে বেশ বড়সড় ভূমিকম্প হয়েছে এবং হয়ে চলেছে।
১৮১০ সাল থেকে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের ভূখণ্ডে ৫০টি মাটির আগ্নেয়গিরিতে প্রায় ২০০টি অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে। মাটির আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত শক্তিশালী বিস্ফোরণ এবং ভূগর্ভস্থ গর্জনের সাথে সাথে ঘটে। গ্যাসগুলি পৃথিবীর গভীরতম স্তর থেকে বেরিয়ে আসে এবং সঙ্গে সঙ্গেই জ্বলে যায়। আগ্নেয়গিরির ওপরে আগুনের উচ্চতা ১০০০ মিটার (গারাসু আগ্নেয়গিরি) পর্যন্তও পৌঁছেছে। ‘তোড়াগায়’ বলে আগ্নেয়গিরি ১৮৪১ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ৬ বার অগ্ন্যুৎপাত করেছে।
রাজধানী বাকু থেকে ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত লোকবাতান। এতে ১৯ শতক থেকে ১৭টি অগ্ন্যুৎপাত শনাক্ত হয়েছে। শেষ অগ্ন্যুৎপাত ২০০১ সালে ঘটেছিল।
‘গোটুর ডাগ’ আগ্নেয়গিরিটি রাজধানী থেকে ৭০ কিমি দূরে অবস্থিত। আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ১৫০ মিটার এবং গভীরতা ২০ মিটার। এখানে শেষ অগ্ন্যুৎপাত ১৯৬৬ এবং ১৯৭০ সালে ঘটেছে।
‘বাহার’ বাকু থেকে ৫৫ কিমি দূরে অবস্থিত। উচ্চতা ৪৫ মিটার। শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে।
আয়রানতেকেন আগ্নেয়গিরিটি আজারবাইজানের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হিসাবে বিবেচিত হয়। রাজধানী থেকে ৬৫ কিমি দূরে এর অবস্থান।
‘ওটমান বোজদাগ’ হল দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির আগ্নেয়গিরি। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, এর অগ্ন্যুৎপাতে নির্গত কাদা ৪ কিমি দূর অব্দি পৌঁছে যায় এবং মাটিতে ৮০ মিটার গভীর ফাটল সৃষ্টি হয়।
মাটির আগ্নেয়গিরি তেল কুপ (Oil field) এর সাথে সম্পর্কিত। মাটির আগ্নেয়গিরির এলাকায় (লোকবাতান, গারাডাগ, নেফত দাশলারি, মিশোভদাগ এবং অন্যান্য) সমৃদ্ধ তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। এছাড়াও, মাটির আগ্নেয়গিরি দ্বারা উৎপন্ন লাভা, কাদা এবং তরল – রাসায়নিক, নির্মাণ শিল্প এবং ফার্মাকোলজিতে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
মজার তথ্য
• নাসার ভূতাত্ত্বিকরা মঙ্গল গ্রহ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে আজারবাইজানের মাটির আগ্নেয়গিরিগুলি মঙ্গলের উচ্চভূমির মতন গঠনের।
• স্নায়ুতন্ত্র (Nerve), ত্বক (Skin) এবং হাড়জনিত রোগের চিকিৎসায় আগ্নেয়গিরির মাটি এবং কাদা ব্যবহৃত হয়।
• ৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৪ তারিখে আজারবাইজানের ভূখণ্ডে সবচেয়ে বড় মাটির আগ্নেয়গিরি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে যুক্ত হয়েছে।
২০০৭ সালে, রাষ্ট্রপতির ডিক্রি দ্বারা বাকু এবং সংলগ্ন উপদ্বীপ এর মাটির আগ্নেয়গিরির এলাকাকে State Natural reserves বলে ঘোষণা করে। বর্তমানে এই এলাকায় নির্মাণ কাজ, দূষণ এবং এর ধ্বংস নিষিদ্ধ।
পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মাটির আগ্নেয়গিরির জন্য আজারবাইজান পরিচিত। বিশ্বের ৭০০টি মাটির আগ্নেয়গিরির মধ্যে ৩৫০টি আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রে অবস্থিত….।

More from InternationalMore posts in International »
- সুন্দরবনে ড্রোনের মাধ্যমে তাজা মাছ এবার পৌঁছে যাবে শহরে, উন্নয়নের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে…।
- সাফ ক্লাব কাপ খেতাব জয়ী লাল হলুদ মেয়েদের সম্বর্ধনা…..।
- বি এস ইউ প্রয়াস মক টেস্ট এর উদ্যোগে দ্বিতীয় মক টেস্ট শুরু হল….।
- মণিপাল হাসপাতাল ঢাকুরিয়া-তে অত্যাধুনিক মাস্কিউলোস্কেলেটাল (MSK) রেডিওলজি ক্লিনিকের সূচনা….।
- সুন্দরবনের উৎপাদিত দ্রব্য বিশ্ববাজারে পৌঁছে দিতে উদ্যোগ ন্যাশানাল স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের….।
- হরিপাল মেলা উদ্বোধন হল ‘বন্দেমাতরম’ মঞ্চে…।
More from TravelMore posts in Travel »
- Country Club Announces Strategic Alliance, Expansion and Digital Revolution….
- Indo International Tourism Chamber of Commerce (IITCC) launched in Kolkata; Sets Vision to Transform India’s Tourism Industry…
- TravelQubes Organises Medical Tourism Promotion Campaign at Basirhat….
- “Royal Weddings in the Heart of Bengal: Discover Azimganj and Nashipur’s Unparalleled Heritage”….
- The Tagore Society for Rural Development Mangrove Research Centre: A Beacon of Sustainability in Sunderbans….
- IHG Hotels and Resorts announces the opening of a new property in Kolkata new town, further strengthening its portfolio….












Be First to Comment